রূপান্তরের গল্প ১৯৫ | Rupantorer Golpo 195

আবারও যাচ্ছি সুন্দরবন, উঠে আসবে দু’টি দস্যু বাহিনী | রূপান্তরের গল্প ১৯৫

আবারও যাচ্ছি সুন্দরবন, উঠে আসবে দু’টি দস্যু বাহিনী | রূপান্তরের গল্প ১৯৫ | Rupantorer Golpo 195 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | জীবনে ফেরার গল্প | Jibone Ferar Golpo | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ১৯৫ : ওই দস্যু বাহিনী যেন কিছুতেই উঠতে না পারে। চারপাশে খবর দিয়ে দাও। জয়মনি থেকে আন্ধারমানিক পর্যন্ত জেলেদের জানিয়ে রাখো। শান্ত বাহিনীর অবস্থান নজরদারিতে রাখো। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাঁদের সোর্সদের এভাবেই নির্দেশনা দিয়েছেন। ঢাকা থেকে আমরা রওনা হয়েছি এমন খবরও নাকী ছিলো তাঁদের কাছে। কিন্তু আমরা যে সেদিন পূর্ব সুন্দরবনে যাচ্ছি না, সেই খবরটি ছিলো না। বলা হয়েছে, মংলা থেকে নামবো আমি। আমাদের গতিবিধিও নজরদারিতে রাখতে হবে। ইতিমধ্যে বেলায়েত সরদারের বাড়ির ওদিকে নজরদারি শুরু হয়েছে। পুরনো দুইজন সোর্স ব্যাপক ভাবে তৎপর। সরদারের ট্রলারটির অবস্থান, গতিবিধি নজরের রাখার নির্দেশ আছে। আমার কাজটি নিয়ে যারা অসন্তুষ্ট তাঁরা বেশ সক্রিয় মনে হচ্ছে।

কিছুদিন আগে শান্ত বাহিনীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময়ও বেশ প্রতিবন্ধকতায় পড়েছিলাম। সেবার সবার চোখে ধূলা দিয়ে কাজ করে ফিরেছিলাম। তবে এবার কোনো ভাবে আগেভাগে জেনেছে তারা। কিন্তু তাদের তথ্যে একটু গরমিল আছে। প্রথমে পশ্চিম সুন্দরবনে যাবো সেই তথ্য খবর নাই তাদের কাছে।

বেলায়েত সরদারকে বললাম ট্রলারটি খালে ভাসায়ে রাখতে। সড়ক পথে বাগেরহাটের কাঁটখালীতে আসবেন। সেখান থেকে যোগ দিবেন আমাদের সাথে। আমরা শান্ত বাহিনীকে আনতে যাবো ৭ সেপ্টেম্বর রাতে। সেভাবে একটি ট্রলার ভাড়া করে রাখতে বললাম মংলার বশিরকে। বশির সেখানে আমার সোর্স হিসাবে কাজ করেন। শান্ত বাহিনীর সাথে যোগাযোগের বিষয়টি তিনিই দেখভাল করছেন। জানালাম সাতক্ষীরার দস্যুদল আলমকে নিয়ে ৭ তারিখ দিনের মধ্যে ফিরবো। মংলায় RAB হেফাজতে থাকবে আলম বাহিনী। আমরা সে রাতেই নেমে পড়বো পূর্ব সুন্দরবনে শান্ত বাহিনীকে নিতে।

সাতক্ষীরা সুন্দরবনে ঢুকবো ৫ সেপ্টেম্বর রাতে। সেই অনুযায়ী সকাল সকাল ঢাকা থেকে রওনা হলাম। বাজার-সদা আর ট্রলার ভাড়া করার দায়িত্ব নিলেন মু্ন্সিগঞ্জের আলমগীর। সন্ধ্যার পর পর ভাটা শুরু হবে। আমরা অর্ধেক ভাটা থাকতে থাকতে ট্রলার ছাড়বো। গন্তব্য হবে লোকালয়ের কাছাকাছি সুন্দরবনের কোনো খালে।

দস্যুনেতা আলমকে কথাবার্তায় বেশ ধির-স্থির মনে হয়। অথচ বনদস্যু হিসাবে বেশ ডাকসাইটে। নাম-ডাক পশ্চিম সুন্দরবনের পুরো পশ্চিম পাশ জুড়ে। তবে আলম বাহিনীর চলাফেরা এখন নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায়। সারেন্ডারেসারেন্ডারের অপেক্ষায় তারা। সাথে কয়জন সদস্য আছে, কয়টি অস্ত্র আছে, জানি না। তার সাথে দেখা হয়নি এখনও। অস্ত্র-জনবলে যদিও দলটি নেহায়েত ছোট একটি দস্যুদল। যদিও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এই বাহিনীর নাম আছে ভয়ঙ্কর দস্যুদল হিসাবে।

