ভরসা রাখলেন RAB এর গোয়েন্দা প্রধান | রূপান্তরের গল্প ৩৩ | Rupantorer Golpo 33 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৩৩ : একজন সাংবাদিকের কাজ কী? দেশে এতো বিষয় নিয়ে কাজ করার থাকতে সুন্দরবন নিয়ে কেন সে পড়ে আছে? কেন বছরের পর বছর দস্যুদের আত্মসমর্পণ নিয়ে একই কাজ মোহসীন বার বার করছেন? বন উপকূলের সাংবাদিকদের একটি অংশ থেকে প্রথম উঠেছিলো প্রশ্নগুলো। বলা হতো দস্যুদের পৃষ্ঠপোষকতা করছি আমি। সেই কথা একান ওকান হয়ে ঢাকার সংবাদ কক্ষগুলোতেও চলে আসলো। নেহায়েত আমার অফিসের সিনিয়ররা ভরসা রাখলেন। অসংখ্য কান কথার মধ্যেও সমর্থন দিলো আমার নিউজরুম যমুনা টেলিভিশন।
মাস্টার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে চায়। সুন্দরবনের ত্রাশ, উপকূলের জেলেদের আতঙ্ক মাস্টার বাহিনীর খবরটি নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছিলো। যে রাতে সংবাদটি প্রচারিত হয় সে রাতেই চাউর হয়ে যায় বিষয়টি। সয়শ্লিষ্টরা শুধু সেই আবেদন প্রত্যাখ্যানই করেননি, আমাকে নিয়ে রীতিমতো অনুসন্ধানে নেমে গেলেন।
তখন আমি খুলনায়। রাত প্রায় ১২টা। জিরো পয়েন্টের একটি রেস্তোঁরায় বসেছি রাতের খাবার খাবো বলে। গভীর হতাশা কাজ করছে মনে। নিজেকে চোর চোর মনে হতে লাগলো। ভাবলাম এতো ঝুঁকি, এতো পরিশ্রম, এতো অপেক্ষার ফলাফল শেষ পর্যন্ত এই হলো? এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। অচেনা নাম্বার। তবে RAB এর নাম্বার। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কথা বললেন প্রতিষ্ঠানটির গোয়েন্দা প্রধান লে কর্নেল আজাদ (পরবর্তীতে জঙ্গীদের বোমা বিষ্ফোরণে নিহত হন)। কুশল বিনিময় হলো। তারপর জিজ্ঞেস করলেন আসলে কি দস্যুদলটি আত্মসমর্পণ করবে? আমার মতো করে উত্তর দিলাম। বললাম আপনারা তো প্রত্যাখ্যান করেছেন। কর্নেল আজাদ বললেন, কে কী বললো দেখার দরকার নাই, আপনি কাজ আগান।
মরুভূমির মধ্যে যেন বৃষ্টি নামলো। চরম হতাশার মাঝে হঠাৎ করেই আশার আলো জ্বললো। জিজ্ঞেস করলাম আপনাদের কার সঙ্গে আলোচনায় থাকবো? খুলনা RAB তো রাজি না। উনি বললেন, বরিশাল করবে কাজ। বললাম, আমাদের এই আলোচনা আমাদের মধ্যেই থাকুক। আর কেউ যেন জানতে না পারে।
RAB এর গোয়েন্দা প্রধান জানালেন যে আমার বিষয়ে তিনি বিস্তারিত খোঁজ নিয়েছেন। আমাকে বিশ্বাস করেন তিনি। আর আভিযানিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি আত্মসমর্পণও যে দস্যুতা কমাতে কাজ করবে সেবিষয়েও একমত হলেন। বললেন, একসাথে কাজটি করতে পারলে সুন্দরবন একদিন দস্যুমুক্ত হবে।