রুপান্তরের গল্প ৩৮ | Rupantorer Golpo 38

চোরের মতো ঢুকেছি সুন্দরবনে | রুপান্তরের গল্প ৩৮

চোরের মতো ঢুকেছি সুন্দরবনে | রুপান্তরের গল্প ৩৮ | Rupantorer Golpo 38 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রুপান্তরের গল্প ৩৮ : নদী পথে মংলা ছাড়তে প্রথমে পড়ে ঢাংমারী। জায়গার নাম, খালেরও নাম ঢাংমারী। পশুর নদীর পশ্চিমে এখান থেকে সুন্দরবনের শুরু। বনে নামার সময় জেলেরা ঢাংমারী ফরেস্ট স্টেশন থেকে অনুমতি নেয়। স্টেশনটি সজাগ থাকে ২৪ ঘন্টা। আমরা কিন্তু সেখানে যাবো না। বরং তাদের চোখ এড়িয়ে এগুতে হবে।

ঢাংমারী থেকে কেউ ডাকলো না। এরপর করমজল বন টহল ফাঁড়ী। সেখানে সবাই ঘুম। আরেকটু দক্ষিণে নামার পর জোংড়া খাল। মুখেই বন বিভাগের অফিস। জায়গাটি অভয়াশ্রম হওয়া সেখানেও টহল থাকে বেশ কড়াকড়ি। বনকর্মীরা সেখানে টহলে। জোংড়ার সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমার পরিচিত। কাছে যাওয়ার পর আমাকে দেখে ছেড়ে দিলেন তাঁরা। বললেন, শিকারীদের তৎপরতা বেড়েছে। তাই পুরো বনে কড়াকড়ি চলছে। এগিয়ে যাচ্ছি পশুরের পশ্চিম পাশ ধরে, জঙ্গল ঘেঁসে। এবার মরাপশুর ফরেস্ট অফিস। নদীতে, নোঙ্গর করা বন বিভাগের ট্রলার। সেখানে বন বিভাগের পরিচিত কেউ নাই। বেলায়েত সরদার বললেন দাঁড়ানো যাবে না। এতোবার বিরতি দিলে চাইলেবগী যাওয়ার আগে জোয়ার এসে যাবে। উজান ঠেলে আগাতে আগাতে দিনের আলো ফুটবে। সবকিছুই ঝুঁকিতে পড়ে যাবে তখন।

কাছাকাছি আসতেই টর্চ এর ইশারা। আমাদের ডাকা হচ্ছে। আমরা ট্রলারের গতি বাড়িয়ে দিলাম। এবার আর দাঁড়াবো না। আমাদের ধাওয়া করলো মরাপশুর বন টহল ফাঁড়ীর ট্রলার। কী করি? অবশ্য রাতের বেলা ধাওয়া করে সহজে ধরতে পারবে না আমাদের। লিভারে টান দিলাম টান। সেবার দেখলাম বেলায়েত সরদারের খেলা। ফরেস্টের ট্রলারকে রীতিমতো ঘোল খাইয়ে অনেক দূর চলে গেলাম।

এবার পশুর নদীর পূর্ব পাশ ধরে এগুচ্ছি। জয়মনিরঘোলের খাদ্য গুদাম বা সাইলো পেরিয়ে সামনে সেলা নদী। তারপরই নন্দবালা। সেখানে আরেকটা ফরেস্ট অফিস আছে, আছে কোস্টগার্ডের একটি ভাসমান পোস্ট। মহা মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। বললাম আবার মাঝ নদীতে যেতে হবে। সবার চোখ এড়াতে হলে মাঝ নদী ছাড়া উপায় নাই।

আধা ঘন্টা চলার পর হারবাড়িয়া। বন বিভাগের এই অফিস বামে রেখে দ্রুত এগুচ্ছিলাম। পূর্ণিমার গোন এ ভাটার স্রোত বলে কথা! আবার মাঝ নদী ধরলাম। মংলা বন্দরে আসা জাহাজ থেকে কার্গোতে ক্লিংকার নামানো চলছে। তাদের পাশ কাটিয়ে আরও এক ঘন্টা চললাম। ভদ্রা নদী মুখে আসতে ট্রলারের ইঞ্জিন থামিয়ে দিলেন সরদার। এখানকার ফরেস্ট অফিসটি পার হয়েই চাইলেবগী খাল। শেষ ভাটার স্রোতে ভেসে চললাম আমরা। ভদ্রা অফিসটা অতিক্রম করে আবার চালু হলো ইঞ্জিন। আধা ঘন্টার পথ পেরিয়ে নদীর পশ্চিমে চাইলেবগী। ওই খালেই দেখা হবে দস্যুদল মাস্টার বাহিনীর সঙ্গে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top