অপরাধের স্বর্গরাজ্য- জঙ্গলের রঙঘর | রূপান্তরের গল্প ২৫৭ | Rupantorer Golpo 257 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | জীবনে ফেরার গল্প | Jibone Ferar Golpo | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ২৫৭ : হতাশ হলাম। কী ভাবলাম। আর এসে কী দেখলাম! রঙঘর বলতে যা দেখেছি তার সাথে মিল নাই। একটির পর একটি মাচা। সবগুলো খুঁটি সুন্দরী গাছ কেটে করা। আটটি মাচার উপর থরে থরে সাজানো চিংড়ি মাছ। নিচে জ্বলছে কাঠ কয়লা। এক পাশে একটি বড় মাচা করে রাখা হয়েছে শুকানো শুঁটকি। না হলেও পঞ্চাশ বস্তা হবে। ওরা বলে পেটি। প্রতিটি চটের পেটিতে গড়ে ষাট কেজি করে শুঁটকি আছে। উপরে পলিথিন দিয়ে ঢাকা। তার উপর গোলপাতার ছাউনি।
শুঁটকির মাচার পাশে ছোট্ট করে ঘেরাও দেওয়া রান্নাঘর। পাতিল ভর্তি ভাত। রাতের বৃষ্টিতে সেই ভাত প্রথমে পান্তা হয়েছে। তারপর পঁচে গেছে। পাশে রাখা তরকারির কড়াই। তরকারিও পঁচে গেছে। এর আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কয়েকটি থালা-বাসন। এর পিছনে কাঁদার উপর রাখা কয়েক মণ শুকনা কাঠ।
সবগুলো বড় বড় গাছ। সুন্দরবনের গড়ান, সুন্দরী আর গেওয়া। প্রায় এক একর জায়গার বন কেটে সাফ করা হয়েছে। তার ভিতরেই চলছে চিংড়ি মাছ শুকানোর যজ্ঞ। কাঁদায় অসংখ্য মানুষের পায়ের ছাপ। তার ভিতরে ভিতরে টাটকা বাঘের পায়ের ছাপ। ছাপ অনুসরণ করে হেঁটে একটু এগিয়ে দেখি, আমরা যেদিক থেকে এসেছি উনি ঠিক তার উল্টো দিক দিয়ে চলে গেছেন। এই বাঘটির ভয়ে পালিয়েছিলো রঙঘরের তিন কর্মচারি।
মাঝামাঝি জায়গায় তিনটি সুন্দরী গাছ। ডাল-পাতা ছেঁটে ফেলা। এগুলোর মাঝামাঝি জায়গায় কাঠ আর দড়ি দিয়ে মাচা করা। মাথার ওপর গোলপাতার ছাউনি। রঙঘরের বাসিন্দাদের থাকার জায়গা এটি। ভেবেছিলাম বড়সড় একটি ঘর থাকবে। কিন্তু লোকালয়ের রঙঘরের সাথে এর কোনো মিল নাই। গাছে করা মাচায় ওঠা-নামার জয় একটি মই আছে। সেটিও সুন্দরী গাছ কেটে করা।
দুই মিনিট হলো এসেছি। এর মধ্যে বেলায়েত সরদার আর মামুন চলে গেছে চোখের আড়ালে। রঙঘরের দুই কর্মচারি উঠেছে মাচার উপর। পাশে দাঁড়ানো সেই কিশোর। হঠাৎ করে ভয় পেয়ে গেলাম। বেলায়েত সরদারের নাম ধরে ডাকলাম। কুঁই দিলাম। কিন্তু তাদের দিক থেকে পাল্টা কোনো ইশারা এলো না। মাচায় ওঠা দুইজনকে বকা দিয়ে নিচে নামালাম। বললাম, আপনাদের জিনিষ হারিয়ে যাচ্ছে না। নিচে নামেন।
