গুলিতে কেউ মরেনি, আহতও হয়নি | রূপান্তরের গল্প ২৫ | Rupantorer Golpo 25 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ২৫ : গোলাগুলির জায়গা থেকে বেশ দূরে চলে এসেছি। ট্রলার নোঙ্গর করার পর দেখি আমার পুরো শরীর কাঁদায় মাখা। শার্ট আর প্যান্ট জয়গায় জায়গা ছিঁড়ে গেছে। হাত পা-এর কয়েক জায়গায় ক্ষত। দৌড়াতে গিয়ে আরও বড় ক্ষতি হতে পারতো। শুধু পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে শ্বাসমূলের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, ভীষণ ব্যাথা। গড়ান বনের ভিতর দিয়ে দৌড়ালে কী অবস্থা হতে পারে তা অভিজ্ঞরা বুঝবেন।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাস্তবে ফিরলাম। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্যদের সঙ্গে দেখা হবে কী করে? তারা তো জানে না আমরা এখানে আছে। পায়ে হেঁটে আসতে হলেও দেড় দুই ঘন্টার পথ। বিকাল হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার আগেই সবাইকে একসাথে হতে হবে। আমাদের ট্রলারটি মেরামত করে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। তার আগে সরদারকে খুঁজে বের করতে হবে।
সময় নষ্ট না করে একটা পানির বোতল আর দুই প্যাকেট সিগারেট নিয়ে হাঁটা দিলেন মাস্টার। দস্যুনেতার একাই হাঁটলেন সেই ঘটস্থাস্থলের দিকে।
এদিকে শীত শীত ভাবটা বেড়েছে। নভেম্বরের শীত। সেই সকাল থেকে জামা কাপড় কাঁদা পানিতে ভেজা। তাই ট্রলারের জ্বলন্ত চুলা ঘেঁসে দাঁড়ালাম। উষ্ণতার জন্য। চুলায় বড় হাঁড়িতে ভাত রান্না বসানো।
আশ্চর্য বিষয় হলো, চরম দুশ্চিন্তার সেই পরিবেশের মধ্যেও চলছিল হাসি ঠাট্টা। তরুণ দুই একজন দস্যু ছাড়া কারও ভেতরে দুশ্চিন্তার কোন আলামত দেখলাম না। সেই রান্না শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা।
একটি মাঝারি নদী, তিনটি বড় খাল সাঁতরে সেই জায়গায় যেতে সময় নেননি মাস্টার। ততোক্ষণে সবাই জড়ো হয়েছেন। দস্যুদের অন্য ট্রলারগুলো বড় খালে ভাসানো। বেলায়েত সরদার তাঁর ট্রলার নিয়ে প্রস্তুত। সবাই গুছিয়ে আমাদের অবস্থান নেয়া খালে আসবে।
ওদিকে ১৫/২০ জন অপহৃত জেলে নিখোঁজ। এক দুইজন দস্যুরও খোঁজ নাই। তাদের খুঁজতে খুঁজতে মাস্টার হাঁটা পথ ধরেন। সঙ্গী এবার বাচ্চু, ফজলু, সুলতান কাকা। সন্ধ্যার হয় হয় এমন সময় তাদের চেহারা দেখলাম। তখন জানলাম আমার সফর সঙ্গীরা ভালো আছেন। ট্রলারসহ তারা আরেকটি পাশখালে ঢুকেছে। সারাদিনের দুশ্চিন্তা কাটলো সেই সন্ধ্যায় এসে।
রাতের জোয়ার শেষ হবে রাত ১২ টার পর। তখন ট্রলার ভাসাবো আমরা। তার আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। দোনলা বন্দুক আর শতাধিক গুলি নিয়ে গালকাটা রবিউল উধাও। রাতের আঁধারে অনেক কিছুই হতে পারে। সব সামলে ফিরতে হবে আমাদের। ফেরার পথটিও জটিল ছিলো…!!!