সবকিছু ঠিকঠাক তো? | রূপান্তরের গল্প ৬৬ | Rupantorer Golpo 66 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৬৬ : দস্যুদের কাছে পৌঁছে গেছি, নিরাপদে আছি, খবরটা দিতে হবে বরিশাল RAB-এর মেজর আদনানকে। জানাতে হবে প্রতিষ্ঠানটির গোয়েন্দা প্রধানকেও। সেই হিসাবে তাঁরা সুন্দরবনে আসার প্রস্তুতি নিবেন। রাতেই সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দস্যুদল মাস্টার বাহিনীকে তুলে দিবো তাদের হাতে। পাশাপাশি আমার পরিবারকেও জানাতে হবে যে ঠিকঠাক পৌঁছে গেছি, নিরাপদে আছি। কিন্তু দুই ফোনের একটাতেও তো নেটওয়ার্ক নাই। কথা বলবো কী করে? আশে পাশে কোথায় ফোনের নেটওয়ার্ক পাবো? কোন গাছে উঠতে হবে এবার? সোহাগ আকন বললো, পুকুর পাড়ে নির্দিষ্ট জায়গায় গেলেই নেটওয়ার্ক পাবেন।
পাশাখালী ফরেস্ট অফিসের সামনে একটি পরিত্যক্ত ওয়্যারলেস এর টাওয়ার ছিলো। তার দিয়ে চারপাশে টানা দেয়া। সেই তারের সাথে ফোন ঝুলিয়ে রাখলে একটু আধটু নেটওয়ার্ক আসে।বার বার ডায়াল করতে করতে এক বার ফোন ঢুকে পড়ে। লাউড স্পিকার চালিয়ে বলতে হয় কথা। হাতের স্পর্শ্ব পেলেই নেটওয়ার্ক চলে যায়। কী যে একটা অবস্থা। মোবাইল ফোনটা ঝুলিয়ে সাথে এয়াফোন লাগিয়ে নিলাম। তখনও ব্লু-টুথ প্রযুক্তির এয়ারফোনের প্রচলন ছিলো না। তাই তারসহ এয়ারফোন লাগিয়ে কোনো রকমে কথা শুরু করলাম।
মেজর আদনান ফোনে। স্বভাবতই বেশ উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। জানতে চাইলেন কী অবস্থা আমার! বললাম, সব ঠিকঠাক। তোমরা তৈরি হও। আজ ২৭ মে সকাল। তোমরা রাতের জোয়ারে মংলা থেকে রওনা দিবে। ঘন্টা তিন/চার এর মধ্যে ভদ্রা পার হবে। তারপর মাঝ নদীতে লঞ্চ নোঙ্গর করবে। বললাম, আমাদের মধ্যে আর যোগাযোগ নাও হতে পারে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তোমরা রওনা দিবে। সঙ্গে মংলায় আমার টেলিভিশনের লাইভ টিম থাকবে যন্ত্রপাতিসহ। তাদের নিয়ে আসবে।
আদনান জিজ্ঞেস করার আগেই বললাম মাস্টার বাহিনীর দস্যুরা তাদের কথা রেখেছে। ওদের নিয়ে অস্ত্র-গুলিসহ তাদের নিয়ে আমরা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যাবো জায়গা মতো। পাশে দাঁড়ানো দস্যু সোহাগ আকনের সাথে কথা বলিয়ে দিলাম। শুধু নিজেদের লোকেশনটা বললাম না।
২৭ মে ২০১৬। সারাদিন ওখানেই থাকবো। নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ঝাইলোর খালের দুর্ঘটনা আবার ঘটানো যাবে না। অবশ্য দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সারেন্ডারের মত যাতে না পাল্টায় সেজন্যই আগে থেকে দস্যুদের স্ত্রী-সন্তানদের সেখানে নিয়ে আসা হয়। আবার আত্মসমর্পণের সময় অন্য কিছু ঘটতে পারে সেই শংকাও ছিলো দস্যুদের মনে। সেদিক থেকেও পরিবারের উপস্থিতি প্রয়োজন ছিলো। মাস্টার বাহিনীর দস্যুদের নিয়ে RAB (Rapid Action Batellion) এর অন্য কোনো পরিকল্পনা নাই আমি নিশ্চিত। কিন্তু জলদস্যুদের এই আস্থা শতভাগ থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। জলদস্যু ধরা পড়লেই ক্রসফায়ার- সেই শংকা কাটাতে সময় লেগেছিলো।
টাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরের ফোনটি দিলাম গোয়েন্দা প্রধান লে কর্নেল আজাদকে। বললেন.. মোহসীন ভাই, আপনার ওপর শতভাগ আস্থা আছে। নিরাপদে দিনটি পার করেন। রাতে মেজর আদনানের নেতৃত্বে আমাদের টিম যাবে সুন্দরবনে। পরদিন ২৮ মে সকাল দশটার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আমরা হেলিকপ্টারে করে পৌঁছে যাবো মংলায়। বললাম, আপনাদের হাতে দস্যুদের তুলে দেয়ার সময় আমরা লাইভ করবো। সরাসরি যমুনা টেলিভিশনে প্রচার হবে সেই দৃশ্য। বললেন, কোনো সমস্যা নাই। শুভকামনা জানিয়ে ফোন রাখলাম। শেষে ঢাকায় আমার স্ত্রী’র কাছে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানালাম। বললাম, নিরাপদে আছি।
এদিকে জোয়ার হয়েছে অনেকটা। জেটিতে রাখা আমাদের ট্রলার ভেসে গেছে। ততোক্ষণে মামুনের ঘুম ভেঙ্গেছে। ট্রলারের ডেক-এর ছাদে বসা পলিন আর ইয়ামীন আলী। সাতক্ষীরার সহকর্মী রাজীবকে দেখছিলাম না। সম্ভবত তখনও ঘুম। মামুন ও অন্য সহযোগীদের বললাম ট্রলারটা সরিয়ে নিতে। একদম চোখের আড়ালে নিতে হবে, দস্যুদের ট্রলারের পাশে নোঙ্গর করতে হবে। তারা রওনা হলো।
মাস্টার বাহিনীর বাকী সদস্যরা তখনও তাদের ট্রলারে। পিছনের খালে রাখা সেই ট্রলার। আমরা এসেছি ঘন্টা দেড় হয়ে গেলো। তবুও তারা সামনে আসছে না! বিষয়টি কী মাস্টার? বিষয় তো একটা কিছু আছে ভাই, উত্তর দিলেন দস্যুনেতা! জানতে চাইলাম, সবকিছু ঠিকঠাক তো?