ঝুঁকি মাথায় যাচ্ছি জলদস্যুদের ডেরায় | রূপান্তরের গল্প ৩৬ | Rupantorer Golpo 36 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৩৬ : তখন মধ্য এপ্রিল, ২০১৬। আবহাওয়া বেশ গরম। নদী সাগর উত্তাল। সুন্দরবনে তখন মধু সংগ্রহের মৌসুম চলছিলো। জেলেরাও মাছ ধরছে পুরোদমে। সুন্দরবনে অনেক মানুষের আনাগোনা। বিশেষ করে মধুর মৌসুমে বাদায় মানুষের বিচরণ বেড়ে যায়। বাদা অর্থ বন। ওদিকের মানুষ সুন্দরবনকে বলে বাদা বন। কেন বনকে বাদা বলা হয়? বনজীবীদের কাছে জেনেছি, পদে পদে বাঁধা আছে বলে এই বনকে বাঁধায় ভরা বন বলা হতো। বাঁধা থেকে এসেছে বাদা। এবিষয়ে গবেষকরা আরও ভালো বলতে পারবেন। মূল প্রসঙ্গে আসি।
মাস্টার বাহিনীর সঙ্গে দেখা করবো আবার। দিন ক্ষণ ঠিক করে ঢাকা ছাড়লাম। তখন পদ্মা নদী পার হতে হতো ফেরিতে করে। তিন থেকে ছয় ঘন্টা সময় পদ্মা নদী পার হতেই চলে যায়। তখন ঢাকা থেকে সুন্দরবন উপকূলের মংলা যেতে ১০/১২ ঘন্টা সময় লেগে যেতো। এবার আমার সফর সঙ্গী গৌতম সিনহা। যমুনা টিভির ভিডিওগ্রাফার। প্রথম সুন্দরবন যাত্রা তাঁর। সুন্দরবনের উত্তাল নদীর চাপ তিনি নিতে পারবেন কী না সন্দেহ ছিলো।
ওদিকে বেলায়েত সরদার ট্রলার নিয়ে প্রস্তুত। মংলার চিলা বাজারে রাখা ট্রলার। সকালের জোয়ারে সেটি ভাসিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এভাবে ট্রলার ভাসিয়ে রাখলে কারও নজরে পড়তে পারে। তাই ইঞ্জিন চালিয়ে অন্য কোথাও রাখতে বললাম ট্রলার। আমার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখলাম। গোপন একটি নাম্বার শুধু চালু সেদিন। RAB এর মেজর আদনান, দস্যুদল আর আমার স্ত্রী’র সঙ্গে যোগাযোগে ছিলাম সেই নাম্বারে।
রাত এগারোটায় জোয়ার শেষ হবে। প্রথম ভাটায় ট্রলার ছাড়তে পারলে ভালো। কিন্তু আমরা আরও দুই ঘন্টা পরে নদীতে নামবো। গভীর রাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও বন বিভাগের চোখ এড়ানো সহজ হয়। এপ্রিল মাসের বৈরী আবহাওয়াও আমাদের জন্য সুখবর। ট্রলার রাখা পশুর নদীর পাশের নির্জন জায়গা পিকনিক কর্নারে। চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে পানিতে ভাসলাম। মধ্যরাতে মাঝ পশুর দিয়ে চললো আমাদের ট্রলার। যাচ্ছিলাম মাস্টার বাহিনীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা দেখা করতে। সুন্দরবনের কোথায়, কখন তাদের সাথে দেখা হবে সেটা শুধু আমিই জানতাম।