রূপান্তরের গল্প ৮৬ | Rupantorer Golpo 86

ফরেস্ট অফিসের সামনে হরিণ শিকার! | রূপান্তরের গল্প ৮৬

ফরেস্ট অফিসের সামনে হরিণ শিকার! | রূপান্তরের গল্প ৮৬ | Rupantorer Golpo 86 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৮৬ : গাছ থেকে নামতে নামতে বুকটা ছিলে গেলো। কিছুতেই সামাল দিতে পারিনি। দুই হাতও কাটলো খানিকটা। শুধু RAB এর কর্মকর্তার সাথেই কথা বলেছি। নিজের পরিবারের কাউকে একটা ফোন দেয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু গাছে ঝুলে থাকার পরিবেশ ছিলো না। পরে জোয়ারের সময় পুকুর পাড়ে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে। তখন বলবো।

বৃষ্টিতে কাঁদা কাঁদা হয়ে গেছে পুরো বন। স্যান্ডেল পড়ে আর হাঁটতে পারছি না। আবার জুতা পড়া পা আমার। তালু একদম নরম। সুন্দরবনের কাঁটাগুলো ঢুকে পড়ে অনায়াসে। বিশেষ করে শুকনো হেঁতাল কাঁটা। স্যান্ডেল খুলে হাঁটতে হাঁটতে পিছলে পড়লাম দুইবার। বড় কোনো আঘাত পাইনি। তবে পায়ের তালু আর গোঁড়ালিতে হেঁতালের কাঁটা ফুটলো অনেকগুলো। চলার পথে হরগজার কাঁটা লেগে ডান পায়ের হাঁটুর নিচে ক্ষত হলো, রক্তও ঝরলো। আসলে বনে ঠিকঠাক হাঁটতে জানলে এতো ক্ষত হতো না। আমি তখনও বনে হাঁটা চলা করা, বেঁচে থাকা, টিকে থাকার কৌশলগুলো পুরোপুরি শিখিনি।

হেঁতাল কাঁটা খুব সাংঘাতিক। শুকিয়ে যাওয়া কাঁটাগুলো বেশি বিপজ্জনক। সুন্দরবনের নদী ও খালের পাশ দিয়ে হয় এ গাছ। খেজুরের গাছের মতোউ দেখতে। ছোট আর একসাথে অনেকগুলো গাছ হয়। ফলগুলো খেজুরের মতো দেখতে। কিন্তু খাওয়া যায় না। পাতাগুলো খেজুরের পাতার মতোই। পাতার আগায় কাঁটা থাকে। পরিণত হলে সেই পাতা পুরোটাই কাঁটায় রূপ নেয়। তারপর সেটা শুকিয়ে পড়ে মাটিতে। জোয়ারের পানিতে ভেসে ছড়িয়ে পড়ে বনের সবখানে। তাই হাঁটতে গেলে যেকোনো জায়গায় এই কাঁটা ফুটবে পায়ে। হরগজা গাছ অনেকেই চিনেন। দেশের গ্রামে গঞ্জেও হয় এ গাছ। খেয়াল করে না হাঁটলে এর কাঁটাগুলোও বেশ মজবুত আঘাত করে আমাদের পায়ে। ফুল হয় বেগুনি রঙ এর।

কোনো রকমে ফরেস্ট অফিসের পুকুর পাড়ে আসলাম। তারপর হাত পা ধুয়ে ফরেস্ট অফিসের ভিতরে ঢুকবো। পুকুর পাড়ে বসতেই আক্রমণ করলো বাইড়ে পোকা। চোখে দেখা যায় না এ পোকা। বেড়ে পোকা বা বাইড়ে পোক নামে ডাকে সুন্দরবনের মানুষ। বৃষ্টির সময় এর উৎপাত বাড়ে। আর আমাকে মনে হয় ওরা বেশিই পছন্দ করে। সুন্দরবনে গেলেই শরীরের খোলা অংশে কামড় বসিয়ে দেয় এই পোকা। বেশ ফুলে ওঠে আর প্রচুর চুলকায়। মানে জীবনটা দুর্বিসহ করে ফেলে। ত্বকে সুগন্ধি অথবা কেরোসিন তেল দিলে কিছুটা রক্ষা হয়। তবে বৃষ্টির সময় বাইরে পোকের আক্রমণ হবেই। পুকুর পাড় ছেড়ে পাশাখালী অফিসের দিকে হাঁটলাম।

অফিসের সামনে এসে দেখি ভয়ঙ্কর এক দৃশ্য। আস্ত একটা হরিণ পড়ে আছে। কেউ শিকার করে এনেছে জঙ্গল থেকে। এবার বেশ রাগ করলাম। কিছুতেই আর শিকার করবে না এমন নির্দেশ দেয়ার পরও কেন শিকার করা হলো? একজন বললো, রাতের খাবারের জন্য কিছু নাই। সব মিলিয়ে অনেক মানুষ। জেলেরাও আছে ১৫/২০ জন। তাই শিকার করা হয়েছে। আরেকজন বললো, এটাই তো শেষ শিকার মামা। বললাম, ডাল ভাত খেয়ে থাকা যেতো। একটা জাল নিয়ে নামলে তো কিছু মাছ পাওয়া যেতো!

শিকার করা খুব নৈমিত্তিক বিষয় ছিলো সুন্দরবনে। দস্যুরা প্রতিনিয়ত শিকার করতো। লোকালয়ের শিকারীরাও হর হামেশা বনে ঢুকতো, শিকার করতো। বনরক্ষীরা এসব চেয়ে চেয়ে দেখতো। সেদিন বন অফিসের সিঁড়িতে বসে হরিণ কাটাকুটি করছিলো দস্যুরা। বনরক্ষীদের সামনেই চলছিলো সব। ওসি সাহেব পাশে বসে চেয়ে চেয়ে দেখছেন। কী অসহায় অবস্থা! কিচ্ছু করার ছিলো না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top