রূপান্তরের গল্প ১৫ | Rupantorer Golpo 15

বনদস্যুদের কোনো স্থায়ী আস্তানা ছিলো না! | রূপান্তরের গল্প ১৫

বনদস্যুদের কোনো স্থায়ী আস্তানা ছিলো না! | রূপান্তরের গল্প ১৫ | Rupantorer Golpo 15 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ১৫ : তখনকার সবচেয়ে বড় দস্যুদলের আস্তানায় আমরা। অনেকেই মনে করেন ডাকাতদের আস্তানা মানে সেখানে ঘর-বাড়ি আছে। আসলে বিষয়টি তেমন না। সুন্দরবনের দস্যুরা কোথাও স্থায়ী ভাবে বসবাস করতো না। এক বা দুই রাতের জন্য গহীন বনের কোনো খালে সাময়িক আস্তানা করতো তারা। বড়জোর এক দুইটা ছাউনি করা থাকতো। বড় কোনো বাইন গাছের মোটা ডালে মাচা করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বসতো দস্যু নেতারা। মূলত মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য গাছের মগডালগুলোতে করা হতো টঙ। কোন গাছের কোন ডালে ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় সেটা জানতো তারা।

দিনের আলো ফুটলো। ঝাইলোর খালের এক পাশে বাটলো নদী। কাছেই কাগা খাল, সেখানে কোস্টগার্ডের একটি পোস্ট আছে। বন বিভাগের একটি টহল ফাঁড়িও আছে সেখানে। তাই আমাদের সেখানে থাকতে হবে সতর্কতার সঙ্গে।

মাস্টার বাহিনীর সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ট্রলার ছেড়ে ডাঙ্গায় সবাই। শুধু রান্নার চুলাগুলো জ্বলছে। রান্না চলছে ট্রলার দুটির গলুইয়ে বসানো মাটির চুলায়। বড় বড় হাঁড়িতে ভাত বসানো। ধোঁয়া উড়ছে। শতাধিক মানুষের সকালের নাস্তা হচ্ছে। ভাত আর নদীর মেধ মাছের ঝোল দিয়ে খাবে শতাধিক মানুষ।

এদিকে আমার সঙ্গীরা সব ঘুম। আমি হেঁটে বেড়াচ্ছি এদিক সেদিক। সঙ্গে বাচ্চু নামের একজন আমাকে অনুসরণ করছে। ট্রলার থেকে দুজন দস্যু আমার দিকে নজর রাখছে। ওদিকে একটা গাছের ওপরে মাচা করা হলো। সাতটা বাজতেই দস্যুনেতা আর কয়েকজন মিলে উঠে বসলো। কয়েকটা মোবাইল ফোন গাছে ঝুলিয়ে কথা বলছিল তারা। বেশ কসরৎ করে উঠলাম সেখানে। শুনলাম কী ভাবে তারা মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে। প্রশাসনের কয়েকজনের সঙ্গেও বেশ জমিয়ে কথা বলতে শুনলাম। সেখানে অপহৃত জেলেদের একে একে ডেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়া হচ্ছিল। সেই সঙ্গে দাবি করা হচ্ছিল মুক্তিপণ। মাস্টার বাহিনীর কাছে তখন জিম্মি সাগর থেকে ধরে আনা ৫৪ জন জেলে।

জিম্মি জেলেদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ চলছিলো। মারধোর না করলেও সেই আচরণ আমি নিতে পারছিলাম না। এদিকে তারাই আবার নিজের পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে একদম নরম। ছোট মেয়েটা কিংবা স্কুলপড়ুয়া ছেলেটার সঙ্গে মমতা মিশিয়ে কথা বলছিলো। স্ত্রী কিংবা মায়ের সাথেও কথা বলছিলো কেউ কেউ।

এসবের ফাঁকে আমাদের আলোচনা শুরু হলো। কথায় কথায় চললো আত্মসমর্পনের কথা। কী ভাবে কী হবে? সরকার তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিবে কী না? সারেন্ডার করলে তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হবে? মামলা হবে কী না? বাড়িতে শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে কী না? যদি সংশ্লিষ্টরা তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে? এমন অসংখ্য প্রশ্নের জবাব দিলাম দিনভর…!!

ঘটনাটি ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের। তখন সুন্দরবনে দেড় ডজন বনদস্যু দাপিয়ে বেড়ায়। বঙ্গোপসাগরে দস্যুতার ভয়ে আতঙ্কিত থাকতো জেলেরা। সেই ত্রাসের দিন ফুরিয়েছে পাঁচ বছর আগেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top