বেলায়েত সরদার আর মামুন বাঘের পায়ের ছাপ অনুরসণ করে বনের ভিতরে ঢুকে গেছে। সুন্দরবনে নামলে চারপাশ দেখে নেওয়াই নিয়ম। ওরা সেই কাজটিই করছে। কিন্তু যখন নিশ্চিত জানি যে এই অঞ্চলে বাঘ আছে তখন কারোই দলছুট হওয়া উচিৎ না। দুশ্চিন্তা হলেও ভাবছি বেলায়েত সরদাররা ঠিক কাজটিই করছেন। বাঘটি কোন দিকে গেছে সেটি জানা দরকার।
খুটির ভিতরে অপেক্ষা করছি। মিনিট দশ এভাবেই কেটে গেলো। দুশ্চিন্তায় ঘেমে গেলাম। কিশোরটি বললো, টেনশন কইরেন না। চলে আসবে। ওদের কথা শুনতে পাচ্ছি। এদিকেই আসছে। আবারও বেলায়েত সরদারের নাম ধরে ডাক দিলাম। এবার উত্তর আসলো। মিনিট খানেকের মধ্যে ওরা দুইজন হাজির হলো।
বাঘ মামা কি এদিকে আছে? সরদার বললেন, ওর বাড়িঘর এটা। এদিকে আপাতত নাই মনে হচ্ছে। কিন্তু বেশি দূরে যায়নি। এখানে মানুষ দেখেছে না? আবার ঘুরে আসতেও পারে। পায়ের ছাপ ধরে মেলা দূর গেলাম। মামা পূর্ব-দক্ষিণে গেছে। ওদিকে জোয়ারের পানি উঠে গেছে। তাই পায়ের ছাপ আর দেখা গেলো না। বললাম, এখানে বেশি সময় থাকা ঠিক হবে না।
সরদার বললেন, কেন ভাই? শখ মিটে গেলো? বললাম, শখ পূরণ হলো। জঙ্গলের রঙঘর দেখার সুযোগ কি সব সময় পাওয়া যায়? কোন গহীন জঙ্গলের ভিতরে এরা ঘরবাড়ি করেছে দেখেছেন? ফরেস্টের লোকজন খবর পেলেও সরাসরি কেউ দেখিয়ে না দিলে এই জায়গা খুঁজে পাবে?
সরদার বললেন, আসছি যখন এক কাপ চা খেয়ে যাই ভাই। বলেই রান্নাঘরের দিকে হাঁটা দিলেন। ড্রামের ভিতরে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিয়ে একটি ছোট হাঁড়িতে তুলে দিলেন। আগুন জ্বালানো হলো। লাকড়িগুলো একটু ভেজা। তবে ধরতে সময় লাগলো না। দৌড় দিয়ে মাচায় উঠে চাপাতা আর চিনি নিয়ে আসলো কিশোরটি। ওখানে কয়েকটি প্লাস্টিকের কাপ আছে। হাতে হাতে লাল চা তুলে দিলো মামুন। তারপর পকেট থেকে একটি ছোট গুঁড়া দুধের প্যাকেট বের করলো। কড়া লিকারে সেই দুধ দিয়ে আমার জন্য তৈরি হলো দুধ চা। এই জঙ্গলের ভিতরে এই সময় দুধ চা পাবো ভাবতেও পারিনি। ব্যাগের ভিতর থেকে বিস্কিট বের করা হলো। সবাই মিলে উঠে পড়লাম মাচায়।
মাচাটি এমন উচ্চতায় করা কেন? আরেকটু উপরে করলে ভালো হতো না? ওরা বললো, বেশি উপরে করলে দূর থেকে দেখা যেতে পারে। সেজন্য একটু নিচের দিকে করা। আবার নিচে ঘর করে থাকলে মামায় ধরবে। সেজন্যই মাঝামাঝি জায়গায় করা। বললাম, এই অঞ্চলে ডাকাত আসে না? ওরা বললো, ডাকাত আসলেও সমস্যা নাই। ওরা টাকা নেয় তো!
