রূপান্তরের গল্প ৮৫ | Rupantorer Golpo 85

ফোন করতে উঠলাম গাছে, কথা বললাম ঝুলে ঝুলে | রূপান্তরের গল্প ৮৫

ফোন করতে উঠলাম গাছে, কথা বললাম ঝুলে ঝুলে | রূপান্তরের গল্প ৮৫ | Rupantorer Golpo 85 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৮৫ : দৌড়াতে দৌড়াতে ফরেস্ট অফিসে ফিরলাম। কিন্তু ততোক্ষণে পুরোই ভিজে গেছি। আষাঢ় মাসের বৃষ্টি বলে কথা। সুন্দরবন আর নদী খালের ভিতরে বৃষ্টি মনে হয় একটু বেশিই হয়। পানির ফোঁটাগুলোও বড় বড়। অবশ্য বৃষ্টিতে আমার সমস্যা হয় না, সয়ে গেছে। লোনা পানির ওই জলাবনে টিকে থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে ততোদিনে।

পাশাখালী ফরেস্ট অফিসের ভিতরে তখন হুলুস্তুল অবস্থা। চারপাশে যারা ছিলো সবাই ভিতরে। বাইরে অঝর বৃষ্টি। রান্নাঘরে পেঁয়াজ আর মরিচ কাটাকাটি চলছে। বড় গামলায় মুড়ি মাখা হবে। সরিষার তেল খোঁজা খুঁজি চলছে পুরো অফিস জুড়ে। বিকালের নাস্তা হবে। দৌড়ে একজন ট্রলারে গেলো। বৃষ্টি কোনো ব্যাপার না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তেল এর বোতল নিয়ে আসলো।

ওদিকে চুলা জ্বলছে আর নিভছে। ফরেস্ট অফিসের রান্নাঘরের চুলা। পুরো অফিসটিই জরাজীর্ণ। টিনের চালে অসংখ্য ফুটো। কোথাও কোথাও টিনও নাই। ঝরঝর করে পানি পড়ছে। সুন্দরবনে আষাঢ়ে বৃষ্টি দেখার অভিজ্ঞতা যাদের আছে শুধু তারাই বুঝবেন সেই বৃষ্টির দাপট। আবার বর্ষার এমন সৌন্দর্যেরও তুলনা হয় না।

ছাউনির নিচে থাকলেও প্রায় সবাই বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। এক কাপ চা খুব প্রয়োজন। কিন্তু চা আর হচ্ছে না, কারণ চুলাই জ্বলছে না। এগিয়ে গেলেন বেলায়েত সরদার। তাকে সহযোগিতা করতে সঙ্গে নিলেন ফরেস্ট ক্যাম্প এর ওসি সাহেব।

চুলার উপর পানি পড়লে জ্বলবে কেমনে? সরদারকে কিছু শুকনা কাঠ জোগাড় করে দিলেন ওসি সাহেব। তারপর মাত্র দশ মিনিটের ব্যাপার। চা জ্বললো চুলায়।

চা খেতে খেতে কমে আসলো বৃষ্টি। ততোক্ষণে সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। বিকাল বেলা মেজর আদনানকে ফোন দেয়ার কথা। পুকুর পাড়ের সেই টাওয়ারের নিচে নেটওয়ার্ক খুঁজলাম। কিছুতেই নেটওয়ার্ক পাই না। সোহাগ আকন বললো, ভাটার সময় নেট পাবেন না। কিন্তু ফোন তো দিতেই হবে। বরিশাল RAB এর উপ অধিনায়ক মেজর আদনান কবীরের সাথে কথা বলতেই হবে।

এবার গাছে উঠতে হবে। গড়ান বন পেরিয়ে গেলাম। সুন্দরী গাছের বন আছে খালের ধার দিয়ে। তারপর কিছুটা এগিয়ে গেলে একটি বড় বাইন গাছ। সেই গাছের উপর উঠে পড়লাম। ভারী শরীর নিয়ে গাছে সেই কাজ বেশ কষ্টের। কিন্তু উপায় ছিলো না।

ভাই, কী খবর আপনাদের? কোনো খবর পাচ্ছি না। ফোনেও পাচ্ছি না। দস্যুদের সবার ফোন বন্ধ! কী টেনশনে ফেললেন? এক নাগাড়ে কথা বলছেন আদনান। শুধু বললাম, আমি বেঁচে থাকলে মাস্টার বাহিনী সারেন্ডার করবে। জানালাম, এদিকের সবকিছু নিয়ন্ত্রণে। তোমরা কোথায়? রাতের জোয়ারে মংলা ছাড়বে বলে জানালেন আদনান। বললাম, কালকের প্রোগ্রাম ঠিক আছে তো? বললেন, সকালে কুয়াকাটায় একটা প্রোগ্রাম আছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। সেখান থেকে এগারোটার মধ্যে হেলিকপ্টারে করা মংলা পৌঁছাবেন মন্ত্রী। বললাম, গাছে ঝুলে ঝুলে কথা বলছি। ফোন রাখতে হবে। মংলা ছাড়ার সময় আমার লাইভ টিমকে সঙ্গে নিবে। রাতে দেখা হবে ভদ্রার নিচে পশুর নদীর মাঝখানে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top