রূপান্তরের গল্প ১৬ | Rupantorer Golpo 16

একসঙ্গে খেতে বসতো না বনদস্যুরা! | রূপান্তরের গল্প ১৬

একসঙ্গে খেতে বসতো না বনদস্যুরা! | রূপান্তরের গল্প ১৬ | Rupantorer Golpo 16 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ১৬ : বনদস্যু দলের ভিতরে চাপা উত্তেজনা। কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু অনুভব করছিলাম। দস্যুনেতা মাস্টারের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক। কিন্তু দলের মধ্যে যে দুটি ভাগ ছিলো সেটা বুঝলাম সেদিনই। যাই হোক, মাথা ঠান্ডা করে সবার সঙ্গে কথা বললাম। সবাইকে আস্থায় আনার চেষ্টা করছিলাম। অবশ্য দস্যু দলটির বেশির ভাগ সদস্যই আমার পূর্ব পরিচিত।

সকালের নাস্তা করতে করতে প্রায় ১২টা বেজে গেলো। দস্যুদের দুই ট্রলারের বড় বড় হাঁড়িতে রান্না হলো। গরম ভাত আর ঠান্ডা মেধ মাছের তরকারি। শীতের মধ্যে সেই তরকারি জমে আছে। মেধ মাছের তেল বলে কথা। শীতকালে এই মাছের স্বাদ বেড়ে যায় শুনেছি। আর যে মাছ রান্না হয়েছে সেগুলো নাকি দশ কেজির উপরে ছিলো।

প্রথমে জিম্মি জেলেদের খাইয়ে দেয়া হলো। তারপর দস্যুদলের সদস্যদের কয়েকজন খেতে বসলো। আমাদের খাবার দেয়া হলো মাস্টার বাহিনীর মূল ট্রলারে। গরম ভাত থেকে ধোঁয়া উঠছে। মাছের তরকারিটা ঠান্ডা হলেও বাড়তি একটা খাবার ছিলো আমাদের জন্য। সেটা হলো ইলিশ মাছের ভাজি।

সবাই একসঙ্গে খেতে বসে না বনদস্যুরা। অর্ধেক খেতে বসলে বাঁকীরা অস্ত্র হাতে সতর্ক থাকে। তারপর যখন অন্যরা বসে তখন আগের গ্রুপ পাহাড়ায় থাকে। এছাড়া খালের গোঁড়ায় নদীর পাশে তিন/চার জন সশস্ত্র দস্যু পাহাড়ায় থাকে। আশে পাশে প্রশাসন বা কোনো সন্দেহজনক নৌকা ট্রলার দেখলে খবর দেয় তারা। যাই হোক, আমরা খেয়ে নিলাম। সকালের নাস্তাটা ভরপেট খেয়ে নিলাম সবাই। কারণ পরের খাবার হবে বিকালে, সন্ধ্যা নামার আগে। সুন্দরবনের দস্যুরা, জেলেরা দুই বেলা খাবার খায়। সন্ধ্যার পর ভারী খাবারের কোনো ব্যবস্থা থাকতো না।

বিকেলে ক্যামেরা বের করলাম। সুন্দরবনের সেই সময়ের সবচেয়ে বড় দস্যু দল মাস্টার বাহিনী আত্মসমর্পনের আবেদন জানালো যমুনা টিভির ক্যামেরায়। তারা সরকারের কাছে লিখিত আবেদনও করেছিল আমাদের মাধ্যমে। ক্যামেরায় ছিলেন বায়েজীদ ইসলাম পলিন। ঐতিহাসিক সেই মুহুর্ত ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন তিনি।

বেলায়েত সরদারের তখন শরীরটা ভালো না। তাঁর ট্রলারটিও একটু ঝামেলা করছিলো। ঝাইলো খালের ভিতরে নোঙ্গর করা ট্রলারটি ঠিকঠাক করতে হবে। কিন্তু বিকালে জোয়ার চলে আসলো। শীতের রাতে অন্ধকারে সেই কাজ আর করা হলো না। ঠিক হলো পরদিন সকালে শেষ ভাটায় পানি সরে যাবে। তখন ট্রলার সারাই এর কাজে নামবেন সরদার।

সুন্দরবনের দস্যুদের নিয়ে গল্পগুলো স্মৃতি থেকে লিখছি। অনেক বছর আগের কথা। সুন্দরবনে দস্যুতা এখন অতীত…!!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top