রূপান্তরের গল্প ৩৫ | Rupantorer Golpo 35

গডফাদারদের ইন্ধন শুরু; দস্যুরা আস্থার সংকটে | রূপান্তরের গল্প ৩৫

গডফাদারদের ইন্ধন শুরু; দস্যুরা আস্থার সংকটে | রূপান্তরের গল্প ৩৫ | Rupantorer Golpo 35 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৩৫ : মার্চ ২০১৬। আমাদের কাজ চলছে অতি গোপনে। জলদস্যু দল মাস্টার বাহিনীর কর্মকান্ড কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। দলের মধ্যে বিভেদ বাড়ছে আত্মসমর্পণ নিয়ে। প্রায় অর্ধশত সশস্ত্র দস্যু দুই ভাগে বিভক্ত। অধিকাংশই সারেন্ডার করতে রাজি না। তবে নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্তে অটল। সুমন নামের এক দস্যুর কথা বলা হয়নি কখনও। আজ তার কথা বলি। কারণ বিবদমান সেই বিভেদের মিটাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন।

সুমন ছিলেন মাস্টার বাহিনীর মুহুরি। অর্থাৎ ম্যানেজার। ব্যাচেলর পর্যন্ত পড়া শেষ করতেই স্থানীয় রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়েন, মামলা খেয়ে ফেরারি হয়ে পড়েন। তারপর নেমে পড়েন সুন্দরবনে, যোগ দেন দস্যুতায়। অস্ত্র চালানো শিখেছেন বনের ভিতরে। আমার সঙ্গে তার পরিচয় সুন্দরবনের ভিতরে, ২০১৩ সালে। তখন ইলিয়াস বাহিনীর সদস্য সুমন।

পরের এক মাসে দলের মধ্যে বেশ সমস্যা গেছে। কখনও শুনি দস্যুরা দুই ভাগে বিভক্ত। আবার কখনও শুনি মাস্টারকে মেরে ফেলেছে দলের ভিতরের লোকজন। মেজর আদনান আর আমি প্রতিনিয়ত সেই পরিবেশ ঠান্ডা করার চেষ্টা করেছি ফোনে ফোনে। কিন্তু সে বছরের এপ্রিলে এসে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়ে। আবার তাদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। ভীষণ ঝুঁকি নিয়ে আবারও সুন্দরবনের গহীনে মাস্টার বাহিনীর আস্তানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ওদের সাথে কথাবার্তা বললাম। কিছুদিন সময় নিলো দস্যুরা। মাঝে মাস্টার আর সুমনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বললাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম যে ওই টালমাটাল মুহুর্তে আমার যাওয়া উচিৎ হবে কী না! সুমন বললেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আমাকে নিবেন তারা। পরের কয়েকটা দিন উৎকণ্ঠায় কেটেছে। কারণ দস্যুদের মধ্যে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। আত্মসমর্পণ করতে চায় না যারা তাদের মদত দিচ্ছিলো খুলনার এক গডফাদার, যিনি দস্যুদের অস্ত্রের যোগান দিতেন। এই গডফাদারদের প্ররোচনায় সুন্দরবনের দস্যুদের ভিতরে অনেকগুলো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। হত্যা-পাল্টা হত্যার ভিতর দিয়ে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। নিজেদের অনুগতদের দিয়ে দল পরিচালনা করতে না পারলে গডফাদারদের লোকসান হয়ে যায়। বনদস্যুদের বোঝানো হচ্ছিলো যে যারা সারেন্ডার করবে তাদের সবাইকে ক্রসফায়ার দেয়া হবে।

সুমন অবশ্য আমাকে আশ্বস্ত করলেন। কয়েক দিনের মধ্যে ফলাফলও পেলাম। দস্যুদলের সন্দেহজনক সদস্যদের দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ততোদিনে। অর্ধশত থেকে বনদস্যুদের সংখ্যা নেমে এসেছে ২০/২২ জনে। শুধু বিশ্বস্তরাই তখন সশস্ত্র। বাকীদের ডাঙ্গায় উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অস্ত্র-গুলিগুলো প্যাকেটবন্দী করে সুন্দরবনের কোথাও পুঁতে রাখা হয়েছে। দিন তারিখ ঠিক হলো। এপ্রিলের মাঝামাঝি রওনা হলাম আমরা। আরেক দফা দেখা হবে মাস্টার বাহিনীর সঙ্গে। আগের দফায় বড় ঝুঁকিতে পড়েছিলাম। এবার তেমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়া যাবে না। আমার সেই সফর নিয়ে জানতেন মেজর আদনান কবীর ও আমার নিউজরুমের প্রধান ফাহিম আহমেদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top