রূপান্তরের গল্প ১৯৩ | Rupantorer Golpo 193

নিয়ন্ত্রণে এলো আলম, নয়ছয় করছে শান্ত বাহিনী | রূপান্তরের গল্প ১৯৩

নিয়ন্ত্রণে এলো আলম, নয়ছয় করছে শান্ত বাহিনী | রূপান্তরের গল্প ১৯৩ | Rupantorer Golpo 193 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | জীবনে ফেরার গল্প | Jibone Ferar Golpo | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ১৯৩ : মাথার ভিতরটা পেঁচিয়ে গেছে। অনেকগুলো চিন্তা নিয়ে বিছানায় গেলাম। ঘুম ভাঙ্গলো সাত সকালে। বরিশাল থেকে খবর পেলাম- অভিযান সফর। খোকন মাঝিকে না পেলেও তার ঘনিষ্ঠ স্বজনদের পাওয়া গেছে। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন আলিফের ধর্ম মা। তিনিই সেই অভিযানে প্রধান সোর্স হিসাবে কাজ করেছেন।

ভোরবেলা দু’জনকে ধরিয়ে দিয়ে গায়েব হয়েছেন। কারণ ওই দুর্গম অঞ্চলে নিজেকে নিরাপদ রাখাটাও কঠিন কাজ। RAB-এর অভিযানে সেদিন ১১টি বন্দুক আর ১৭০০ গুলি আটক হয়। সবগুলোই অবৈধ, ব্যবহৃত হতো দস্যুতায়। এক রাতের এ অভিযানে সুন্দরবনের দস্যু জগতের অনেক হিসাব পাল্টে গেলো। আসছি সে প্রসঙ্গে।

সুন্দরবনের দস্যু আলিফ বাহিনীর অস্ত্র ছিলো রাঙ্গাবালীর খোকন মাঝির কাছে। সেই অস্ত্রগুলো সে গোপনে বিক্রি করে দিয়েছে আরেক দস্যু আলমের কাছে। হস্তান্তরের আগ মুহুর্তে সেই অস্ত্রগুলো চলে গেলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। ভেবেছিলাম এটা শুধুই একটি অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান। পরে সবকিছু পরিস্কার হলো।

অস্ত্রগুলো ধরিয়ে দিয়ে আলিফ প্রতিশোধ নিলো খোকন মাঝির ওপর। এদিকে অস্ত্রের চালান ধরা পড়ে যাওয়ায় কান্নাকাটি অবস্থা আলমের। চার লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়া। সেই টাকাটা লোকসান হলো, অস্ত্রগুলোও হাতে পেলো না।

অস্ত্র আটকের সেই খবর ছড়ালো দুপুরের পর। আলম ফোন দিলেন। বললেন, আমি আর ডাকাতি করবো না। আপনি আজকেই আসেন সুন্দরবনে। আমাকে নিয়ে যান। মুহুর্তেই ঘুরে গেলেন আলম।

আলম সরদার দীর্ঘদিন ছিলেন অজ্ঞাতবাসে। মাস্টার-মজনুর সারেন্ডারের পর জঙ্গলে ডাকাত দল নিয়ে নামেন। উদ্দেশ্য আত্মসমর্পণ হলেও তার আগে সাগরে একটা কোপ মারার ইচ্ছা ছিলো তার। কোপ মানে বঙ্গোপসাগরের জেলেদের ট্রলারে হামলা করে মাছ লুটপাট ও অপহরণ। সেই কাজে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করার কথা ছিলো ওই খোকনের।

ইলিশের মৌসুম। একটা বগ কোপ দিতে পারলে অনেক টাকা। কথা ছিলো ডাকাতির সেই রোজগার দুইজন সমান ভাগে ভাগ করে নিবে। আলমের চিন্তা ছিলো অস্ত্রের অগ্রিমের চার লাখসহ বেশ বড় অংকের দেনা আছে। কোপটা মারতে পারলে সব ঋণ একবারে শোধ হয়ে যাবে। একারণেই আত্মসমর্পণের দিনক্ষণ নিয়ে টালবাহানা করছিলো।

পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় মন ভেঙ্গে গেছে আলমের। তাই যা হয়েছে হয়েছে, সামনে যা হবার হবে। কয়েক মাসের প্রস্তুতি এক রাতেই ভেস্তে গেলো। না জেনে, না বুঝে আমিই ঘটিয়ে দিলাম এসব! আলম সরদার ফোন করে বললেন, চিন্তা ছিলো কোপটা শেষ করেই অস্ত্রগুলো নিয়ে সারেন্ডার করবো। কিন্তু আপনিই সব নষ্ট করে দিলেন। বললাম, কাজটা খুব ভালো করেছি। তা না হলে টাকার লোভ আপনাকে কোথায় নিয়ে ফেলতো নিজেও জানেন না। সুযোগ এসেছে, কাজে লাগান।

আলম বাহিনী উঠবে যেকোনো দিন। বলা মাত্র তৈরি তারা। কিন্তু ঝামেলা বাড়লো শান্ত বাহিনীর সারেন্ডার নিয়ে। মাঝের কয়দিন একটু উদাসীন ছিলাম। এবার মন দিয়ে কাজ শুরু। বারেক তালুকদার আমাকে এটা সেটা বুঝাচ্ছেন। খুব বিরক্ত হলাম। বললাম, এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে আপনারা ঠিক না হলে আমি আর যোগাযোগে থাকবো না। আপনারা আমৃত্যু ডাকাতি করতে থাকেন। বললাম, আপনার বাচ্চা মেয়েটাকে কথা দিয়েছিলাম, আপনাকে তার কাছে ফিরিয়ে দিবো। বাঁকীটা আপনার হাতে।

পরের কয়েকদিন শান্তকে ফোন দেইনি। তাদের ফোন ধরিওনি। অবশ্য তার স্ত্রী ও কণ্যার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। কথা হতো ওই দলের সদস্য মনিরের মেয়ের সাথে। ভান্ডারীর পরিবার, আনিছের পরিবারের লোকজনও ফোন করতো নিয়মিত। বারেক তালুকদারকে চাপে ফেলাতে তাদের পরিবারকেই অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করলাম।

এদিকে পশ্চিম সুন্দরবনের লোকালয় ঘেঁষা ছোট ছোট খালে একটি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আলম। অস্ত্রের মজুত বাড়াতে পারেনি বলে সঙ্গী সাথীরাও চলে গেছে। মাত্র চারজন সদস্য নিয়ে অসহায় অবস্থায় আলম পালিয়ে বেড়াচ্ছে জঙ্গলের খালে খালে। অবশ্য তার সাথে নিয়মিত কথাবার্তা চলে। কথা হয় আলিফের সাথে। নোয়া মিয়াও শুনেছি খুলনা থেকে বেশ কয়েকটি বন্দুকের অর্ডার করেছে। মানে শক্তি বাড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে ফোন দেয়, তার সাথেও কথাবার্তা হয়।

জোনাব বাহিনীর জোনাবের সাথে কথা হলো। সেও নাকী নামবে সামনের গোন-এ। বললাম, বয়স হইছে ভাই। আর কতো? বললেন, তার সাথে যারা বেঈমানী করেছে তাদের শায়েস্তা করতে জঙ্গলে নামবেন এবার। জাহাঙ্গীর নামে এই মুহুর্তের সবচেয়ে ভযঙ্কর দস্যুনেতা আমার সাথে কথা বলে না। শুনছি সারেন্ডার তো করবেই না, আমাকে হাতের কাছে পেলে নাকী শায়েস্তা করবে। মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর অস্ত্র-গুলি আর জনবলে সেই সবচেয়ে বড় দস্যুবাহিনী তখন জাহাঙ্গীরের।

সবার কথা ভাবছি না। ওগুলো পরে দেখা যাবে। আপাতত আলম বাহিনী প্রস্তুত। কিন্তু শান্ত বাহিনীটা নয়ছয় করছে। ওদের নিয়ন্ত্রণে এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাতে হবে। আমি কাজ করছি। সেই সাথে বরিশাল RAB-এর মেজর আদনানও কাজ করছেন নিবিড় ভাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top