রূপান্তরের গল্প ৩৭৯ | Rupantorer Golpo 379

খুলনায় খুলছে রহস্যের জট! | রূপান্তরের গল্প ৩৭৯

খুলনায় খুলছে রহস্যের জট! | রূপান্তরের গল্প ৩৭৯ | Rupantorer Golpo 379 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | জীবনে ফেরার গল্প | Jibone Ferar Golpo | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৩৭৯ : ও ভাই, কোন হোটেলে উঠছেন? সাত সকালে ফোন! ওপাশে একজন বনরক্ষী। ভাবছি এতো সকালে হলো টা কী? হয়তো আমার খুলনায় আসার খবর পেয়ে ফোন দিয়েছেন তিনি। নাকী কোনো বিপদে পড়েছেন? এই সকালে আমাকেই বা খুঁজছেন কেন? বললেন, জরুরি কথা আছে ভাই। দেখা করে বলতে হবে। বললাম, বিকালের দিকে দেখা করি? উনি বললেন, একটু দেখা করতেই হবে। সন্ধ্যা হলেও সমস্যা নাই। তাকে না বলে যেন খুলনা না ছাড়ি।

হোটেলটি খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে। ঠিকানা দিলাম। বললাম, একটু বিশ্রাম নিবো ভাই। সারা রাত ঘুমাইনি।

রাখতে না রাখতে ফোন আসলো সুন্দরবন থেকে। দস্যুনেতা জাহাঙ্গীরের ফোন। ধরতেই বললো, আপনার কাছে একটা লোক যাবে ভাই। বললাম, বন বিভাগের লোক? বললো, জ্বি ভাই। বললাম, একটু ঘুমাতে দিবেন না? দস্যুনেতা বললো, আমাকে এতো বড় বিপদে রেখে ঘুমাবেন ভাই? আমি না আপনার ভাই! বললাম, ছিলেন। তবে মাঝে ভুলে গেছিলেন।

জঙ্গলের সেই নাটা জাহাঙ্গীর এখন বিরাট বড় ডাকাত সর্দার! একটু ঠেঁস দিয়ে বললাম। সে বললো, ভুল করেছি ভাই। চারপাশে বেঈমানে ভরা। সবাই শুধু চায় আর চায়। এতো বড় বিপদ আমার। যাকেই বলি সেই বলে টাকা লাগবে। বললাম, প্রশাসনের যে স্যারদের সাথে কথা হয়, তাদের বলেন। সে বললো, এখন আর কেউ ফোন ধরছে না ভাই। সোর্স দিয়ে কথা বলাচ্ছে। বুঝতে পেরেছি। এখন বলেন, কী হইছে?

জাহাঙ্গীর বললো, সবকিছু ঠিক চলছিলো। গত কয়েক বছরের রোজগার দিয়ে একটা জমি কিনলাম। সেখানে ঘর তুলে উঠলো আমার বউ বাচ্চা। নিজে গিয়ে ঘর তুললাম। পাশেই আরও জমি কিনলাম এ বছর। সব কৃষি জমি ভাই। বললাম, কোন ভাবী উঠছে ওখানে? বড়টা না ছোটটা? বললো, ময়না মানে আমার ছোট বউ আর ছেলে ইয়াসিন। সাথে আমার এই ঘরের শ্বশুর, শাশুড়ি আর শালা থাকতো।

সবই তো ঠিক। তাহলে সমস্যা কোথায়? বললো, মংলার এক সোর্স আছে। আপনি চিনবেন তাকে। বললাম, ওমুক? বললো, জ্বি ভাই। সেই আমার সর্বনাশটা করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে সে আমার মাণিকগঞ্জেে বাসায় গেছে। রাতের বেলা অভিযান চালাইছে। তবে কাউকে ধরতে পারেনি।

ওরা পালায়ে গেছে। এখন কোথায় আছে কী করছে কিছুই জানি না ভাই। ফোনগুলোও প্রশাসনে নিয়ে গেছে। ওরা কোথায় আছে, কী করছে কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। বললাম, বাড়ি আর জমি কার নামে কেনা? বললো, ময়নার নামে। আপনার সাথে নাকী প্রশাসনের খুব ভালো সম্পর্ক? তারাই আবার আপনার বাড়িতে অভিযান চালালো? বললো, ওই সোর্স আমার সর্বনাশ করে ফেলছে! তাকে সামনে পেলে গুলি করতাম ভাই!

