রূপান্তরের গল্প ২৯ | Rupantorer Golpo 29

হংসরাজ নদী ধরে চলছে ট্রলার, ঘুমালাম তিনদিন পর | রূপান্তরের গল্প ২৯

হংসরাজ নদী ধরে চলছে ট্রলার, ঘুমালাম তিনদিন পর | রূপান্তরের গল্প ২৯ | Rupantorer Golpo 29 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ২৯ : হংসরাজ অসম্ভব সুন্দর এক নদী। সুন্দরবনের সবটুকু সুন্দর যেন এই নদীতেই আছে। দুপাশে ঘন বন। সুন্দরী, গড়ান, গেওয়া, বাইন, কাঁকড়া, জানা, গোলপাতাসহ সব জাতের গাছ দুই পাশে। ভাটায় জায়গায় জায়গায় চর জেগেছে। সকাল বেলার কুয়াশায় অদ্ভুত এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমরা ছাড়া আর কেউ নাই। ভাটার স্রোতে ট্রলার চলছে। সুকানি ধরে বসে আছি আমি

সুন্দরবনের নদী খালে চলার কিছু নিয়ম আছে। এক পাশ দিয়ে চলতে হয়। পথে কয়েকটা বাঁক পার হতে হবে। পশুর নদীতে ওঠার সময় অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। শেষ ভাটায় ডুবো চর চলাফেরায় বড় বাঁধা। নদীর গভীরতা সম্পর্কেও কোনো ধারণা ছিলো না। তাই নদীর মাঝ বরাবর ট্রলার চালালাম। পাশে শুয়ে পড়েছেন বেলায়েত সরদার। শরীর ভালো না তাঁর।

কিছু দূর এগুতেই হাতের ডানপাশে পড়লো মাইটে খাল। এই খালের মুখেই তিন দিন আগের রাতে মাস্টার বাহিনীর সঙ্গে দেখা। একটু কাছ ঘেঁসে ট্রলার চালালাম। খালের মুখের গাছপালা আর ঝোপঝাড় দেখে মনে হলো এখানে বন বিভাগের কোনো স্থাপনা ছিলো। পরে জেনেছিলাম যে এখানে বন বিভাগের একটি টহল ফাঁড়ী ছিলো। কোনো কারণে সেই ফাঁড়ী উঠিয়ে নেয় বন বিভাগ।

প্রায় দেড় ঘন্টা একটানা চললাম। পূর্ব দিকে সোজা চলে গেলেই পড়বে পশুর নদী। কুয়াশা আর উত্তরা বাতাসে তখন কনকনে শীত। আমার সহযাত্রীরা ছইয়ের নিচে গভীর ঘুম। পশুর নদীর কাছাকাছি আসতেই কয়েকটি ডিঙ্গি নৌকা চোখে পড়লো। সম্ভবত কাঁকড়ার নৌকা। আমাদের দেখে দ্রুত ছোট খালে ঢুকে পড়লো তারা। আমি ট্রলার চাপালাম বাম দিকে। ধীরে ধীরে পার হলাম মোহনা। পাশেই বিশাল চর। আর সেই চর ভর্তি সুন্দরবনের মায়াবী চিত্রা হরিণের ঝাঁক। বিশাল বিশাল শিঙওয়ালা হরিণ। এতো বড় বড় হরিণ সচরাচর চোখে পড়ে না। শুনেছি এখানে বাঘেরও দেখা মিলে। কিন্তু হরিণ, বানর আর বন্যশুকর ছাড়া আর কিছু দেখলাম না।

পশুরে উঠতেই দুলে উঠলো ট্রলার। তিন নদীর মুখ। ভাটা শেষের দিকে। স্রোত কোথাও স্তিমিত হয়ে এসেছে। কোথাও বা চলছে উল্টো দিকে। বাম পাশ দিয়ে নেমে এসেছে শিবসা নদী। পশুরে উঠতে হলে আমাদের চালাতে হবে সোজা পূর্ব দিকে। সুন্দরবনের এই জায়গাটাকে জেলেরা বলে চারগাঙ। পশুর নদীর সঙ্গে শিবসা এসে মিশেছে এখানে। এমাথা ওমাথা দেখা যায় না। ধারণা থেকে ট্রলার চালালাম। একটু পর দেখা গেলো আশার আলো। একটা জাহাজ চলছে উত্তরে। মংলা বন্দরে জাহাজের যাওয়া আসার পথ এই পশুর নদী।

আমার শরীর আর চলছে না। চোখদুটো ঘুম। বেলায়েত সরদারকে ডেকে তুললাম। হালটা তাঁর হাতে ধরিয়ে শুয়ে পড়লাম সেখানেই। বললাম ওই জাহাজটা বন্দরে যাচ্ছে। পিছে পিছে চালান।

জোয়ার এসে গেছে। ঘন্টা চার চললেই মংলা। সরদার হাতমুখ ধুয়ে সুকানিতে বসলেন। আমি ঘুমের কাছে নিজেকে সমর্পণ করলাম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top