ব্রাশ ফায়ারে তছনছ চারপাশ! | রূপান্তরের গল্প ২০ | Rupantorer Golpo 20 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ২০ : চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি। উপভোগ করছি না। কিন্তু করবো কী? তিন রাত নির্ঘুম! দস্যুদের ডেরায় সময় কাটানো বেশ উৎকণ্ঠার, সন্দেহ নাই। সকালে আবার বন বিভাগের লোকজন দস্যুদের দেখে গেছে। সেদিক থেকে কোনো সমস্যা হয় কী না! কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। এদিকে শিকারে নামতে তাদের নিষেধ করেছিলাম। কোনো ভাবে গোলাগুলি না হয় সেদিকে সবাই নজর রেখেছিলো।
বিতৃষ্ণা নিয়ে চা খাচ্ছি। রাতের জোয়ারে বের হবো। ভাটায় নেমে যাবো। চলে যাবো লোকালয়ে। অফিসে ফিরে নিউজ করবো। দস্যুরা আত্মসমর্পণ করবে। এসব নিয়েই ভাবছিলাম।
চা খাচ্ছি। গল্প করছি মাস্টার, সোহাগ, ফজলু, সুলতানদের সঙ্গে। হঠাৎ ছুটে আসলো ইমদাদুল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলছিলো- প্রশাসন উঠেছে জঙ্গলে। বাটলো নদী দিয়ে হঠাৎই ভিড়েছে একটা স্পিডবোট। জিজ্ঞেস করলাম কোস্টগার্ড না RAB?
বিস্তারিত শোনার আগেই শুরু হলো ব্রাশফায়ার। গুলির লক্ষ্যে আমরা বসা। অর্থাৎ মাস্টার বাহিনীর বহর লক্ষ করেই গুলি হচ্ছে। সেই সঙ্গে চলছে মেগাফোনে দস্যুদের সারেন্ডারের নির্দেশ। পরিবেশ পাল্টে গেল। মাস্টার বাহিনীর ৪৬টি অস্ত্র তখন সক্রিয় ৪৬ জন দস্যুর হাতে। মুহুর্তেই তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। দাঁড়িয়ে থাকলেন একজনই। সেই মোস্তফা শেখ। অর্থাৎ বাহিনী প্রধান মাস্টার। আমরা তিনজন কী করবো ভাবছিলাম। কোনো রকমে ক্যামেরা আর ল্যাপটপ নিয়ে দৌড় দিলাম। ক্যামেরায় আমাদের শ্যুটিং করা সব ভিডিও ফুটেজ।
শত শত রাউন্ড গুলি হচ্ছে। আমি, পলিন আর রাজীব দৌড়াচ্ছি। চারপাশে বড় কোন গাছ নাই। একটু আড়াল খোঁজার চেষ্টা করলাম। কিন্তু চারপাশে ছোট ছোট গড়ান গাছ ছাড়া কিছুই নাই। দাঁড়িয়ে পড়লাম। বুঝলাম দৌড়ে বাচা যাবে না। সেখানে কাঁদার ওপর শুয়ে পড়লাম। মাটি বলতে জোয়ারের পানি সরে যাওয়ার পরের কাঁদা, অসংখ্য শ্বাসমূল আর হরগজা কাঁটা। এর ওপর শুয়ে তিন জনের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। মাথার উপর দিছে চলছে গুলি। এদিকে দস্যুনেতা মাস্টার, ওদিকে কোস্টগার্ড! এসএমজি’র গুলিতে ঝাঁঝড়া হচ্ছে সুন্দরবনের গাছপালা…!!
(নভেম্বর ২০১৫। বেশ আগের ঘটনা। তখন সুন্দরবনের দস্যুদের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতো জেলেরা। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ পকেট ভরতো। বনকর্মীরা দস্যুদের দেখেও দেখতো না।)