রূপান্তরের গল্প ২৬ | Rupantorer Golpo 26

দস্যুরা আমাকে সন্দেহ করছিলো না তো? | রূপান্তরের গল্প ২৬

দস্যুরা আমাকে সন্দেহ করছিলো না তো? | রূপান্তরের গল্প ২৬ | Rupantorer Golpo 26 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ২৬ : সেই দুপুর থেকে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছি। সন্ধ্যার আগে আগে দূর থেকে মানুষের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। কেউ একজন গান গাইছে। জঙ্গল থেকে বের হলো মাস্টার, সঙ্গে বেশ কয়েকজন। গান গাইছে বাচ্চু।

সন্ধ্যা গড়ালো। পাশের খালে আমাদের ট্রলার। সেখানে বেলায়েত সরদার আর বাঁকী দুইজন। আমাদের এখানে দস্যুদের দুটি বড় ট্রলার। একটি ছোট ট্রলার। কয়েকটা নৌকা। অপহৃত জেলেদের রাখা হয়েছে একটি ট্রলারে। সেখানে পাহাড়া বসেছে শক্ত করে। বেশ কয়েকজন জেলে নিখোঁজ। নিখোঁজ এক দস্যু, নাম তার গালকাটা রবিউল।

রাত ১২টার দিকে আমরা রওনা দিবো। জোয়ার বাড়ছে। বাড়ছে খালের পানি। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হেঁটে গেলো দু’জন। আমাদের ট্রলারটা নিয়ে আসলো আধা ঘন্টার মধ্যে।

সরদারের ট্রলার ভিড়লো পাশে। সিঙ্গেল স্ট্রোক ইঞ্জিন। বিকট শব্দ। সেই রাতে মনে হচ্ছিলো অনেক দূরে এই শব্দ ছড়িয়ে যাচ্ছে! ভয় ভয় লাগছিলো। ট্রলার থামলো। উঠে পড়লাম। ক্যামেরার যন্ত্রপাতি গুছিয়ে নিলো পলিন। সব ঠিকঠাক, শুধু ট্রাইপডটা নাই। অফিসের সম্পদ। নিয়ে ফিরতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম ওদের। আসলে গোলাগুলির সময় ট্রাইপডটা নিয়ে পাশে জঙ্গলে সরিয়ে রেখেছিলো একজন। কিন্তু তখন আর সেই খালে যাওয়ার পরিস্থিতি ছিলো না।

আমার কাপড়ের বাক্সটা খুলতে গিয়ে দেখি ভিতরে জামা কাপড় নাই। কী ব্যাপার? সরদার হাসতে হাসতে বললেন, সব অন্যদের দিয়েছেন তিনি। ভেজা, ছেঁড়া কাপড় পড়ে কাঁপছিলো অনেকে। ট্রলারে থাকা সব কাপড় দেয়া হয়েছে তাদের। যাক, অসুবিধা নাই। আমি সেই ছেঁড়া ভেজা কাপড় পড়েই ফিরেছিলাম।

রাত ১০টার মতো বাজে। সবাই একসাথে খেতে বসলাম। দস্যুনেতা মাস্টার, সোহাগ, ফজলু, বাচ্চু, নয়ন, সুলতান কাকা… সবার চোখ অনুসরণ করছি নিবিড় ভাবে। সকালে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জন্য আমাদের সন্দেহ করছে না তো তারা?

খাওয়া শেষ করে একটু আলোচনায় বসলাম। শেষ কথা- তারা সারেন্ডার করবে। আমাকে সেই খবর পৌঁছে দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের কাছে। সকালের দুর্ঘটনার জন্য তারা দু:খ প্রকাশ করলো। বললো, দুর্ঘটনা না ঘটলে আমাদের পশুর নদী পর্যন্ত এগিয়ে দিতো তারা। কিন্তু সেটা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

ওই জায়গা থেকে পশুর নদীতে বের হতে লম্বা পথ পেরুতে হবে। ঝাইলো খাল থেকে শতমূখী খাল, তারপর কয়েকটা খাল আর ভাড়ানী পেরিয়ে পড়বো হংসরাজ নদীতে। দস্যুদের কাছ থেকে সেই পথ বুঝে নিচ্ছিলাম। কারণ ভুল হলে হারিয়ে যেতে হবে গহীন বনে…!!!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top