বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিলো একটি মহলের | রূপান্তরের গল্প ৫২ | Rupantorer Golpo 52 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৫২ : ফোন করলেন আমার এক পুরনো সোর্স। কুশল বিনিময় হলো। তারপর জানতে চাইলেন ভিতরের খবর কিছু জানি কী না! ভাবলাম সারেন্ডারের খবর কি ফাঁস হয়ে গেলো? জিজ্ঞেস করলাম কীসের খবর খুঁজছেন? বললেন, মাস্টার বাহিনীর ভিতরে গন্ডগোল লেগেছে, গোলাগুলি হয়েছে, দলটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে, কয়েকজনকে উঠিয়ে দিয়েছে তারা। ঘটনার যে বর্ণনা দিচ্ছিলেন সেটা ভয়াবহ। কিন্তু তার সাথে আমার কাছে থাকা তথ্যের কোনো মিল নাই। ঘন্টা খানেক আগেই মাস্টার বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা হলো। ওদিকে সব ঠিকঠাক! তার মানে আমার কাছে থেকে কথা বের করতেই ফাঁদ পেতেছিলেন সেই সোর্স। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স ছিলেন তিনি, আবার দম্যুদলের খবরও একান ওকান করতেন তিনি। এক সময় আমাকেও সহযোগিতা করেছেন।
মংলার এই ব্যক্তিকে দেখতাম সারাদিন ধবধবে সাদা শার্ট পড়ে ঘুরে বেড়াতে। কখনও সুন্দরবনে যান না কিন্তু বনের ভিতরে সারা বছর তাঁর মাছের ব্যবসা চলে। এই সোর্সরা কাজের চেয়ে অকাজ বেশি করতেন। আর বিভ্রান্তি ছড়াতেন পুরো উপকূল জুড়ে। ভয় ছড়িয়ে নিজের ব্যবসাটা চালিয়ে নিতেন। তাদের পকেটে টাকা ঢুকতো সারা বছর। দস্যুতা টিকিয়ে রাখার পিছনে এই সোর্সদের ভূমিকা ছিলো বেশি, দস্যুতার সুবিধাভোগীও ছিলো এরা।
সেই সোর্সকে কিছু বুঝতে দেয়া যাবে না। কিছুতেই না। সারেন্ডারের উদ্যোগ ভেস্তে দেয়ার জোর চেষ্টা চলছে। কারা করছে জানি। এই সোর্স তাদেরই লোক। কাজেই ধরা দেয়া যাবে না, কোনো তথ্য দেয়া যাবে না। বললাম, আপাতত ওই দস্যুদলের সাথে যোগাযোগ নাই। উল্টো তাকে বিভ্রান্ত করলাম। বললাম, বর্ষা মৌসুম অর্থাৎ ইলিশের মৌসুম শেষ করার আগে সারেন্ডার করবে না তারা। এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে গেলে আমাদের কাজ সহজ হবে। সত্যি সত্যি সেই কৌশল কাজে এসেছিলো।
২৬ মে সকাল সকাল ঢাকা থেকে রওনা দিলাম আমরা। বরাবরের মতো গোপন মিশন। দুই/তিনজন ছাড়া আমার সহকর্মীরাও জানতেন না বিষয়টি। সঙ্গী বায়েজিদ ইসলাম পলিন। তখন পদ্মা নদী পার হতে হতো ফেরিতে। সময়ও লাগতো অনেক। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ঘাট পার হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিরতি নিলাম। আধা ঘন্টা পর পর জঙ্গলের ভিতর থেকে ফোন দিচ্ছে মাস্টার আর তার সহযোগীরা। পথে বাগেরহাট থেকে যোগ দিবেন সহকর্মী ইয়ামীন ভাই, সাতক্ষীরার রাজীব আর মংলার সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন। আর মংলা থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দিবে দুইজন জলদস্যু।