আমি হেসে দিলাম। বললাম, পরিবারের সাথে যোগাযোগ হলে জানায়েন। আর আমাকে এতো ফোন দিয়েন না। আপনার ফোন ট্র্যাক করা হয়। আমারটাও হয়তো করছে।

ফোন বন্ধ করে ঘুম দিলাম। লম্বা ঘুম। দুই দিনের সফরে ক্লান্ত শরীর, মন। হোটেলের নরম বিছানা আর ভারী কম্বলের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম।

দরজায় কেউ টোকা দিচ্ছে। ঘুম ভাঙলো সে শব্দে। মোবাইল ফোনটা হাতে নিলাম। খুললাম। দেখি বেলা চারটা বেজে গেছে! শরীরটা আরও আরাম চায়। আলসেমি লাগছে। তবুও উঠে বসলাম। পাশের বিছানায় পলিন। ডাক দিলাম তাকেও। বললাম, দরজাটা খোলেন।

আমাদের নিয়ে ছোট করে জটলা লেগে গেছে। দরজায় রুম সার্ভিসের একজন দাঁড়ানো। তার পেছনে আরও কয়েক জন। বললাম, কী ব্যাপার ভাই? আমাদের ঘুম ভাঙালেন কেন? বিশ্রামের সময় বিরক্ত করছেন কেন? সে বললো, বিকাল হয়ে গেছে। দুপুরে খাননি। তাই ডাকতে আসলাম। বললাম, রেস্টুরেন্ট থেকে হাল্কা কিছু নিয়ে আসেন। রুমেই খাবো।

গোসল সেরে ফোনটা নিয়ে বসলাম। শত শত মিসড কল। বেশির ভাগ ফোন জাহাঙ্গীরের। ফিরতি কল করলাম। বেশ উত্তেজিত সে। বললো, আমার লোকটা কী দেখা করেছে? বললাম, সন্ধ্যার পর আসতে বলেছি। মনে হয় একটু রাগ করেছে সে। বললো, একটা কাজ করে দিতে বললাম ভাই। আপনি বিষয়টা মাথাতেই নিলেন না। বললাম, আপনার মাথা ব্যাথা আমি নিবো কেন ভাই? ফোন রাখেন। আমি বিশ্রাম নিবো।

জাহাঙ্গীর ফোন রাখলো না। আবার কান্না শুরু করলো। বললাম, বউ আর বাচ্চার প্রতি এতো ভালোবাসা থাকলে ডাকাতি করতে গেলেন কেন? এসময় মজার একটা কথা বলে ফেললো সে। বললো, ডাকাতির টাকায় ভালোবাসা হইছে ভাই। এই রোজগার না থাকলে প্রেম হতো না, বিয়েও হতো না। আপনি তো সবই জানেন। বললাম, তাই যদি হয়, তাহলে সারেন্ডার করলে তো সংসার টিকবে না। এবিষয়ে আর কথা বাড়ালো না সে। বললো, আপনি একটু দেখেন। ওদের ধরলে আমার কিন্তু কোনোদিন আর ভালো হওয়া হবে না। বললাম, আপনার ভালো হওয়ার দরকার নাই। ডাকাতি করতে থাকেন। দেখবো কতো বড় দস্যুনেতা হতে পারেন!

আমার আঁকাবাঁকা কথায় জাহাঙ্গীরের রাগ হচ্ছে। কিন্তু বেকায়দায় বলে কিছু বলতে পারছে না। যে বিপদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে, সেখানে আমি কী করতে পারবো জানি না। তবে এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চাই।

এই মুহুর্তে ভীষণ বিপদে জাহাঙ্গীর। নানা ভাবে সে তা কাটানোর চেষ্টা করছে। এই সময়ে তার সোর্সগুলো সমানে ভয় দেখাচ্ছে। আবার বাঁচানোর কথা বলে টাকা পয়সা নিচ্ছে। পরিবারের উপর থেকে চাপ কমানোর কথা বলে একজন দশ লাখ টাকা নিয়েও ফেলেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে নাকী কথাও বলিয়ে দিয়েছে সেই সোর্স। ভাবলাম, এটা হতেও পারে। নাও হতে পারে। কারণ আর যাই হোক, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সেই কর্মকর্তা উপরি নিবেন না। কোনো একটা ঝামেলা আছে।

এদিকে ঘুম থেকে উঠার পর প্রতি ঘণ্টায় ফোন দিচ্ছে জাহাঙ্গীর। কথা একটাই, তার পরিবারকে বিপদ থেকে বাঁচাতে হবে। বললাম, ডাকাতির সম্পদ যদি তাদের কাছে থাকে তাহলে তো ধরবেই। আপনি দয়া করে ধৈর্য ধরেন। আর ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন দিয়েন না। যদি কোনো খবর থাকে জানাবো।

