দস্যুদের আস্তানা তখন পাশাখালীতে | রূপান্তরের গল্প ৪০ | Rupantorer Golpo 40 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৪০ : গুনগুন শব্দটি কাছে এগিয়ে আসছে। চিনতে পারছি! এবার জানে পানি ফিরে পেলাম। মাস্টার বাহিনীর ট্রলার এটা। সেই পরিচিত শব্দ! ট্রলারটির ইঞ্জিন ছয় সিলিন্ডারের। শুনেছি ২৩০ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিনটি বেশ শক্তিশালী। পরে দেখেছি কতো দ্রুত চলে সে ট্রলার। আর এমন ভাবে সাইলেন্সার লাগানো যে চলার সময় পানি সরার শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না।
ট্রলার ভিড়লো আমাদের পাশে। এবার বেশ বিরক্তিসহ বললাম, দেরি করলেন কেন আপনারা? মাস্টার একটা হাসি দিয়ে আমাকে তুলে নিলেন। যেতে যেতে জানলাম যে ওখানে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় দেরি হয়েছে। তাদের সোর্সকে নৌকা বেয়ে গিয়ে খবর দিতে হয়েছে।
চাইলেবগীর খালে ঢুকতেই দুটি নৌকা দেখেছিলাম মনে আছে? ওরা জেলে নিশ্চিত। কিন্তু সাধারণ জেলে নয়। ওরা দস্যু মাস্টার বাহিনীর সোর্স। নৌকায় দুজন দস্যুও ছিলো। আমাদের ওই খালে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই খালের মুখে ছিলো তারা।
জলদস্যুরা অপেক্ষা করছিলো নিশানখালীর ভাড়ানীর ভিতরে। আমাদের অবস্থান থেকে নৌকায় আধা ঘন্টার পথ। সোর্সদের নৌকাদুটো আমাদের কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে। তারপর বিনা শব্দে ভাড়ানীতে ঢুকে পড়ে। বিস্তারিত জানানোর পর দস্যুরা ট্রলার নিয়ে রওনা দেয়।
সম্ভবত এ দফায় পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি তারা। সেজন্যই একটু সময় নিয়ে লোক পাঠিয়ে আমাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি করেছিলো মাস্টার বাহিনী। অন্যদিকে তাদের নিজেদের মধ্যেও ছিলো কিছু টানাপোড়েন।
দস্যুদের সেই ট্রলারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে আমাদের ট্রলারটি বাঁধা হলো। আমি মাস্টারের কেবিনে বসলাম। সশস্ত্র দস্যুরা ঘিরে রেখেছিলো আমাকে। ওদিকে পিছনে আমাদের ট্রলারের সবার ঘুম ভেঙ্গেছে। মামুন চা উঠিয়েছে। হাল ধরেছেন বেলায়েত সরদার। দস্যু দলের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাচ্ছি আমরা?
বেলমারীর ভাড়ানী ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। সরু খাল ধরে উঠলাম বড় নিশানখালী খালে। আধা ঘন্টা চলার পর বামের সরু আরেকটি খালে ঢুকলাম আমরা। মিনিট দশ চলার পর আরও সরু হয়ে আসলো খাল। দুই পাশের গাছগুলোর কারণে ইঞ্জিন বন্ধ করা হলো। তারপর সামনে পিছে নেমে পড়লো কয়েকজন দস্যু। সবাই মিলে টেনে-ঠেলে এগিয়ে নিচ্ছে ট্রলার। আকাশ তখন পরিস্কার। বড় নদীতে অর্ধেক জোয়ার। ছোট খালগুলোতে তখনও পানি ভরেনি। সেকারণেই ট্রলারদুটো ঠেলে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।
আবারও জিজ্ঞেস করলাম, যাচ্ছি কোথায়? মাস্টার বললেন, গেলেই বুঝতে পারবেন কোথায় যাচ্ছি! এভাবে প্রায় ৪০ মিনিট চললো। সরু খাল এবার একটু বড় হলো। দূর থেকে অনেক মানুষের কথাবার্তা কানে এলো। সেখানে আরও দুটি ট্রলার রাখা। বনদস্যুদের ট্রলার। পাশে সেই নৌকা দুটো।
পাশাখালী। আমরা সুন্দরবনের পাশাখালী ফরেস্ট অফিসের পিছনে। তার মানে দস্যুদলটির সঙ্গে আমাদের সময় কাটবে এখানেই। পাশাখালী পশুর নদীর তীরে একটি ছোট্ট খাল। চাইলেবগী খালের পরেই নদীর পশ্চিমে এর অবস্থান।