বাছের এখন মাছের খামারী | রূপান্তরের গল্প ০৯ | Rupantorer Golpo 09 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ০৯ : সুন্দরবনের নিশানখালী ছিলো বড় বড় দস্যুদলগুলোর আস্তানা। শিবসা আর পশুর নদীর মাঝের এই বনের ভিতরে ছোট ছোট অসংখ্য খাল। ভাড়ানীগুলো জোয়ারে ভরে ওঠে পানিতে। ভাটায় চলাফেরার উপায় থাকে না।
২০১৩ সালে জলদস্যু ইলিয়াস বাহিনীর সঙ্গে দেখা করতে যাই। বিশাল বহর ছিলো তার। সেই বাহিনীর সবচেয়ে কম বয়সী দস্যু বাছের। বয়স ১৭/১৮ এর বেশি না। ওদের আস্তানায় যাওয়ার পর পুরোটা সময় আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকতো সে। সম্ভবত পাশে থাকার উছিলায় আমাকে নজরদারিতে রাখতো। আমি আবার সেই সুযোগে তাকেই আমার বিশ্বস্ত বানিয়ে ফেলেছিলাম তিন দিনের সেই সফরে।
বাছেরের সঙ্গে আবার যোগাযোগ হয় ২০১৬ সালের শেষ দিকে। তখন সে পরিণত। ভয়ঙ্কর দস্যুদল জাহাঙ্গীর বাহিনীর সদস্য। জাহাঙ্গীর কিছুতেই সারেন্ডার করবে না। দলের ভিতরে টানা পোড়েন চলছিলো এসব নিয়ে। জাহাঙ্গীর আমাকে অপছন্দ করতো। আমার নামে কটু কথাও বলতো। সেই জাহাঙ্গীরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছিলো বাছের। আড়ালে সে আমাকে সব খবর দিতো।
২০১৭ সালে এসে আত্মসমর্পণ করে বাছেররা। আদাচাই এর ভাড়ানী থেকে নিয়ে আসি তাদের। বাছেরের সঙ্গে এখনও নিয়মিত যোগাযোগ আছে। খুলনার রূপসায় ছোট করে মাছের খামার চালাচ্ছে সে। প্রতি বছর সেই খামার থেকে একটা কাতল মাছ পাঠায় আমার জন্য।
সুন্দরবনের সারেন্ডার করা দস্যুদের মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। পুনর্বাসনের চেষ্টাও অব্যাহত আছে। সব মিলিয়ে রূপান্তরের এই প্রক্রিয়া বোধ হয় সফল হতে চলেছে। নিচের দুটি ছবিই আমার তোলা। একটি ২০১৭ সালে। আরেকটি ২০২১ সালে।