রূপান্তরের গল্প ৫০ | Rupantorer Golpo 50

দস্যুতার সুবিধাভোগীরা তখন নড়েচড়ে বসছিলো | রূপান্তরের গল্প ৫০

দস্যুতার সুবিধাভোগীরা তখন নড়েচড়ে বসছিলো | রূপান্তরের গল্প ৫০ | Rupantorer Golpo 50 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৫০ : দস্যুদলটির ভিতরে তখন সবচেয়ে স্পর্শ্বকাতর সময় চলছে। বিরাট বড় সিদ্ধান্ত। তবে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। বরিশাল RAB এর মেজর আদনানের ওপর তাদের আস্থা তখন শতভাগ। জলদস্যুদের সেই সময়ের কার্যকলাপে আদনানও আশ্বস্ত। আমিও পুরোপুরি ভরসা করেছি দস্যুনেতা মাস্টার আর তার সহযোগীদের প্রতি। তারপরও কিন্তু থেকেই যায়। তাই প্রতি মূহুর্তেই আশা-নিরাশা মনের মধ্যে রেখে কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছিলাম। জানতাম এই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে আমার চেষ্টা বিফলে যাবে, তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে আমার ব্যক্তি ইমেজের।

আমি কখনও ভাবতাম না যে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণই দস্যু নির্মূলের একমাত্র মাধ্যম। বরং এদের নির্মূলে প্রশাসনের কঠোর তৎপরতাও কাজ করছে। অভিযানে অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়া জলদস্যু বনদস্যুদের আর ফিরে আসার পথ নাই। হয় মরতে হবে না হয় সারেন্ডার। কিন্তু সেই সারেন্ডারের পথ তখন বলা যায় বন্ধ ছিলো। একটানা দস্যুবিরোধী অভিযান, বন্দুক যুদ্ধ, গ্রেফতার আর মামলার ভয়ে দস্যুদের কেউ সারেন্ডারের সাহস পাচ্ছিলো না। অন্য দিকে সেই সুযোগও আনুষ্ঠানিক ভাবে দেয়া হচ্ছিলো না সরকারের পক্ষ্য থেকে।

ছয় বছর ধরে দস্যুদের যেমন বুঝিয়েছি তেমনি সংশ্লিষ্টদেরও বোঝানোর চেষ্টা করেছি। দস্যুরা রাজি হলেও সংশ্লিষ্টদের রাজি করানো আমার কাছে ছিলো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে রাজু বাহিনী ও ইলিয়াস বাহিনীর আত্মসমর্পণের উদ্যোগ সে কারণে ভেস্তে যায়। তখন মন খারাপ করেছি। কিন্তু হাল ছাড়িনি। জানতাম, লেগে থাকলে কখনও না কখনও সফলতা আসবে। আর সেই সফলতায় সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হতে পারে। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হলে পুরো উপকূলের জেলেদের জীবন নিরাপদ হবে, নিরাপদ হবে বনের প্রাণবৈচিত্র।

বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ নিয়ে সেই শুরু থেকেই বিরোধীতা করছিলেন ব্যবসায়ী। ভিতরে ভিতরে তারা মনে হয় আতঙ্কিত ছিলেন। সেই সঙ্গে কাঁকড়ার ব্যবসায়ীরাও যে সারেন্ডারের বিরোধীতা করছিলেন তা জানতাম না। পরে জেনেছি মাছের চেয়ে বড় টাকার কারবার কাঁকড়ার ব্যবসায়। কাঁকড়া শিকারীদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে বন উপকূল জুড়ে যে সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেটটা চেপে বসে আছে তা টের পেতে একটু সময় লেগেছিলো। যাই হোক, অতি গোপনে চলছিলো প্রথম সারেন্ডারের গোছগাছের কাজ। RAB এর সংশ্লিষ্টরা, জলদস্যু দল আর আমি ছাড়া কাউকে বিষয়টি জানতে দেয়া হয়নি। বরং দস্যুদলের সবাইকে কিছু বিভ্রান্তি ছড়াতে বলেছিলাম। তাই আসলে কী হতে যাচ্ছে সেবিষয়ে সবাই বুঝতেও পারেনি।

২৮ মে সারেন্ডার। সেই অনুযায়ী কাজ এগুলো। আমি রওনা হবো দুই/তিন দিন আগে। তারপর ২৭ তারিখ মধ্যরাতে RAB এর হেফাজতে আসবে দস্যুরা। পরের সকালে অনুষ্ঠান হবে মংলার ফুয়েল জেটিতে। মাঝখানে মাত্র কয়কটা দিন। এতো বছর অপেক্ষা করলাম। অথচ ওই কয়টা দিন যেন কাটছিলোই না।

(ছবি: সুন্দরবনের জলদস্যুদের ট্রলার)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top