মৃত্যুর ঝুঁকি ছিলো সব সময়! | রূপান্তরের গল্প ১৯ | Rupantorer Golpo 19 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ১৯ : সাত সকালে টাওয়ারের ডিউটি বদল হলো। খালের মুখে পাহাড়া দেয়ার জন্য মাচা তৈরি করতো দস্যুরা। সেই মাচাকেই টাওয়ার বলা হতো। সকালে এমদাদুলের ঘাড়ে ছিলো পাহাড়ার দায়িত্ব। বনদস্যু ইমদাদুলের বয়স ২৩/২৪ এর বেশি না। ফোনে একটু বেশি কথা বলতো। এই ফোনে কথা বলাই সেদিন কাল হলো।
সেই রাতে আমাদের ফেরার কথা। সারাদিন ঝাইলোর খালেই থাকবো। দস্যুরা আমাদের বিদায় দিবে রাতে। একই সঙ্গে তারাও বের হবে বহর নিয়ে। জায়গা পরিবর্তন করে অন্য কোনো গহীন বনে গিয়ে আস্তানা গাঁড়বে।
সে রাতেও ঘুমাইনি। ভোরবেলা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হেঁটে খালের মুখে গেলাম। বাটলো নদীর এমাথা ওমাথা দেখা যায় সেখান থেকে। সাত সকালে একটা ট্রলারের শব্দ! বুকটা কেঁপে উঠলো। দূর থেকে আসা ট্রলারের শব্দে অবশ্য দস্যুদের বিচলিত হতে দেখলাম না। ওরা বললো ফরেস্টের ট্রলার, সমস্যা নাই। ওদের সাথে নাকী দস্যুদলের বোঝাপড়া আছে। আমি বিশ্বাস করলাম না।
কিছুক্ষণ কাটলো উৎকণ্ঠার মধ্যে। তারপর দেখি কাঠের ট্রলার চলছে। সামনে বন বিভাগের পতাকা। নদীর কূল দিয়ে এগিয়ে আসছে, ভাটার স্রোতে যেন গা ভাসিয়ে চলছে ট্রলার। আমি নিজেকে আড়াল করলাম। বললাম ফিরে যাই ভিতরে। কিন্তু সেখানে থাকা বনদস্যুরা আমাকে বললো- কোনো সমস্যা নাই।
গড়ান বনের আড়ালে চুপচাপ দাঁড়ালাম। বন বিভাগের ট্রলারটি আমাদের অতিক্রম করছে। ছাদে বসা একজনের সঙ্গে দস্যুদের ইশারা বিনিময় হলো। ট্রলার নেমে গেলো দক্ষিণে। তখন প্রায় সাড়ে সাতটা। হেঁটে ফিরলাম মাস্টার বাহিনীর সাময়িক আস্তানায়, যেখানে তিন দিন অবস্থান করছিলাম আমরা।
সকালের নাস্তায় ছিলো গরম ভাত আর ইলিশ ভাজা। একটু খেয়ে শরীরটা এলিয়ে দিলাম। আধা ঘন্টা পর চা আসলো। চা-এ চুমুক দিতেই বাটলো নদীর পারে ডিউটিতে থাকা দস্যু ইমদাদুল দৌড়ে এলো। জানালো, একটি স্পিডবোটে করে কোস্টগার্ডের কয়েকজন সশস্ত্র সদস্য নেমেছে আমাদের পাশেই। কথা বলতে বলতেই শুরু হলো ব্রাশ ফায়ার। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলির টার্গেটে আমরা বসা..!
(সুন্দরবনের দস্যু জগতের এই ঘটনাগুলো রূপকথা নয়। রূপান্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের গল্প, সত্য ঘটনা। বনদস্যুতা এখান অতীত)