বললাম, এমাসেই সারেন্ডার করতে হবে | রূপান্তরের গল্প ৪৮ | Rupantorer Golpo 48 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৪৮ : দলের মধ্যে বিভেদ তখন কেটে গেছে। সন্দেহভাজন সদস্যদের বের করে দিয়েছে তারা। শুধু বিশ্বস্ত কয়েকজন আছে। এক কথায় আত্মসমর্পনে আগ্রহীরাই তখন জলদস্যু মাস্টার বাহিনীতে আছে। সাগরে দস্যুতা ছেড়ে নিরিবিলি সময় পার করছে তারা। গভীর বনের গোপন কোনো খালে তাদের অবস্থান। একটি ট্রলার অর্থাৎ মাস্টার বাহিনীর মূল ট্রলারটি নিয়ে তারা বসবাস করছে। প্রতিদিন সময় করে সকাল ও বিকাল বেলা ফোনে খুলে জরুরি কথা সেরে আবার ফোন বন্ধ করে দেয়। তাই যখন তখন তাদের ফোন করে পাওয়া যেতো না।
এসময় সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য নতুন একটি ফোন নাম্বার ব্যবহার শুরু করে তারা। সেই ফোনে শুধুমাত্র বরিশাল RAB এর মেজর আদনান আর আমার সঙ্গে কথা হতো। সমস্যা ছিলো নেটওয়ার্ক নিয়ে। এমন এমন জায়গায় থাকতো তারা যে বড় গাছের মগডাল ছাড়া নেটওয়ার্ক পাওয়া যেতো না।
লে কর্নেল আজাদ ও মেজর আদনান তখন কিছুটা হতাশ। তাঁরা দস্যুদের কথার ওপর আস্থা রাখতে পারছিলেন না। দু’জনের সঙ্গে কথা শেষ করে ফোন দিয়েছিলাম বনদস্যু মাস্টার বাহিনীর সেই গোপন নাম্বারে। মগডালে বসে সুমন ধরলো ফোন। মাস্টার আর সোহাগ তখন পাশের খালের আগায় রাখা ট্রলারে। দ্রুত তাদের ডেকে আনতে বললাম।
জরুরি কথা আছে। এখনই কথা বলতে হবে। সুমন গাছের নিচে দাঁড়ানো কাউকে নির্দেশ দিলো। দস্যুনেতা মাস্টার আর সোহাগ আকনকে ডেকে আনতে বললো। ফোন রেখে অপেক্ষা করছি।
আধা ঘন্টার মধ্যে ফোন এলো। ওপাশ থেকে সোহাগ বললো, মাস্টার শিকারে গেছে। ফিরবে কখন? সোহাগ বললো, শিকার করেই ফিরবে। ট্রলারে খাবার নাই তেমন। মরা গোন বলে মাছও নাই। তাই হরিণ শিকার করেই চলছে তাদের খাওয়া দাওয়া। মাস্টার আসলে আবার ফোন দিয়েন। আসলে অবিশ্বাস তখনও যায়নি। মাস্টারকে সরিয়ে দেয়নি তো তারা? সোহাগ বেশ বুদ্ধিমান। আমার সন্দেহটা বুঝে ফেলেছে। বললো, দলের মধ্যে আর কোনো সমস্যা নাই ভাই। আমরা মিলেমিশে গেছি। আপনি জরুরি কথাটা বলেন।
সারেন্ডার করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। জবাবে সোহাগ বললো, আমরা রেডি। কবে করবো সারেন্ডার? ঢাকায় সব ঠিক হয়েছে? মানে RAB মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তারা আসবেন তো? আমার সাথে তখনও মন্ত্রীর কথা হয়নি। তবুও বললাম, এদিকে সব প্রস্তুত। আপনারা সময় দিলেই হবে। মে মাসের মধ্যেই সারেন্ডার করতে হবে। মাস্টার শিকার থেকে ফিরুক। তারা বসে সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করে জানাবে। বললাম, রাত হলেও সিদ্ধান্ত জানাবেন। তখন সকাল এগারোটা বাজে। মে মাসের ১৯/২০ তারিখ, ২০১৬।
দুপুরের পর পর ফোন আসলো। ওপাশে মাস্টার বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ। বললো, দলের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সারেন্ডার করবে তারা। কিন্তু হঠাৎ করে এতো তাড়া কেন? বললাম, অন্য কোনো বাহিনী এসে আপানাদের মেরে দেয়? যদি দলের মধ্যে আবারও ঝামেলা হয়? যদি দলের মধ্যে কেউ বিট্রে করে? আর এদিকে সরকারও আপনাদের বিষয়টি নিয়ে আর সময় দিতে চায় না। বললাম, আর একটিও দস্যুতার ঘটনা যেন না ঘটে। যে অবস্থায় আছেন সেই অবস্থায় আপনারা আত্মসমর্পণ করবেন। আপনাদের অস্ত্র-গুলিগুলো জড়ো করেন। সদস্যরা সবাই মিলে আবারও বসেন। যারা সারেন্ডার করবে শুধু তাদেরকেই রাখবেন। অস্ত্র আর গোলাবারুদগুলো একটাও বাঁকী রাখা যাবে না। গুলির খোসাগুলোও সব জমা দিতে হবে। মাস্টার বাহিনী রাজি। মাথার উপর থেকে যেন পাহাড় সরে গেলো!