জানতে চাইলাম, কয়টা বাহিনীকে চাঁদা দেন? বললো, তিন জায়গায় টাকা দিয়ে নামা লাগে। দুইটা ডাকাত পার্টিকে দেওয়া লাগছে এক লাখ টাকা। আর ফরেস্টের দালালকে প্রতি গোনে দেওয়া লাগে পঞ্চাশ হাজার করে। এগুলো মহাজন আর মুহুরি দেখে। আমরা শুধু চাকরি করি। জানতে চাইলাম শুঁটকির বস্তাগুলো কেমন করে নেন? বললো, এ কোনো ব্যাপার না। সবাইকে তো ম্যানেজ করা আছে। ওরাই পৌঁছে দেয়। আর কথা বাড়ালাম না। আপাতত এবিষয়ে কাজ করার পরিকল্পনা নাই। সুন্দরবনের ডাকাতগুলোকে আত্মসমর্পণ করাই এই মুহুর্তে প্রধান কাজ।
চা খেয়ে আরেকটু সময় বিশ্রাম নিলাম। পায়ের কেটে যাওয়া জায়গাগুলো ধুয়ে নিলাম। এখানে জীবানু নাশক কিছু নাই। সেভাবে প্রয়োজনও পড়ে না। অনেক জায়গায় কাটলেও ছোট ছোট ক্ষত। তবে বেশি কষ্ট হচ্ছে পায়ের তালুতে। ব্যাথা হচ্ছে। পা দুটো লম্বা করে বসে পড়লাম। বেলায়েত সরদার তালুতে হাত দিয়ে বললেন, এ ভাই আপনার পা দেখি বেচক্ষণ নরম! হেঁতালের কাঁটা ঢুকে ঢুকে ভেঙ্গে গেছে। না হলেও ১৫-২০টি কাঁটা ঢুকে আছে পায়ের তালুকে। কিন্তু এখন এই কাঁটা বের করার সুযোগ নাই। যা করার ট্রলারে গিয়ে করতে হবে।
কষ্ট হবে। কিন্তু যেতেও হবে। ফিরতে ট্রলারে হবে ট্রলারে। পায়ের তালুর যন্ত্রণায় বেশ কাতর হয়ে গেছি। ফিরার সময় আবারও ওই পথেই যেতে হবে। বললাম, সবাই তৈরি হন। রওনা দিবো আমরা। কুকু পাখির ডাক শুনছেন? তার মানে ভাটা শুরু হয়েছে। ওরা গুছিয়ে নিলো। মাচা থেকে কিছু কাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিষ তুলে নিলো। গত রাতের বৃষ্টিতে কাঁথা আর বালিশ ভিজে গেছে। সেগুলোও তুলে নিলো একটি ব্যাগে।
মাচা থেকে নেমে হাঁটা দিলাম। আমরা কি আগের রাস্তা ধরেই যাবো? পাশ থেকে কিশোরটি বললো, আমরা তো এই পথে চলাফেরা করি না। যেদিক দিয়ে আসা যাওয়া করি সেই পথে চলেন। ওই দিকে এতো কাঁটা নাই। জানতে চাইলাম কোন দিকে সেই রাস্তা? বলতেই পাশ থেকে আরেকজন বকা দিয়ে বসলো ছেলেটিকে। তার মানে ওই পথ দিয়ে নিতে যেতে চাইছে না। এবার মনে পড়লো একটি কথা। আসার সময় নৌকা থেকে যে পথ ধরে এসেছি সেটা এদের হাঁটার পথ না। তারা অন্য পথে এনেছে আমাদের। বকা খেয়ে ছেলেটি চুপ করে গেলো। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। বললাম, ওই পথেই ফিরবো।
রঙঘরের দুই কর্মচারি বেশ অসহিষ্ণু আচরণ করছে। এবার বকা দিয়ে তাদের পথ দেখাতে বললাম। হাঁটা দিলাম আমরা। ওরা বললো, এই পথে নৌকা পর্যন্ত যেতে অনেক খানি ঘোরা লাগবে। বললাম, অসুবিধা নাই। এক সারিতে হাঁটা দিলাম। কিছুদূর যেতেই পঁচা গন্ধ নাগে এসে লাগলো। বেলায়েত সরদার বিষয়টি আগেই বুঝেছেন। আমার বুঝতে একটু সময় লাগলো।
