ভালো গান করতো বনদস্যু এমদাদ | রূপান্তরেরগল্প ১২ | Rupantorer Golpo 12 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরেরগল্প ১২ : ভোর থেকেই ফোন আসছিলো সুন্দরবন থেকে। মোশাররফ বাহিনীর ওপর হামলা করেছে সাত্তার বাহিনী। গোলাগুলি হয়েছে ঝাপসির ভেতর চিপার ভাড়ানিতে। সম্ভবত মোশাররফসহ চারজন মারা গেছে।
এর পাশের খাল থেকে গত ডিসেম্বরে উঠিয়ে এনেছিলাম আরেক বনদস্যু ভাই ভাই বাহিনীকে। এধরণের মাঝারি ও ছোট দস্যুবাহিনীগুলোর ওপর যেকোন সময় হামলার ঝুঁকি থাকে। সেজন্যই হাতে বাওয়া ডিঙ্গি নৌকাই তাদের বাহন। দিনে বেলা গহীন বনের ভেতরে অবস্থান নেয়া। আর রাতের বেলা নিঃশব্দে চলাফেরা। এভাবেই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে যায়। যত কাজই থাকুক নিজের অস্ত্রটি হাতছাড়া করার সুযোগ নাই। এই অস্ত্র পাশে রাখতে গিয়ে বা অন্য কারও হাতে রেখে হাতমুখ ধুতে গিয়েও অনেকের জীবন গেছে। তাই গুলি ভরা অস্ত্র থাকে হাতে, সব সময়ের জন্য।
ভিডিও ব্যক্তি এমদাদ। এখন সাবেক বনদস্যু। ফারুক বাহিনীর সদস্য দস্যু ছিলো সে। প্রথম যখন তাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম তখন থেকেই তার ভেতরের টগবগে তারুণ্য নজরে আসে। অস্ত্র হাতে রীতিমত বেমানান যুবকটির কথা বার্তা কিংবা চাল চলনে হিংশ্রতার লেশমাত্র নাই। আমি ভাবি, মন উজাড় করে গান গায় যে মানুষ, সে হিংশ্র হয় কী করে? তবে এটাও ঠিক, জেলেদের সামনে তারা হিংশ্র।
ঠিক এই কথাটিই জিজ্ঞেস করলাম তাকে। এমদাদ বললো, দুর্ব্যবহার আর মারপিট না করলে ইনকাম হয় না। জিজ্ঞেস করলাম, কত টাকা জমেছে ডাকাতি করে? বললো, ভেড়ি বাধের ওপর খাস জমিতে এক কাঠার ওপর একটা ঝুপড়ি ঘর আছে। আর সঞ্চয় সাকুল্য ১৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ দুই বছরে নিজের একটা ঘরও তুলতে পারেনি সে। তাহলে দস্যুতার এত এত টাকা যায় কোথায়? উত্তর অবশ্য পরে পেয়েছি, বারো ভুতে খেতো সেই টাকা।
গল্পে গল্পে এমদাদ জানালো, দুই বছর আগেও সুন্দরবনের খালে নদীতে মাছ ধরতো সে। স্থানীয় মেম্বারের সাথে ঝামেলা করে মামলা খেয়ে এখন ফেরারি। পুলিশের ভয়ে পালিয়ে সুন্দরবনে দস্যুতা করছে বছর দুই হলো। বাড়ি ফিরতে চায়, বাড়ি ফিরতে চায় দলের বাকী দস্যুরাও। নিরাপদে তাদের ফিরিয়ে আনব কয়েক দিনের মধ্যে। কথা দিয়ে ফিরে আসলাম। আসার পথে কানে বাজছিলো এমদাদের গান।
বনের ভেতরে এমদাদরা হিংশ্র জলদস্যু। একবার অস্ত্র হাতে নিলে আর ছাড়ার উপায় থাকে না। সেই অস্ত্র সরকারের হাতে তুলে দিতেই আমাদের হাত ধরেছিল এমদাদরা। তারা বেঁচে ফিরেছে। কিন্তু শুরুতেই যার কথা বললাম। সেই মোশাররফ তো বাঁচতে পারলো না। এমন কত যুবকের রক্ত ঝরেছে সুন্দরবনে!