রূপান্তরের গল্প ৯২ | Rupantorer Golpo 92

উপহার ছিলো ২৫ লাখ টাকা! | রূপান্তরের গল্প ৯২

উপহার ছিলো ২৫ লাখ টাকা! | রূপান্তরের গল্প ৯২ | Rupantorer Golpo 92 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৯২ : হাতে চটের ব্যাগ, কাঁধে গামছা। ফরেস্ট অফিসের রান্নাঘরে বানানো দুধ চা নিয়ে বসেছি পাশাখালীর জেটিতে। কাঠ দিয়ে বানানো সেই জেটিতে উঠতেই ছাউনি দেয়া বসার জায়গা। সূর্য হেলে গেছে পশ্চিমে। নির্দিষ্ট বিরতিতে ডেকে যাচ্ছে কুকু পাখি। সশস্ত্র বনদস্যুদের চোখে মুখে আতঙ্ক। কী হতে যাচ্ছে তাদের জীবনে, সেবিষয়ে শংকা মনে। অবশ্য আমার মনটা তখন বেশ ফুরফুরে। না। হাতের ব্যাগের জন্য না। মেজর আদনান তাঁর টিম নিয়ে রওনা দিয়েছেন, সেটিই আমার মন ভালো করার উপলক্ষ্য।

দস্যুরা বেশ কাচুমাচু মুখে দাঁড়ানো। বললাম, বাসায় একটা ফোন দেয়া দরকার। আপনাদের কারও ফোন থেকে আমার স্ত্রীর নাম্বারে একটু ধরিয়ে দিবেন? ফোন নিয়ে সোলাইমান দৌড়ে গেলো ওই পুকুর পাড়ে। এদিকে সবাইকে একসাথে করেছি জেটির কাছে। বললাম, আপনারা উপহার হিসাবে টাকা দিলেন কেন? একজন বললো, আপনি আমাদের জীবন বাঁচালেন। কৃতজ্ঞতা থেকে এটা আপনার জন্য রাখছি আমরা। আসলে কয়েক মাস দস্যুতা করে আমরা বেশি কামাতে পারিনি। এর বেশি আর দিতে পারলাম না।

মুচকি হাঁসি দিয়ে বললাম কতো টাকা দিতে পারলেন? বললো, পঁচিশ আছে ওখানে। বললাম, মাত্র ২৫? কী হবে ও দিয়ে? আবারও বললো, বছর খানেক থাকতে পারলে, সামনের ইলিশ মৌসুমটা পার করতে পারলে অনেক বেশি দিতে পারতাম। হাসতে হাসতে শেষ আমি। ওরা ভাবলো ২৫ কম হয়ে গেছে। একজন তো বলেই ফেললো, এই যে আমাদের কাছে আসা যাওয়া করেন সেই খরচও তো নেন না। কতোবার মাছ পাঠাতে চাইলাম, আপনি নেন না। তো এই কয়টা টাকা দিলাম, বাজার করার জন্য।

দেখি তো বাজার করার জন্য কতো টাকা দিলেন? বলতে বলতে ব্যাগটা আবার খুলতেই বুঝলাম ২৫ মানে ২৫ লাখ। চা শেষ করে উঠে দাঁড়ালাম। ওরা এবার নিশ্চিত যে আমি বোধ হয় সন্তুষ্ট না। পাশে আমার সহকর্মীরা, বেলায়েত সরদাররাও দাঁড়ানো। তারাও বুঝতে পারছিলো না কী হচ্ছে আসলে! চায়ের কাপটা রেখে চটের ব্যাগটি তুলে দিলাম বনদস্যুদের হাতে। টাকাগুলো ধরিয়ে দিয়ে বললাম, এই টাকা আপনারা রাখেন। আমারও টাকা প্রয়োজন। তবে এভাবে নয়।

ওরা আবারও ভুল বুঝলো। ভাবলো সত্যি মনক্ষুন্ন আমি। বললাম, আপনারা উপহার দিয়েছেন তাতেই খুশি আমি। ওই টাকাটা যদি যাদের কাছে থেকে নিয়েছেন তাদের ফেরত দেয়া যেতো তবে সেটাই করতাম। কিন্তু সেই সুযোগ ও সময় হাতে নাই। টাকাগুলো আপনারা রাখেন। কাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সারেন্ডারের পর আপনাদের নামে নতুন একটা অস্ত্র মামলা হবে। সেই মামলায় থানায় নিবে গ্রেফতার করে। সেখান থেকে জেলখানা। তারপর উকিল-মুহুরি। জামিন পেলে বাড়ি ফিরবেন। সাধারণ জীবনে ফিরতে কতোদিন লাগবে জানি না। এই টাকাটা আপনাদের মামলা চালানোর খরচ হিসাবে ব্যবহার করবেন।

ব্যাগটি দস্যুদের দিয়ে সোজা হাঁটা দিলাম পুকুর পাড়ের দিকে। ওখানে সোলাইমান আমার বাসায় ফোন করার চেষ্টা করছে। বললো, ফোন দিচ্ছি কিন্তু কাকী ফোন ধরে না। ফোনটি নিয়ে একটি টেক্সট মেসেজ পাঠালাম। ফিরতি ফোন আসলো কয়েক মিনিটের মধ্যে। স্ত্রীকে বললাম, টেনশন করো না। উনি বললেন, আমি আর টেনশন করি না। তোমার বাবা-মা টেনশনে আছেন। বললাম, বলে দাও, আমি ঠিক আছি। কাল উঠে আসবো সুন্দরবন থেকে।

অফিসে একটা ফোন দিলাম। আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রোকসানা আনজুমান নিকোলকে জানিয়ে রাখলাম বিস্তারিত। সব ঠিক থাকলে রাতেই দস্যুদের নিয়ে ফিরবো আমরা। সুন্দরবনের ভিতরেই RAB এর হেফাজতে যাবে মাস্টার বাহিনী। ভোরবেলা হবে সেই আনুষ্ঠানিকতা। আমরা সরাসরি দেখাবো সেই দৃশ্য। নিকোল জানালেন, ভোর ছয়টা থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি থাকবে। আমরা তৈর হলেই বিশেষ সংবাদ প্রচার হবে যমুনা টেলিভিশনে। প্রেজেন্টেশনে থাকবেন রুবায়েত। আর এপাশে লাইভে থাকবো আমি। এই সংবাদটির মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দস্যুদলের আত্মসমর্পণের খবর ব্রেক করবো আমরা। ছয় বছরের চেষ্টা হয়তো সফল হতে যাচ্ছে।

সবকিছুই ঠিকঠাক। তবুও মনের ভিতরটা খচখচ করছিলো। সন্ধ্যা হচ্ছে। জোয়ারের পানি বাড়ছে। কেমন জানি বিপদ বিপদ গন্ধ পাচ্ছি!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top