সুন্দরবনের এদিকটাতে সুন্দরী গাছ বেশি। তবে সামনে কেওড়ার বন দেখা যাচ্ছে। ওদিকে মাটিতে তেমন ঝোপঝাড় নাই। হাঁটতেও সুবিধা হবে। আমরা হাঁটছি মানুষের পায়ের ছাপ ধরে। কেওড়া বনের ভিতর দিয়ে পথ চলতে চলতে মিনিট দশের মধ্যে দেখলাম হরিণ ধরার ফাঁদ। কেওড়া গাছের নিচ দিয়ে শক্ত করে খুঁটি পোঁতা। সেখানে একটু মাঝারি আকারের বন্যশুকর আটকে মরে আছে। পঁচে গেছে বলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
সরদার রেগে গেলেন। ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোরা মানুষ? শিকার করিস আবার ফাঁদ পেতেই রাখিস? জঙ্গলটাকে নষ্ট করে ফেললি তোরা! বলেই হাতের দা দিয়ে কাটতে শুরু করলেন ফাঁদের দড়িগুলো। সাথে সাথে আমরাও হাঁটছি। শেষ প্রান্তে যাওয়ার আগে দেখি একটি মৃত হরিণ! গলা থেকে বুক পর্যন্ত লটকে আছে ফাঁসের ভিতর। কিন্তু তার পরের অংশটুকু নাই।
সবাই দাঁড়িয়ে পড়লাম। সরদারের ইশারায় পিছিয়ে গেলাম। তার মানে ফাঁদে আটকানো হরিণের পিছনের অংশটুকু বাঘ নিয়ে গেছে? সরদার বললেন, এই ঘটনা বেশি আগের না ভাই। আজ কালকের ঘটনা। ফিরে আসলাম কেওড়া বনের মাঝখানে। পুরনো হাঁটা পথ ধরে এগিয়ে গেলাম। সরদার বললেন, ভয়ের কিছু নাই। বাঘের কাছে খাবার আছে। এখন আর বেশি হাঁটাহাঁটি করবে না।
পুরো পথ বেশ সতর্ক ছিলাম। উচ্চস্বরে কথা বলতে বলতে হাঁটছি। যাতে আশেপাশে কেউ থাকলেও ভয় পায়। প্রায় এক ঘন্টা হাঁটলাম। সেই খালের কাছে এসে দাঁড়ালাম। কিন্তু যেখানে নৌকা রেখে গেছি এটা তো সেই জায়গা না। খাল ভর্তি পানি। জঙ্গলেও পানি। তবে নামছে। ভাটায় দ্রুত শুকিয়ে যাবে এই দিকটা। নৌকাটা তো বের করতে হবে।
বেলায়েত সরদার বেশ রুক্ষ এখন। চিৎকার করে ওদের বললেন, নৌকা রাখছি কোন জায়গায়? তোরা বলিস না কেন? বকা খেয়ে একজন বললো, আরেকটু নিচের দিকে ওই বাইন গাছ। বলেই হাঁটা দিলো। নৌকাটি নিয়ে আসতে আরও আধা ঘন্টা সময় লাগলো। নৌকায় ওঠার আগ পর্যন্ত ভীষণ ভয় পাচ্ছি। অনেকেই বলেন আমি খুব সাহসী। কিন্তু আমি জানি, অতোটা সাহস আমার নাই। আমি ঝুঁকি নেই হিসাব করে।
নৌকা না আসা পর্যন্ত স্বস্তি নাই। দরদর করে ঘামছি। উসখুস করছি। কিন্তু বুঝতে দিচ্ছি না। চারপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে আছে। মামুনের দিকে তাকাতেই বললো, সমস্যা আছে ভাই। দেখেন না জঙ্গলটা কেমন ভারী হয়ে আছে? সুন্দরবনের মানুষদের মুখে শুনেছি, বাঘ মামা আশেপাশে থাকলে পরিবেশ ভার হয়ে যায়। বন্যপ্রাণিরা দূরে সরে যায়। হরিণ আর বানর যেখানে থাকবে না সেখানে বাঘ আছে ধরে নিতে হবে। এদিকে পাখিও ডাকছে না। কেমন জানি স্তব্ধ হয়ে আছে চারপাশ।
