একটা গুলির দাম ছিলো তিন হাজার টাকা! | রূপান্তরের গল্প ৭৯ | Rupantorer Golpo 79 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৭৯ : ধুম করে গুলি হলো। কেঁপে উঠলো চারপাশ! প্রতিদ্ধণি হয়ে ফিরে আসলো সেই শব্দ। সুন্দরবনে এমনিতে গুলির শব্দ বেশি দূর যায় না। তবে ফাঁকা ফায়ার করলে শব্দ অনেক দূর থেকে শোনা যায়। আর সেই বন্দুক যদি থ্রি নট থ্রি হয় তাহলে সেই শব্দ রীতিমতো আতঙ্ক ছড়ায়। সুন্দরবনের দস্যুদের সবচেয়ে প্রিয় অস্ত্র ছিলো থ্রি নট থ্রি। কার্যকারীতার দিক থেকে সবচেয়ে যুৎসই। কিন্তু পরের দিকে এসে এই বন্দুকের ব্যবহার কমে আসে। কারণ গুলি পাওয়া যেতো না।
পাশাখালী ফরেস্ট অফিসের সামনের সিঁড়িতে বসে গুলি চালালো মাস্টার। বললো, শেষ দিন আজ। আর তো গোলাগুলি করা হবে না। থ্রি নট থ্রির গুলি কই পান? দস্যু দলের প্রধান বললো, গুলি একটু কম পাওয়া যায়। তবে টাকা হলে গুলির অভাবও হয় না। জানালেন সবশেষ ১০০ গুলির একটি চালান এসেছে খুলনা থেকে। দাম নিয়েছে তিন লাখ টাকা!
থ্রি নট থ্রি বন্দুকের একটি গুলির দাম তিন হাজার টাকা? মানে একটা গুলি করলেন আর তিন হাজার টাকা চলে গেলো? আপনাদের অন্য বন্দুকের গুলি কতো করে কিনেন? সোহাগ এগিয়ে এসে বললো, গুলির দাম শুনে কী করবেন? বললাম কিছু করবো না। এমনি জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম।
বললাম, ডাকাতি করে যা কামান তার বেশির ভাগই তো চলে যায় অস্ত্র-গুলি কিনতে! তার মানে যারা এসব সরবরাহ করে তাদের তো বিরাট লাভ। সোহাগ বললো এক একটি বন্দুকের গুলি ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকায় কিনতে হয়। তার মানে হাজার হাজার গুলির দাম তো লাখ লাখ টাকা!
আপনি একটা গুলি করেন ভাই! বললাম, ছোট বেলায় বাবার বন্দুক দিয়ে গুলি করেছি। কিন্তু তারপর আর বন্দুক হাতে নেইনি। কথা বলতে বলতে আরেকটা গুলি বের করলো মাস্টার। লোড করতে গিয়ে পড়ে গেলো নিচে। হেঁতাল গাছ দিয়ে বানানো পথের নিচে ঝোপ-ঝাড় আর ঘাসে ভরা। নিচে পড়ে হারিয়ে গেলো গুলি। বললাম, আমার গুলি করার শখ নাই। আপনারাও করবেন না আর গুলি। প্রতিটি গুলি গণনা করে দিবেন আমাকে! মাস্টার বললো, বন্দুকগুলো হিসাব করে দিতে পারি। গুলির হিসাব করতে গেলে বেলা শেষ হয়ে যাবে!
বুঝলাম, তাদের সবগুলো বন্দুকের গুলি পাচ্ছি আমি। বন্দুকগুলোও প্রায় সবই হাতে আসলো বলে! গল্প করতে করতে নৌকা এসে ভিড়লো। আমার সহকর্মী ইয়ামীন ভাই বিজয়ীর বেশে উঠে আসলেন। বুঝলাম, নিশানখালীতে লুকিয়ে রাখা অস্ত্রগুলোও পাচ্ছি। তার মানে মোট পঞ্চাশটির বেশি অস্ত্র নিয়ে সারেন্ডার করতে যাচ্ছে সুন্দরবনের ত্রাশ- মাস্টার বাহিনী!
ওদিকে ফরেস্ট অফিসের পিছনের পুকুর পাড়ে চলছে অন্ত্রের মহড়া। সুলতান কাকা ব্যস্ত সেখানে। একটি একটি করে অস্ত্র জোড়া দিয়ে ঘাসের উপর সাজানো হচ্ছে অস্ত্রগুলো!