রূপান্তরের গল্প ৫৪ | Rupantorer Golpo 54

ছুটলাম পশুর নদীর মাঝ দিয়ে…!! | রূপান্তরের গল্প ৫৪

ছুটলাম পশুর নদীর মাঝ দিয়ে…!! | রূপান্তরের গল্প ৫৪ | Rupantorer Golpo 54 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৫৪ : কোথায় দেখা হবে তাদের সাথে? মাস্টার বললেন আমি না কী চিনি সেই জায়গা। আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি। প্রয়োজনও নাই জানার। সময় এবং পরিস্থিতি আমাদের নিয়ে যাবে সুদূর সুন্দরবনের গহীনের কোনো গোপন জায়গায়।

পশুর নদী তখন আমার কাছে খুব পরিচিত এক নদী। উত্তাল সেই নদীর লোনা পানি তখন আমাকে সাহস দিতো। জোয়ার ভাটায় ওই নদীর স্রোতে নৌকায় করে ভেসে বেড়ানোটা খুব উপভোগ করতাম। যদিও সেই যাত্রার পরতে পরতে ছিলো ভয়ঙ্কর সব দুশ্চিন্তা। মাথার ভিতরে বিশাল চাপ। কী হতে যাচ্ছে জানি না। এই সফরে নেহায়েত সুন্দরবনের দস্যুদের সঙ্গে দেখা হবে না, শুধু সংবাদও করবো না। সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দস্যুদল- মাস্টার বাহিনীকে বন থেকে উঠিয়ে আনবো, তুলে দিবো Rapid Action Batellion- RAB এর হাতে। আত্মসমর্পণ করবে প্রথম দস্যুদল।

মংলার ফেরি ঘাটে আমরা ব্যাগ-বোচকা নিয়ে দাঁড়ানো। বেলায়েত সরদারের ট্রলার ভিড়লো মিনট দুই পর। সঙ্গে দুইজন চিহ্নিত বনদস্যু সোলাই ও সুমন। সবার আগে এই দু’জনকে ট্রলারে উঠানো হলো। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মাল-পত্র নিয়ে আমরা উঠে পড়লাম ট্রলারে। ভাটা শুরু হতেই আশেপাশে অনেক নৌযানের চলাফেরা শুরু হয়েছে। আমরা মিশে গেলাম সেই ভীড়ে।

মংলা খাল থেকে বের হয়ে উঠলাম পশুর নদীতে। বরাবরের মতো সোজা মাঝ নদীতে পৌঁছে দক্ষিণের পথ ধরলাম। তখনও জানি না গন্তব্য কোথায়! বেলায়েত সরদার জিজ্ঞেস করলেন কোথায় যাচ্ছি আমরা? একই প্রশ্ন করলাম সোলাইমানকে। বললো, আগের জায়গায়। বুঝতে পারলাম, যাচ্ছি পাশাখালী। এবার সফরসঙ্গী একটু বেশি। বায়েজিদ ইসলাম পলিন, সাতক্ষীরার সহকর্মী আহসান রাজীব, বাগেেহাটের ইয়ামিন আলী, মংলার সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন। বেলায়েত সরদারের ট্রলারে ছিলো দুই জন সহযোগী।

সুন্দরবনে লুকিয়ে ঢোকা খুব কঠিন। আগেও লিখেছি, সুন্দরবনে ঢুকতে হলে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। কেউ যাতে আমাদের আটকাতে না পারে বা অনুসরণ করতে না পারে সেজন্য খুবই সতর্ক থাকতে হতো। মংলা ছেড়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি মাঝ নদী দিয়ে। পশুর নদী তখন বেশ উত্তাল। ভাটার স্রোত বাড়ছে। দখিনা বাতাস বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। উল্টো স্রোতের সঙ্গে সংঘর্ষে বড় বড় ঢেউ জাগছে। আমাদের ট্রলারের সেই ঢেউ কেটে কেটে আগাছে। চাঁদনী রাতে সবকিছু পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। সুকানি হাতে একটার পর একটা ঢেউ কাটিয়ে ট্রলার চালাচ্ছেন বেলায়েত সরদার। পাশে দাঁড়ানো আমি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top