পাশ থেকে মানুষের কথাবার্তার শব্দ আসছে। কান খাড়া সবার। এবার ওদিক থেকে কুঁই আসলো। মামুন পাল্টা কুঁই দিয়ে আমাদের অবস্থানের কথা জানালো। বৈঠা বেয়ে নৌকা নিয়ে এগিয়ে আসলো ওরা। ব্যাগ বোঁচকাগুলো তোলা হলো। তারপর আমি উঠে বসলাম। একে একে অন্যারাও উঠে পড়লো নৌকায়। আমি ছাড়া সবাই বাইরের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলো।
নৌকায় উঠে পায়ের তালুর কাঁটার কথা মনে পড়লো। আসার পথে কয়েক জায়গায় হোঁচট খেয়েছি। কেওড়ার শ্বাসমূলগুলো বেশ বড় বড়। কষ্ট হয়েছে আসতে। কিন্তু উত্তেজনায় সেদিকে খেয়াল করা হয়নি। সুন্দরবনের গহীনে হাঁটতে গেলে এমনই হয়। যতোক্ষণ বিপদের মধ্যে থাকি, ততোক্ষণ মনে হয় এরপর আর এমন ঝুঁকি নিবো না। তবে বিপদ কেটে গেলে সে কথা আর মনে থাকে না।
সরু খালের ভিতর দিয়ে এগুচ্ছে নৌকা সেই আগের কায়দায়। এই পথটি মোটামুটি চেনা। একটাই খাল নেমে গেছে উত্তরে। এই খালটিই বেরিয়েছে আমাদের ট্রলার যেখানে রাখা সেখানে। যেতে যেতে অনেক রকমের গল্প হলো। রঙঘরের তিন কর্মচারিকে অনেক বকাঝকা করলাম। জঙ্গলের গাছ কাটছেন আপনারা। আগুন জ্বালিয়েছেন অভয়াশ্রমের ভিতর। বিষ দিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করছেন। আবার হরিণও শিকার করেন! এতোগুলো অপরাধ একসাথে আর কেউ করে না। বনদস্যুরাও এতো ক্ষতি করে না। বকতে বকতে পুরো পথ পার করলাম। বের হলাম বড় খালে। নৌকা ভিড়লো ট্রলারের গায়ে। এবার বেলায়েত সরদার বললেন, আপনি তো বোঝেননি ভাই। পুরোটা সময় বাঘ আমাদের ফলো করছে। বললাম, আমি সরাসরি বুঝিনি। কিন্তু আপনাদের আচরণ আর সতর্ক অবস্থা দেখে ঠিকই বুঝছি যে ঝামেলা আছে।
দুপুর গড়িয়ে গেছে। ভাটাও অর্ধেক হলো। আরও তিন ঘন্টা সময় পাবো। ভাটির স্রোত ধরে নিচের দিকে যাবো। বড় নদীর অবস্থা অনুকুলে থাকলে এই টানেই নেমে যাবো দুবলার চরে। রঙঘরের ওই তিনজনকে চলে যেতে বললাম। চাল-ডাল আর পানি দিয়ে বললাম, এদিকে যেন আর আসতে না দেখি। বাঘে খাওয়া ছেলেটির বাবা আর ভাই মানে সেই বড়শির জেলেরা এখনও আছে। এর মধ্যে আরেকটু খ্যাওন দিয়ে ফিরেছে। ভালো মাছ পেয়েছে। তাদেরও কিছু বাজার সদা দিলাম। বরফ দিলাম মাছ রাখার জন্য। উপহার হিসাবে তিনি আমাদের দিলেন তাজা একটি ইলশে তাইড়েল মাছ।
(ঘটনাটি ২০১৬ সালের শেষ দিকের। ছবিগুলো হারিয়ে ফেলেছি। পোস্ট-এর ছবিটি সাম্প্রতিক। বনের ভিতরের এই খুটি জব্দ করেছে বন বিভাগ)