অতীতে RAB-এর একটি অভিযানে ধরা পড়েছিলেন আলম সরদার। ঘটনাটির প্রেস রিলিজে পাঠানো ছবিতে তাকে দেখেছি। ছবিটিতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার আলিফ, মিলন ও আলমকে হ্যান্ডকাফ পড়ানো ছিলো। ওই মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হয় তাদের। প্রায় এক বছর পর জামিন হয়। এরপর বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলো তারা। সারেন্ডার প্রক্রিয়া শুরুর পর আলম ও আলিফ আবারও দস্যুতায় নেমেছে। মিলন আছে লোকালয়ে, আত্মগোপনে। এ দফায় আলম তার সদস্যদের নিয়ে আত্মসমর্পণ করবে।

বনদস্যুদের সাথে থাকা, সশস্ত্র এই অপরাধীদের সাথে যোগাযোগ রাখাটা বেশ স্পর্শকাতর। কখন, কোথায়, কী ভাবে আইনের লংঘন হয় সেই দুশ্চিন্তা ছিলো সব সময়। তাই RAB-এর সাথে সমন্বয় রেখে পুরো কাজটি করছি। জঙ্গলের ভিতরে বনদস্যুদের ডেরায় থাকা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু তাদের লোকালয়ে নিয়ে আসার বিষয়টি আমার এখতিয়ারের বাইরে। হঠাৎ কোনো সমস্যা হলে সমাধানের সক্ষমতা থাকে না। সেজন্য কোনো দস্যুদলকে আনতে জঙ্গলে নামার সময় RAB-এর প্রতিনিধি দলও সাথে থাকে।

আলম বাহিনীকে সারেন্ডারের জন্য নিয়ে আসবো। সাতক্ষীরা দিয়ে ঢুকবো বনে। সময় সূচি তাদের জানিয়ে দিলাম। কথা ছিলো সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ পেরিয়ে একটি পেট্রোল পাম্প-এ মিলিত হবো আমরা। বাগেরহাটের কাটাখালীতে অপেক্ষায় বেলায়েত সরদার ও বাগেরহাটের সহকর্মী ইয়ামীন ভাই। দুপুরের পর পর পৌঁছালাম সেখানে। দুজনকে নিয়ে খুলনা পেরিয়ে সাতক্ষীরা পৌঁছালাম বিকাল বেলা। সেখানে যোগ দিলেন জেলা প্রতিনিধি আহসান রাজীব।

সাতক্ষীরার একটি হোটেলে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিলাম। তারপর অফিসের গাড়ির স্টিকারগুলো খুলে ফেললাম। নিজেরাও সাধারণ পোশাক পড়ে নিলাম, যাতে আমাদের দেখে বাইরের মানুষ মনে না হয়। কালিগঞ্জ পেরিয়ে পূর্বনির্ধারিত পেট্রোল পাম্প-এ দাঁড়ালাম। আলম সরদারের সাথে শেষ বারের মতো কথা বললাম। সব ঠিক থাকলে রাতেই দেখা হবে তাদের সাথে। পরের দিন পুরোটা থাকবো বনের ভিতরে। সেই রাতে আলম বাহিনীকে নিয়ে উঠে পড়বো। তার পরের দিন অর্থাৎ ৭ সেপ্টেম্বর রাতে যাবো পূর্ব সুন্দরবনে। ওই রাতে শান্ত বাহিনীকে তুলে আনবো। পরের সকালে বরিশালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে দু’টি দস্যুবাহিনী।

পেট্রোল পাম্প-এ দাঁড়িয়ে ফোন দিলাম পূর্ব সুন্দরবনে শান্ত বাহিনীর কাছে। বললাম, ঝামেলার খবর পাচ্ছি। আপনারা সতর্ক থাকবেন। বললাম, সন্ধ্যার পর পশ্চিম সুন্দরবনে ঢুকবো। নেটওয়ার্ক নাও থাকতে পারে। মংলা থেকে বশির আপনার সাথে যোগাযোগে থাকবে। আলম বাহিনীকে উঠিয়ে সোজা চলে আসবো আপনাদের কাছে। বারেক তালুকদারকে বললাম, একটু ভুল করলে বড় বিপদ হতে পারে। আপনাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। আমরা না আসা পর্যন্ত গভীর বন ছেড়ে বের হবেন না।

RAB সদস্যরা আসলেন সময় মতো। কালিগঞ্জ থেকে রওনা হলাম ঠিক সন্ধ্যার সময়। শ্যামনগরের শেষ প্রান্ত, মুন্সিগঞ্জে প্রস্তুত দুটি ট্রলার। জঙ্গলে অপেক্ষায় বনদস্যু আলম বাহিনী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top