ফোন রাখলাম। এখন চারপাশের খবর নিতে হবে। এর মাঝে ওই বনরক্ষীর সাথেও দেখা করবো। ফোন দিয়ে তাঁকে আসতে বললাম। হোটেলে বসে আমার সবগুলো সোর্সকে সক্রিয় করলাম। মংলার দুজন সোর্সকে খুলনা আসমে বললাম। তাদের মধ্যে একজন সেই ব্যক্তি, যে জাহাঙ্গীরের মানিকগঞ্জের বাড়িতে অভিযানের সোর্স ছিলো।

সন্ধ্যার পর পর বন বিভাগের সেই লোকটি আসলেন। এক হাতে মিষ্টির প্যাকেট। আরেক হাতে সপিং ব্যাগ। সেখানে কিছু ফল আছে। সাথে আরও কিছু প্যাকেট। হাত মিলালাম, বুক মিলালাম। লোকটির সাথে পরিচয় অনেক আগে। মাঝে যোগাযোগ হতো না। জাহাঙ্গীরের ইস্যুতে আবারও দেখা হলো।

সুন্দরবনের দস্যুদের মূল লক্ষ, জেলে-বাওয়ালী আর মাছ ব্যবসায়ীরা। বনে তাদের সশস্ত্র অবস্থান বন্যপ্রাণিদের জন্য হুমকির, বনরক্ষীদের জন্য অস্বস্তির। দস্যুদের দাপটে এক রকম কোণঠাসা তারা। বনের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দস্যুরাই বড় বাধা। শুধু তাই না, বনের অভিভাবক হয়েও চরম অসম্মানের দিন কাটে বনরক্ষীদের। অন্যদিকে চিহ্নিত কিছু বনরক্ষীদের কথা জানি যারা বনদস্যুদের বন্ধু, নানা অপকর্মে জড়িত। কিন্তু সেই সম্পর্ক এতো গভীর হতে পারে তা জানা ছিলো না। তেমনই একজন আজ আমার সামনে।

জাহাঙ্গীরের উপঢৌকন নিজের হাতে নিয়ে এসেছেন এই বনরক্ষী। বললেন, এগুলো একটু রাখেন ভাই। জাহাঙ্গীর আপনাকে দিতে বলছে। বললাম, কী আছে ভেতরে? উনি বললেন, কী আছে বলতে পারবো না। সুন্দরবনের একজন মাছ ব্যবসায়ী দিলো। আপনার সামনে আসবে না বলে আমাকে পাঠালো। বললাম, খুলে দেখেন!

একটি ছোট চায়ের দোকানে বসেছি আমরা। কথা একটাই, আমি কিছু জানি না ভাই। আপনার সাথে তো তার কথা হইছেই। পারলে একটু হেল্প করেন। হাল্কা নাস্তা আর চা খেতে খেতে বুঝতে চেষ্টা করছি। উপহারের ব্যাগ খুলে দেখি ফলের ভেতরে একটি বাদামী ঠোঙ্গা। ভেতরে অ্যালকোহলের বোতল। বললাম, বাহ। বিরাট প্রস্তুতি। একটু মিষ্টির প্যাকেটটা খোলেন তো ভাই। দেখি কী মিষ্টি আছে ওখানে? বনরক্ষী ভাইটি কিছুতেই খুলবেন না। বললেন, রুমে গিয়ে দেখেন ভাই। বলেই ব্যাগগুলো নিয়ে উঠে পড়লেন। বললেন, চলেন, আপনার রুমে দিয়ে আসি।

বেশ ভালো বুঝতে পারছি কী আছে ভেতরে। ফলমূল পাঠানোর জন্য এতো আয়োজন হওয়ার কথা না। এছাড়া বিপদ থেকে বাঁচার জন্য জনে জনে টাকা ছড়াচ্ছে জাহাঙ্গীর, জানতেও পারছি সে কথা। কাকে কতো টাকা দিচ্ছে, কতো টাকা জোগাড় করতে হচ্ছে এই খবরগুলো পাচ্ছি দস্যুদলটির ভেতর থেকে। ভাগ্নে বাছের আমাকে সবকিছুই জানায়।

হাত ধরে আবার চায়ের টেবিলে বসালাম সেই বনরক্ষীকে। বললাম, আমি এসব নেই না জানেন না ভাই? আপনার তো জানার কথা! উনি বললেন, আপনি নিবেন না বলে ওরা আমার হাতে পাঠালো। ভাবছে আমার হাত থেকে হয়তো নিবেন। বললাম, এবার খোলেন মিষ্টির প্যাকেট!

