বন্দুকের চেম্বার ভর্তি গুলি চলছে বাকবিতন্ডা! | রূপান্তরের গল্প ৭২ | Rupantorer Golpo 72 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৭২ : চাপানো অস্ত্রগুলো বের করে আনেন। কোনো কথা শুনতে চাই না। কথাগুলো বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালাম। দস্যুরা একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে। আমি কৌশলগত কারণে বের হবো এখন। ততোক্ষণে ঝড়-বৃষ্টি থেমে গেছে। চারপাশে ঝকঝকে রোদ। গাছের পাতাগুলো চকচক করছে। সবুজে সবুজে একাকার চারপাশ। দারুণ এক পরিবেশ।
দস্যুদের রেখে বের হয়ে আসলাম মূলত তাদের একটু দম নেয়ার সুযোগ দিতে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুক। নিশ্চয়ই সিদ্ধান্তে আসবে তারা।
বাইরে বেরিয়ে দেখি মাস্টারের স্ত্রী, তার মেয়ে, সোহাগের স্ত্রী আর তাদের ছেলে পুকুর পাড়ে বসা। গল্পে বসলাম তাদের সাথে।
মাথাটা কাজ করানোর চেষ্টা করছিলাম। আগের রাত জাগা, একটার পর একটা ঝুঁকি আর ঝক্কি, নিয়ন্ত্রণের বাইরে অনেক কিছুই চলে যাচ্ছে, আবার নিয়ন্ত্রণে আসছে। পরিস্থিতি ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। এখন নতুন পরিস্থিতির সামনে আমি।
সামনে যাই আসুক আমাকেই মোকাবেলা করতে হবে। মাথা ঠান্ডা রাখাটা তখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। একই সাথে দস্যুদের মাথাও ঠান্ডা রাখতে হবে। কারণ লুকানো অস্ত্র বের করার জন্য সর্বোচ্চ চাপ দিয়ে ফেলেছি আমি।
এর মধ্যে বুঝে গেছি যে বেশ কয়েকটি অস্ত্র, কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি লুকানো আছে সুন্দরবনের কোনো জায়গায়। দস্যুনেতা মাস্টারের মতের বিরুদ্ধে সেটা করেছিলো অন্যরা। আর সকাল থেকে সেকথা বলার সুযোগ খুঁজছিলেন। না পেরে চোখের ভাষায় বুঝিয়েছিলেন। চোখ কান আর ষষ্ঠ ইন্ত্রীয় খোলা রাখতাম বলে তা টের পেতে সমস্যা হয়নি।
দস্যু জগতে অস্ত্র লুকিয়ে রাখাকে বলে “চাপানো”। অর্থাৎ মাটির নিচে চাপিয়ে রাখা। ড্রাম বা পলি পাইপের ভিতরে লুব্রিকেন্ট দিয়ে বেঁধে অস্ত্রগুলো মাটির নিচে বা খালের নিচে কোথাও চাপা দেয়া থাকতো। খাল বা বড় কোনো গাছকে নিশানা করা হতো। যাতে অনেক দিন পরে গিয়েও জায়গাটা খুঁজে পাওয়া যায়! শুধু যে চাপায় সেই জানে সে ঠিকানা। সাধারণত দস্যুদলের সরদার বা তাদের একান্ত বিশ্বস্তরা এই কাজটি করতো। অনেকে বলতো, ক্রসফায়ারে যাওয়া দস্যুনেতাদের অনেকেরই অস্ত্র সুন্দরবনে চাপানো আছে। কিন্তু কোথায় সেটা অন্য কেউ জানে না! জানলে এখনও সুন্দরবন থেকে কয়েকশ’ বন্দুক বের করা সম্ভব।
বন অফিসের ভিতরে চারজন দস্যু বসেছে আলোচনায়। মাস্টার, সোহাগ, সোলাইমান ও ফজলু। মনে হচ্ছিলো যে অস্ত্র বের করা না করা নিয়ে বড় ঝামেলা হবে! উৎকন্ঠার সময় শুরু হলো আবার! সুন্দরবনের দস্যুদের হাতে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো সবই অবৈধ। আর সেই অস্ত্রের দাম অবৈধ অস্ত্রের বাজারের তুলনায় কয়েক গুন বেশি হয়। সারেন্ডারের সময় তাই কিছু অস্ত্র বনে রেখে গেলে পরে ভালো দামে বিক্রি করা যাবে! আবার যদি আত্মসমর্পণ সফল না হয়, দস্যুতায় ফিরে আসতে হয় তবে সেই অস্ত্রগুলো আবার নামাবে দস্যুতায়। তার মানে অনেক বড় বিষয়। আর লুকানো অস্ত্র-গুলিগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নিয়ে একমত হওয়া সহজ নয়। মতৈক্যে আসতে না পারলে কোত্থেকে যে কী হবে, কে জানে! সাতজন দস্যুর হাতে ভালো ভালো সব অস্ত্র, কোমড়ে শতাধিক গুলি ভর্তি পোসেস। গুলির চেম্বারগুলোও ভরা।
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভিতর থেকে কোনো আওয়াজ পাচ্ছি না। ফিসফিস করে তারা আলোচনা করছে। অনেক সময় হলো। আর বেশি সময় দেয়া যাবে না। এবার আমার চুড়ান্ত অস্ত্রটি বের করতে হবে!