অন্ধকারে পারি দিতে হবে অচেনা জটিল পথ | রূপান্তরের গল্প ২৭ | Rupantorer Golpo 27 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ২৭ : দস্যুদলের নেতা কাদের মাস্টার। তবে দল পরিচালনায় তার নিষ্ক্রীয়তা দেখছিলাম শুরু থেকেই। সক্রিয় যিনি, তিনি সোহাগ আকন। আমার ক্যামেরায় দলের পক্ষে সারেন্ডারের আবেদন করেছিলেন তিনি। অপহৃত জেলেদের মুক্তিপণ আদায় থেকে শুরু করে সব কাজই করছিলেন সোহাগ আকন। মোট কথা জলদস্যু বাহিনীটি চলছিলো এক রকম তারই নেতৃত্বে। সোহাগ আকনের বাড়ি বাগেরহাটের রামপালে। বন্দুকযুদ্ধে এক হাত নষ্ট। সেই হাতেই বন্দুক চালাতে পারতেন।
রাতের খাবার আমরা একসঙ্গে খেলাম। তারপর সোলার বাতির আলোর নিচে বসে আমাকে ফিরতি পথ বুঝিয়ে দিলেন। গুলিতে নষ্ট হাতে কলম ধরে ছোট্ট এক টুকরা কাগজে খালের ম্যাপ আঁকলেন। ঝাইলো থেকে পূর্ব দিকে আধা ঘন্টা যেতে হবে। তারপর দোঢালা। মানে দুটি খাল। যেতে হবে বামের খালে। তারপর সামনে পড়বে শতমুখী খাল। সেখানে গিয়ে সঠিক খালটি ধরতে না পারলে হংসরাজ নদীতে বের হওয়া অসম্ভব। ভুল করলে সোজা গিয়ে কাগা দোবেকীর কোস্টগার্ড অফিসের সামনে বের হয়ে যাবো। কিছুতেই তা করা যাবে না। তাহলে আমাদের কর্মকান্ড জানাজানি হয়ে যাবে। অন্য কোনো দস্যুদলের সামনে পড়লে হতে পারে আরও বড় বিপদ।
সোহাগ বেশ কসরৎ করে ম্যাপ আঁকছিলেন। ভাঙ্গা হাতে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ম্যাপ। ঠিক মন দিয়ে দেখছিলাম না। কারণ জিপিএস ব্যবহার করে ফোনের ম্যাপ ধরে বের হবো। তবুও হংসরাজ পর্যন্ত যাওয়ার মতো করে নির্দেশনা দেয়া ম্যাপটি পকেটে রাখলাম। কোন পকেটে রাখলাম তা অবশ্য মনেও ছিলো না।
রাত সোয়া ১২টার পর পর ট্রলার ভাসালাম। রাস পূর্ণিমার গোন। অর্ধেক চাঁদ আকাশে। জোয়ারের পানি কলকল শব্দে বয়ে যাচ্ছে। সবগুলো ট্রলার টেনে বের করা হলো। ঝাইলোর খাল থেকে আমরা যাবো পূর্ব দিকে। দস্যুরা যাবে পশ্চিমে। কোথায় যাবে তারাই জানে।
বেলায়েত সরদার, সুজন, ফারুক ভাই, বায়েজিদ ইসলাম পলিন, আহসান রাজীব আর আমি। ছয়জনের অবস্থাই বেহাল। তার মধ্যে গত তিন রাতে এক সেকেন্ডের জন্যও ঘুম হয়নি আমার। ইঞ্জিন চালু হলো। ট্রলার ঘুরিয়ে আমরা রওনা দিলাম পূর্ব দিকে। লম্বা জটিল পথ পারি দিতে হবে আমাদের। ভুল করার কোনো সুযোগ নাই।