দড়ি দিয়ে হাল্কা করে বাঁধা মিষ্টির প্যাকেট। বুঝাই যাচ্ছে যে এটি মিষ্টির দোকানীদের বাঁধন না। ওরা এই সূতলিও ব্যবহার করে না। নিজেই খুললাম। ভেতরে টাকা!

বনরক্ষী ভাইয়ের চেহারা হলো দেখার মতো। বললেন, আমার উপর রাগ করেন না ভাই। আমি বাধ্য হয়ে আসছি। ওই সিন্ডিকেটের মেলা পাওয়ার ভাই। জাহাঙ্গীর সরাসরি আমাকে পাঠায়নি। এক বড় ভাই দায়িত্ব দিয়েছেন একজন মাছ ব্যবসায়ীকে। তার মাধ্যমে আমার কাছে। ভেতরে এসব আছে জানলে আমি আসতাম না ভাই, বিশ্বাস করেন! বললাম, আপনি সহ কয়েকজন ওদের খুব কাছের মানুষ। অনেককেই চিনি, অনেকে সাধু সেজে আছে এখনও। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনেকের নামে তথ্য আছে।

হাত ধরে লোকটি বললেন, বনের ভেতরে আমরা যারা থাকি তাদের কি কোনো উপায় আছে? আপনি তো সবই জানেন ভাই। বললাম, সরকারি চাকরি করে বনদস্যুদের সহযোগী হওয়াটা দুঃখ জনক ভাই। এটা লজ্জারও বিষয়। কারণ আপনার অন্য সহকর্মীরা এদের কারণে অসম্মানীত হচ্ছেন, সারাক্ষণ অস্বস্তিতে কাটাচ্ছেন শত শত বনরক্ষী।

মনে হচ্ছে উনি বেশ অনুতপ্ত। উপহার সামগ্রীগুলো থেকে একটি আপেল বের করে নিলাম। বললাম, জাহাঙ্গীরকে জানিয়ে দিবেন আমি তার উপহার নিয়েছি। ব্যাগটি, টাকাগুলো, মদের বোতলটা যার কাছ থেকে এনেছেন তাকে ফেরত দিবেন। বলবেন, জাহাঙ্গীরের বিষয়ে কিছু করার থাকলে করবো আমি। সেজন্য কোথাও এক পয়সাও খরচ করতে হবে না।

সেখানে বসেই জাহাঙ্গীরকে ফোন দিলাম। বললাম, জনে জনে টাকা পয়সা দেওয়া বন্ধ করেন। তাতে কোনো কাজ হবে না। আপনার বাঁচার রাস্তা একটাই, সেটা হলো আত্মসমর্পণ! আপনার সাথে স্যারদের কথা হয়। তাদের বলেন সারেন্ডার করবেন।

তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো জাহাঙ্গীর। সব বেঈমান ভাই! বললাম, আপনি করেন ডাকাতি। আপনার সাথে অন্যদের ঈমান রেখে কাজ করতে হবে কেন? দস্যুনেতা বললো, জীবন থাকতে ওদের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করবো না!

কথা বলতে বলতে চায়ের দোকান থেকে উঠলাম। সাথে ব্যাগ হাতে সেই বনরক্ষী। নিরিবিলি একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে শুনছি জাহাঙ্গীরের কথা। মূল বিষয় হলো, তার ছোট স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর, শ্বাশুরি, শ্যালক এখন পলাতক। তাদের বিপদ মুক্ত করতে হবে। সেটা করতে পারলেই সে আত্মসমর্পণের কাথা ভাববে। যদি সারেন্ডার করে তা হবে আমার মধ্যস্ততায়।

মনটা নেচে উঠলো। হারিয়ে যাওয়া খেলা যেন মুহুর্তেই ফিরে আসলো আমার হাতে। এখন সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে। খেলাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে খেলতে পারলে জয় নিশ্চিত। ঠিকঠাক খেলতে পারলে জাহাঙ্গীর ডাকাত সারেন্ডার করবে, দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের যাত্রা শুরু হবে নতুন করে। কিন্তু সেই খেলার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে দস্যুনেতার পরিবার। তারা তো পলাতক। পাবো কোথায়? কই খুঁজবো তাদের?

(২৬ জানুয়ারি ২০১৭, খুলনা)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top