আমি হয়ে গেলাম দস্যুদের পৃষ্ঠপোষক, কালপ্রিট! | রূপান্তরের গল্প ৩২ | ২য় খণ্ড | Rupantorer Golpo 32 | Part -2 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৩২ | ২য় খণ্ড : ঢাকায় ফিরে পরের দিন অফিসে গেলাম। যমুনা টিভির সিনিয়রদের সঙ্গে আলাপ করলাম। ভালো একটা সংবাদ হবে। তবে এবার সংবাদটি সঠিক সময়ে প্রচার করতে হবে। প্রথমত নিশ্চিত হতে হবে সত্যি সত্যি দস্যুদলটি আত্মসমর্পণ করবে কী না! সন্দেহটি মন থেকে সরেনি তখনও। তার কারণও ছিলো।
উঠে আসার পর দস্যুনেতা মাস্টারের সঙ্গে কথা হতো খুব কম। তবে তার বাহিনীর অন্যদের সঙ্গে প্রতিদিন ফোনে কথা হতো। বিশেষ করে দলটির দ্বিতীয় ব্যক্তি সোহাগ আকনের সঙ্গে কথা বলতাম নানা বিষয় নিয়ে। গালকাটা রবিউলের ঘটনাটাও জেনেছিলাম তাদের কাছে থেকে। নানা ভাবে দস্যুদের চুড়ান্ত মনোভাব বুঝার চেষ্টা করছিলাম ফোনে ফোনে।
যার সঙ্গে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক সেই মোস্তফা শেখ অর্থাৎ দস্যুনেতাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না। একদিন কথা হলো। কুশল বিনিময়ের পরপরই ফোন ধরিয়ে দিলেন সোহাগের হাতে। বললেন আত্মসমর্পণ নিয়ে কথাবার্তা সোহাগই বলবেন, সিদ্ধান্তও তিনিই দিবেন। তার মানে দলের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে সংকট চলছে। একারণে সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিয়ে করা সংবাদটি তখন প্রচার করলাম না। গুঞ্জন শুনছিলাম। মাস্টারকে মেরে ফেলা হবে অথবা দল থেকে বের করে দেয়া হবে সেই খবরটিও ঘুরছিলো মুখে মুখে। যদি তাই হয় তাহলে আমাকে নতুন করে ভাবতে হবে।
প্রায় মাস খানেক সময় এভাবেই পার হলো। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এসে সোহাগ জানতে চাইছিলেন যে সংবাদটি কবে প্রচার করবো! বললাম তারা নিশ্চিত করলেই প্রচার হবে সংবাদ। দস্যুদলের আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নিয়ে সংবাদটি তৈরি করা ছিলো। ততোদিনে মাস্টারের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়েছে। এবার নিয়মিত মোস্তফা শেখ-এর সঙ্গে কথা শুরু হলো। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সংবদাটি প্রচারিত হলো।
সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দস্যুদল আত্মসমর্পণ করতে চায়। খবরটি এবার বেশ আলোড়ন তুললো। কিন্তু সংবাদে থেমে থাকলে চলবে না আমার। সারেন্ডারের বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে হবে। এদিকে কোস্টগার্ডের কাছে দেয়া প্রস্তাবে সাড়া মিলেনি। খুলনা RAB এর সে সময়ের অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলামের কাছে প্রস্তাব রাখলাম। তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন। বললেন, জলদস্যুরা সারেন্ডারের যে প্রস্তাব দেয় তা লোক দেখানো। সারেন্ডারের কথা বলে দস্যুরা সুযোগ নেয়! কাজেই আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দিবে না RAB। রাত নয়টার সংবাদে সরাসরি যোগ দিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানালেন তিনি। ভাবলাম সে দফায়ও ভেস্তে গেলো চেষ্টা!
দস্যুদের কেন আত্মসমর্পণ করাতেই হবে? চলমান দস্যু দমনের অভিযানে অপরাধীরা কোণঠাসা। অভিযান করেই দস্যু দমন করা হবে। আত্মসমর্পণ করিয়ে দস্যুতা দমনের কোনো প্রয়োজন নাই বলেও জানানো হলো আমাকে। একই সঙ্গে সুন্দরবনের দস্যুদের সঙ্গে আমার এতো সম্পর্ক কেন? কোন উদ্দেশ্যে এই কাজটি নিয়ে আছি এতো বছর ধরে সেকথাও উঠলো। সাংবাদিক মহলেও অনেক প্রশ্ন তখন আমাকে নিয়ে। একজন সাংবাদিকের কাজ শুধু সংবাদ করা। দস্যুদের আত্মসমর্পণ করানো আমাদের কাজ নয়। সাংবাদিক ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাঝে আমি হয়ে গেলাম একজন ব্ল্যাকশিপ বা কালপ্রিট! আমার নৈতিক অবস্থান নিয়েও চলছিলো কানাঘুষো!