রূপান্তরের গল্প ২১ | Rupantorer Golpo 21

দস্যুনেতার সাহস দেখলাম সেদিন! | রূপান্তরের গল্প ২১

দস্যুনেতার সাহস দেখলাম সেদিন! | রূপান্তরের গল্প ২১ | Rupantorer Golpo 21 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ২১ : কোস্টগার্ডের ব্রাশফায়ার চলছে। লক্ষ্যে ছিলাম আমরা। কাঁদায় শুয়ে পড়ে তিনজন ফিসফিস করে কথা বলছিলাম। পলিনকে জিজ্ঞেস করলাম আমাদের রেকর্ড করা ভিডিওগুলো আছে তো? চোখ বড় বড় করে রাজিব আমার দিকে তাকিয়ে!! বললেন- ভাই চলেন আমরা সারেন্ডার করি। বকা দিলাম এর মধ্যেও। বললাম দাঁড়ালে গুলি লাগবে বুকে কিংবা মাথায়। চুপচাপ শুয়ে থাকেন। তিনজনের মধ্যে শুধু রাজিবের হাতে একটা ফোন। সেটি নিয়ে আমার পকেটে রাখলাম। কারণ রাজিব তখন লুঙ্গি পড়া। যদি বেঁচে যাই তবে গাছে উঠে কাউকে ফোন করবো।

এদিকে ৫৪ জন জিম্মি জেলেদের নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বনের ভিতরে হারিয়ে গেছে দস্যুরা। আমার সঙ্গী বেলায়েত সরদারসহ তিনজন চলে গেছে খালের আগায়। বেলায়েত সরদারের পরনে ছিলো শুধু একটি গামছা। কারণ গুলি শুরুর আগে তিনি পানিতে নেমে ট্রলার ঠিক করছিলেন। সেই রাতে আমাদের ফিরে আসার কথা ছিলো।

গুলি শুরুর মিনিট খানেকের মধ্যে দেখি আশে পাশে কেউ নাই। ছোট খালের আরেক পাশে, অর্থাৎ কোস্টগার্ড সদস্যদের অবস্থানের দিকে একটি গাছের আড়ালে অবস্থান নিলেন দস্যু দলের প্রধান মাস্টার নিজেই। সঙ্গে এইট শুটার বন্দুক, একটি থ্রি নট থ্রি। আর সঙ্গী সাগর থেকে অপহৃত ভোলার প্রবীন এক জেলে। একটা বাইন গাছের আড়ালে অবস্থান নিয়েছেন তারা।

আকাশে নিশানা করে মাস্টার পাল্টা গুলি শুরু করলেন। একটার পর একটা গুলি। এরপর শর্টগানটি পাশে রেখে চললো থ্রি নট থ্রি’র গুলি। এভাবেই পালা করে দুই বন্দুকের ফাঁকা গুলি চলতে থাকলো। মনে হচ্ছিলো এদিক থেকে কয়েকজন গুলি করছে! সে সময় ব্যাগ ভর্তি গুলি হাতে পিছনে দাঁড়ানো সেই জেলে।

দস্যু নেতার সাহস দেখলাম সেদিন। গুলি করতে করতে তিনি এগিয়ে গেলেন কোস্টগার্ড সদস্যদের কাছাকাছি। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এক ভয়ঙ্কর সময় পার করছিলাম আমরা। মাথা তুলতে পারছিলাম না। কাদার মধ্যে শুয়ে শুয়েই নিজেদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছিলাম। পরিকল্পনা করছিলাম কী ভাবে জীবন বাঁচাবো আমরা!

ওদিকে গুলির ব্যাগ হাতে পেছনে দাঁড়িয়ে সেই প্রবীন জেলে সাহস যোগাচ্ছিলেন মাস্টারকে। বলছিলেন, গুলির মধ্যে পড়লে আগে জীবন যাবে। তারপর না জানা যাবে কে দস্যু আর কে জেলে!! তাই কোস্টগার্ডকে ফিরিয়ে দেয়াই ছিল সেই মুহুর্তে এই পক্ষের লক্ষ্য। মিনিট দশেক ধরে চলে সেই বন্দুক যুদ্ধ। মাস্টারের প্রতিরোধের মুখে শেষ পর্যন্ত পিছু হটে কোস্টগার্ডের সদস্যরা। আর এর বড় কারণ, আমাদের দিক থেকে তাদের দেখা যাচ্ছিলো, কিন্তু এদিকের কিছুই তাঁরা দেখতে পাচ্ছিলেন না। কান খাড়া করে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছিলাম আমরা…!!!

(সাত বছর আগের ঘটনা। তখন দেড় ডজন জলদস্যু দাপিয়ে বেড়াতো পুরো সুন্দরবন)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top