রূপান্তরের গল্প ১৭ | Rupantorer Golpo 17

আতঙ্ক ভর করতো রাতের অন্ধকারে | রূপান্তরের গল্প ১৭

আতঙ্ক ভর করতো রাতের অন্ধকারে | রূপান্তরের গল্প ১৭ | Rupantorer Golpo 17 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ১৭ : সন্ধ্যা নামলে একরকম শূণ্যতা ভর করে চারপাশে। সুন্দরবনে তো বটেই, দস্যুদের ডেরাতেও সন্ধ্যা নামতো মন খারাপ নিয়ে। বাড়তি হিসাবে থাকতো আতঙ্ক। রাতের আঁধারে কী যে হয়ে যায় কে জানে?

আমরা ছিলাম বলে বাড়তি সতর্কতা ছিলো দস্যুদের মধ্যে। অবিশ্বস্ত কয়েকজনকে আলাদা করে ফেলা হয়, জমা নেয়া হয় তাদের গুলির ব্যাগ। অন্ধকারে পিছন থেকে কেউ যাতে বন্দুক তুলতে না পারে সেজন্য বিশেষ সতর্কতা খেয়াল করেছি বিকাল থেকে। কেউ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভিতরের থমথমে অবস্থাটা টের পেয়েছি সেদিন। আমরাও সতর্ক ছিলাম। সন্ধ্যার পর পর যতদূর সম্ভব আলো জ্বালিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলাম সবাইকে। আমার টিমের সবাইকে আগে থেকে সতর্ক করেছিলাম। সবাই চোখ কান খোলা রেখেছিলো পুরোটা সময়।

মাস্টারের ট্রলারের ভিতরে আলাদা আলাদা কেবিন। সোলার বিদ্যুতে জ্বলছে আলো। আইপিএস দিয়ে পুরো ট্রলারের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সাজানো। ইঞ্জিনও চালু হয় সেল্ফ স্টার্ট-এ। ট্রলারের কেবিনে কেবিনে ফ্যান ঝোলানো। আমরা বসেছি সোহাগ আকনের কেবিনে। সোহাগ দস্যুদলের উপ-প্রধান। লিডার কাদের মাস্টার হলেও দলের সদস্যদের পরিচালনা করতেন সোহাগ। পুরনো দস্যু সোহাগ। চোখে মুখে তার বুদ্ধির ছাপ স্পষ্ট।

সেই রাতও পেরুলো গল্পে গল্পে। আমার সঙ্গীরা একে একে ঘুমাতে গেলো। বেলায়েত সরদারের ট্রলারেই তাদের রাতের থাকার ব্যবস্থা। আমার ঘুমানোর উপায় নাই। পালা করে দস্যুরাও ঘুমাচ্ছে। জেগে আছি শুধু দস্যুনেতা কাদের মাস্টার, সোহাগ আকন, বাচ্চু নামের এক দস্যু আর আমি। ওদিকে চুলা জ্বলেছে সারা রাত। চা এর ব্যবস্থা চব্বিশ ঘন্টা। দুই ঘন্টা পর পর খালের মুখে পাহাড়ায় থাকা লোকজন ডিউটি বদল করছে। এসব দেখতে দেখতে কাটলো সারাটা রাত। চলবে….!!

ছবিটি ঝাইলো খালের। বাটলো নদীর মাঝামাঝি অবস্থান এ খালের। দস্যুদের চলাফেরার জন্য উপযুক্ত খালটি। অসম্ভব সুন্দর, আর মাছও পড়তো প্রচুর। ২০১৫ সালের ছবি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top