বাঁক ঘুরতেই দস্যু বাহিনী | রূপান্তরের গল্প ৩৩৫ | Rupantorer Golpo 335 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | জীবনে ফেরার গল্প | Jibone Ferar Golpo | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৩৩৫ : ছোট্ট খাল থেকে বের হলো সাধারণ একটি নৌকা। ছোট্ট কাঁকড়ার নৌকায় চারজন বসা। সামনে পিছনে বসে বৈঠা বাইছে যারা তারা কাঁকড়ার জেলে। মাঝে বসা দুইজন বনদস্যু। আগে দেখিনি ওদের। তবে চেহারা আর জামা কাপড় দেখে বুঝতে পারছি ওরা তারাই। মানে আমাদের নিতে আসা অগ্রবর্তী দল। ইশারায় সালাম দিলো তারা। আমিও হাত তুলে উত্তর দিলাম।
কাছাকাছি এসে আবারও সালাম দিলো ওরা। নৌকা ভিড়লো আমাদের ট্রলারের সাথে। একজন উঠে পড়লো ট্রলারে। আরেকজন সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো। দুজনই নিরস্ত্র। তবে চোখে সতর্ক দৃষ্টি। প্রথম জন হাত মিলালো, বুক মিলালো। তারপর পাশে দাঁড়ানো সোর্স আলমগীরের দিকে এগিয়ে গেলো। তারা পূর্ব পরিচিত। নৌকায় দাড়ানো দস্যুকে উঠে আসতে বললাম। কিন্তু সে নৌকা ছাড়ছে না।
কী করবো এখন? কোথায় যাবো? দিনের আলো ফুটে গেছে। আমাদের নিতে আসা যুবককে বললাম, দলের লোকজন কোথায়? বললো, এই তো ভাই সামনেই আছে। বললাম, চলো তাহলে। ছেলেটি বললো, আরেকটু পর যাওয়া লাগবে ভাই। ওই খালে ট্রলার ঢুকবে না, এখনও পানি উঠেনি।
জোয়ার কেবল লাগলো! আধা ঘন্টার মধ্যেই যাওয়া যাচ্ছে। এখানেই অপেক্ষা করা যাবে। বললাম, এই খোলা জায়গায় থাকবো? যদি ফরেস্ট বা কোস্টগার্ড আসে? সোর্স আলগমীর বললো, কেউ আসবে না ভাই। কেবল জোয়ার লাগলো তো। যদি আসেও খালে আরও পানি ভরার পর আসবে। আমাদের হাতে না হলেও তিন ঘন্টা সময় আছে।
গলুইয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছি। আর ভাবছি এই দুইজন কি খালি হাতে এসেছে? বন্দুক কই ওদের? কথা বলছি, আর কৌশলে চারপাশে খেয়াল করছি। না, আর কাউকে দেখছি না। তবে ডিঙ্গি নৌকার পাটাতনে কিছু একটা আছে কাঁথা দিয়ে ঢাকা। নৌকায় দাঁড়ানো আরেক দস্যু সেটি বেশ কায়দা করে আড়াল করে রেখেছে।
আধা ঘন্টা সময় কাটানো কোনো সমস্যা না। কিন্তু এই মুহুর্তে সময়টা বেশ লম্বা লাগছে। দস্যুদের ডেরায় না যাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না। এদিকে সকালের সূর্য উঠে গেছে। ওরা যতোই বলুক কেউ আসবে না, কিন্তু আমি ঝুঁকি নিতে রাজি না।
ট্রলার ছাড়েন সর্দার। আমরা সামনের তিনমুখে ঢুকে ডানপাশে গিয়ে দাঁড়াবো। জঙ্গলের আড়ালে নিয়ে রাখবেন। পানি বাড়লে তারপর আবার রওনা দিবো। মামুন গিয়ে ইঞ্জিন চালু করলো। একটু এগিয়েই পড়লো তিন খালের মুখ।
সুন্দরবনের এই জায়গার নাম চাত্রীর দোয়া। একাধিক খালের মোহনাকে এদিকে দোয়া বলে। জায়গাটা বেশ গভীর। অনায়াসে ট্রলার নিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম ডানের খালে। সেখানে নোঙ্গর করবো। কিন্তু ট্রলারে থাকা দস্যুদের প্রতিনিধি বললো, পানি আছে খালে। এখন যাওয়া যাবে। পিছনে তাকিয়ে সর্দারকে চালিয়ে যাওয়ার ইশারা দিলাম।
ট্রলার চলছে ধীর গতিতে। মাঝে মাঝে তলা ঠেকে যাচ্ছে। তবে জোয়ারের সময় বলে সমস্যা হচ্ছে না। সর্দার বেশ দক্ষতার সাথে এগিয়ে নিচ্ছেন ট্রলার। অগ্রবর্তী দল হিসাবে যারা এসেছে তারা বললো, সামনেই সেই জায়গা।
সামনের বাঁক ঘুরতেই দেখি বিশাল এক ট্রলার। দস্যুরা দাঁড়ানো। অস্ত্র হাতে দাঁড়ানো ১২-১৪ জন যুবক। এরাই বড় সুমন বাহিনী। পূর্ব সুন্দরবনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ বনদস্যু দল।
ট্রলার ভিড়লো। সাথে সাথে ওরা এসে উঠলো আমাদের ট্রলারে। একজন ছাড়া সবাই আমার অপরিচিত। দস্যুনেতার নাম জামাল শরীফ। এগিয়ে এলেন তিনি। হাত মিলালেন, বুক মিলালেন। এরপর একে একে সবার সাথে পরিচয় হলো। ওই ট্রলারের শেষের দিকে মুখ ঢেঁকে দাঁড়ানো এক যুবক। শক্ত হাতে অস্ত্রের বাঁট ধরা। যুবকের নাম জুয়েল। শান্ত বাহিনীর সাথে তার আত্মসমর্পণ করার কথা ছিলো। এই সেই জুয়েল, যার সাথে যোগাযোগ গডফাদারদের সাথে। সন্দেহজনক এই বনদস্যু যে দলে থাকে সেখানেই চলে ষড়যন্ত্র।
জুয়েলকে দেখে শুরুতেই হোঁচট খেলাম। টান দিলো মনের ভিতর!
(রূপান্তরের গল্পে সাময়িক বিরতি শুরু হলো। আবার দেখা হবে। ভালো থাকবেন সবাই)