ঝাইলো খাল ধরে ছুটলো দস্যু ট্রলার | রূপান্তরের গল্প ২৪ | Rupantorer Golpo 24 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ২৪ : যুদ্ধংদেহী দস্যুদের ট্রলার। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ঝাইলোর খাল ধরে। গন্তব্য জানা নাই। হয়তো চলতি পথের কোনো পাশখালে ঢুকবো। দস্যুনেতা মাস্টার ট্রলারের এমাথা ওমাথা হাঁটছে আর চিৎকার করছে। গোলাগুলির সময় পালিয়ে যাওয়া কেউ যদি সাড়া দেয় তো তাদের উঠিয়ে নেয়া হবে।
আমি, পলিন ও রাজিব ট্রলারের পাটাতনে শুয়ে আছি। বসাও নিষেধ। কারণ হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে আমাদের বিপদ হতে পারে। আমি মাঝে একটু উঠে বসছিলাম। বোঝার চেষ্টা করছিলাম কী হচ্ছে চারপাশে। মনে মনে ভাবছিলাম যদি বেলায়েত সরদারদের দেখা পাই! কিন্তু কারও কোনো সাড়া পেলাম না। গুনগুন শব্দে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রলার।
আমাদের সঙ্গে আরও দুজন শুয়ে ছিলেন। ক’দিন আগে যোগ দিয়েছে তারা। কিন্তু ভয়ে একদম শেষ অবস্থা তাদের। চোখে পানি। হাত ধরে অনুরোধ করছিলো যাতে যাওয়ার সময় তাদেরও নিয়ে যাই! বেশ জোরেসোরে বকা দিলাম। বললাম কেন দস্যুতায় আসছো তোমরা? কাজ করে খেতে পারো না?
জোরে হাঁক দিলো দস্যুনেতা। গলুই থেকে চিৎকার করে মাস্টার বলছে ডানের খালে যাও। সুকানিতে দাঁড়ানো সোহাগ। ট্রলার দাঁড়িয়ে গেলো। মুখ ঘুরিয়ে ঢুকবে সরু খালে। ব্যাক গিয়ার দিয়ে আহ্নি সোজা করে দিলো টান। ঢুকতেই একটা কেওড়া গাছের ধাক্কা লাগলো। ডাল ভেঙ্গে পড়লো খালে। আবার ব্রেক। ব্যাক গিয়ার দিয়ে ট্রলার আবার বেরিয়ে পড়লো মূল খালে। এই খালে থাকা যাবে ন। কারণ যে কেউ আসলেই ভাঙ্গা গাছ দেখে বুঝে ফেলবে যে আমরা ওই খালে।
পর পর কয়েকটা খাল পার হলাম। এবার একটু চওড়া খাল দেখে ঢুকে পড়লাম। বাম পাশের এই খালটি বেশ লম্বা, আঁকাবাঁকা। দুই বাঁক ঘুরে দাঁড়ালাম।
এদিকে ভাটা হয়ে গেছে। পানি কমছে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো। দাঁড়ানোর পর বুঝলাম ক্ষুধার্ত আমরা। দ্রুত চুলা জ্বললো। বিস্কিট আর লাল চা খেয়ে দম নিলাম। আপাতত বাঁচলাম মনে হয়। কিন্তু মন পড়ে আছে সেই ঝাইলোর খালে। অন্যরা সেখানেই আছে। তাদের সাথে আমাদের আবার দেখা হবে তো? মহা দুশ্চিন্তায় আমি…!!!