জিম্মি জেলেদের দীর্ঘশ্বাসে ছিলো অভিশাপ! | রূপান্তরের গল্প ১৮ | Rupantorer Golpo 18 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ১৮ : আবার ভোর হলো। জলদস্যুদের ডেরায় কাটল দ্বিতীয় রাত। মাস্টার বাহিনী আর তাদের সদস্যদের সঙ্গে সারা রাত কথা বললাম। কিন্তু অপহৃত জেলেদের সঙ্গে সেভাবে কথা হয়নি। আমি নিজের মতো করে কথা বলতে চাই। কিন্তু অপহরণকারী দস্যুদের সামনে তারা মন খুলে কথা বলছিলো না। আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। নিরিবিলি কথা বলবো তাদের সাথে।
নভেম্বর মাস। তীব্র শীত। অপহৃত জেলেদের রাখতে বেগ পেতে হচ্ছিলো। তাই বিকাল বেলা বেশ কয়েকটি বড় গাছ কেটে মাচা করা হলো।শতাধিক গরান গাছ কেটে বেড়া দিয়ে ওপরে পলিথিন টানানো হলো। সামনের দিকটা খোলা। গোলপাতা বিছিয়ে তার উপর শোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো জিম্মি জেলেদের জন্য। রাতভর কুয়াশা থেকে রক্ষা হলো ঠিকই। কিন্তু শুয়ে বসে থাকা সেই অপহৃত জেলেদের প্রায় কারও চোখেই ঘুম নাই। পরিশ্রান্ত বলে কেউ কেউ একটু চোখটাকে আরাম দিচ্ছিলো। ট্রলারের চুলাগুলো যথারীতি জ্বলছিলো। যে যার মতো লাল চা বানিয়ে নিচ্ছে। সময়টা তাদের জন্য ভয়ঙ্কর দুঃসময়। জিম্মি হয়ে থাকার চেয়ে মুক্তিপণের টাকা বোগাড়ের দুশ্চিন্তায় দিশেহারা তারা। আমার চোখে পানি চলে আসে। বুকের ভিতরে হাহাকার চলছিলো।
সকাল হলো। আমার তৃতীয় নির্ঘুম রাত পার হলো। সহযাত্রীরা ট্রলারে। গভীর ঘুম। সেদিন দস্যুনেতা মাস্টার আমার সঙ্গে জেগে ছিলেন। সোহাগসহ বেশির ভাগ দস্যুই ঘুম। এক কাপ চা হাতে নিয়ে ট্রলার থেকে নেমে আসলাম। মাস্টারকে বললাম জিম্মি জেলেদের সঙ্গে গল্প করে আসি। সরদার হাসি দিয়ে বললেন, সঙ্গে আমাদের একজনকে নিয়ে যান।
জেলের জন্য করা মাচাটি প্রায় ভিজে গেছে কুয়াশায়। জেলেরা সবাই কম বেশি ভিজে গেছে। ঠকঠক করে কাঁপছে কেউ কেউ..!!
ছবি: দস্যুদল মাস্টার বাহিনী ঝাইলো, নভেম্বর ২০১৫