সারেন্ডার নিয়ে তীব্র চাপে পড়ে গেলাম! | রূপান্তরের গল্প ৪৭ | Rupantorer Golpo 47 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৪৭ : সারেন্ডারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে দস্যুরা। জঙ্গল এবং ডাঙ্গার কিছু মানুষের মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলো এ খবর। নানা ভাবে ভয়, হুমকি দেয়া হচ্ছিলো আত্মসমর্পণে আগ্রহীদের। এমন কী তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ভুল বোঝানো হচ্ছিলো! সারেন্ডার করলে তাদের ক্রসফায়ার দেয়া হবে, একজনও বাঁচবে না ইত্যাদি বলে তাদের ভঢ দেখানো হচ্ছিলো। কারা এই অপকর্মে ছিলো? লিখবো সময় করে।
ঢাকায় বসে দুশ্চিন্তা করছি আমি। ওদিকে বরিশাল RAB এর উপ অধিনায়কেরও ঘুম হারাম। সদর দপ্তর থেকে খুব চাপ আসছে। পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিলো তা না। তবে ভরসার জায়গাটি নড়ে চড়ে গেছে। আদনানের সঙ্গে দস্যুদলটির একটি বিষয় নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিলো। মেজর আদনানকে দেয়া একটি কথা তারা রাখেনি। সেই সংকট আমি কাটানোর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু আস্থায় চিঁড় ধরলে তো সহজে তা জোড়া লাগে না!
ওদিকে দুবলার চরের এক বড় ব্যবসায়ী পাগলের মতো ছুটোছুটি করছেন। বলছেন, এই সারেন্ডার হবে নাটক! মেজর আদনান পুরস্কার নেয়ার জন্য এসব করছেন। আর সাংবাদিক এসবের বিনিময়ে নিবে দুই কোটি টাকা নিবে দস্যুদের কাছে থেকে। অর্থাৎ দস্যুদের বাঁচিয়ে দিলে এই অর্থ আমার পকেটে আসবে।
এখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার সামাল দিবো? মেজর আদনানের সঙ্গে সমন্বয় করবো? দস্যুদের ভিতরে আস্থার সংকট কাটাতে কাজ করবো? নাকী মাঝ পথে সব ছেড়ে অন্য কাজে মন দিবো? আমাকে অসম্মানী করতে কয়েকটি পক্ষ্য তখন জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি মাস্টার বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ, সোহাগ আকন ও তাদের মুহুরি (ম্যানেজার) সুমনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতাম। ফোনে প্রায় প্রতিদিন যোগাযোগ হতো দস্যুনেতার পরিবারের সঙ্গে। মাস্টার কিছুতেই যেন মন পরিবর্তন না করে সেজন্য তার স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত কথা বার্তা বলতাম। যে যাই বলুক, ভিতরের খবর দস্যুনেতার স্ত্রী’র কাছে থেকে পেতাম। তাই যে যা বলুক সারেন্ডার যে হবেই তা আমি নিশ্চিত ছিলাম। আর সেজন্য শুধু মাস্টারকে বেঁচে থাকতে হবে।
২০১৬ সালের মে মাসের ১৯/২০ তারিখের ঘটনা। ফোন আসলো একটা। ওপাশ থেকে বললেন, সুন্দরবনের দস্যুরা কি আত্মসমর্পণ করবে? আসলেই করবে? নাকী নাটক করছে? RAB-এর সেই সময়ের গোয়েন্দা প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ। এবিষয়ে নিশ্চয়ই অনেকগুলো নেতিবাচক খবর ছিলো তাঁর কাছে।
এমনিতেই একটি মহলে মোহসীন উল হাকিম নামটি নিয়ে নেতিবাচক কথাবার্তা প্রচলিত ছিলো। তারা বুঝতো যে একমাত্র আমাকে বিতর্কিত করতে পারলেই বন্ধ হবে দস্যুদের আত্মসমর্পণ। বিভিন্ন দিক থেকে সেই চেষ্টা চলছিলো। অবশ্য কর্নেল আজাদ ছিলেন বিচক্ষণ। তাই কান কথা না শুনে সরাসরি জানতে চাইলেন। বললাম, দস্যুনেতার স্ত্রী আমাকে নিশ্চিত করেছে। আজাদ ভাই বললেন, তাহলে আর দেরি করা যাবে না। দ্রুত কাজ গুছিয়ে আনুন।
বরিশালে মেজর আদনানকে ফোন দিলাম। বেশ হতাশ তিনি। বললেন কিছু কী হবে? বললাম, চুড়ান্ত চেষ্টাটা করবো এবার। পরের ফোনটি দিলাম মাস্টার বাহিনীর নাম্বারে। প্রথম কলেই ফোন ঢুকলো, ধরলেন দলটির ম্যানেজার সুমন। বললাম মাস্টার ও সোহাগকে ফোনের কাছে আসতে বলেন, জরুরি কথা আছে…।
(ছবি: মাঝে মেজর আদনান কবীর, এক পাশে সহকর্মী বায়েজিদ ইসলাম পলিন, আরেক পাশে আমি)