রূপান্তরের গল্প ৩৭ | Rupantorer Golpo 37

গভীর রাতে ভাসলো ট্রলার, ছুটলাম ভাটার স্রোতে | রূপান্তরের গল্প ৩৭

গভীর রাতে ভাসলো ট্রলার, ছুটলাম ভাটার স্রোতে | রূপান্তরের গল্প ৩৭ | Rupantorer Golpo 37 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৩৭ : চাঁদনী রাত। পূর্ণিমার গোন চলে তখন। জোয়ারে পশুর নদীর পানি থৈ থৈ করছে। সন্তর্পণে ট্রলার এসে ভিড়েছে মংলার পিকনিক কর্নারে। রওনা দিবো গভীর রাতে। তাই পথে পথে বিরতি নিয়েছি। গোপালগঞ্জে ছিলাম পুরো সন্ধ্যা। সেখান থেকে বাজার সদা করলাম।

আপনারা ভাবছেন যে বাজার সদা কেন? সুন্দরবনে নৌকা ভাসালে অন্তত তিন/চার দিনের বাজার করতে হয়। চাল থেকে শুরু করে লবণ, কিছু শুকনা খাবার, মশার কয়েল আর প্রচুর খাবার পানি নিতে হয়। সুন্দরবনের দস্যুদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের জন্য কাঁচা বাজার নিয়ে যেতাম। শাক থেকে শুরু করে মৌসুমী সবজিগুলো কিনে নিতাম বস্তা ভরে। গোপালগঞ্জে সেই বাজারগুলো করলাম। রাতের খাবার খেলাম বাগেরহাটের কাঁটাখালীতে।

রাত একটার পর পৌঁছালাম মংলায়। বাগেরহাট জেলার বন্দর নগরী মংলায় তখন সুনশান নিরবতা। গাড়ি থেকে মালপত্র নামিয়ে ট্রলার ভাসালাম। ভাটা লেগেছে ঘন্টা দুই। পূর্ণিমার গোন। সরসর করে নামছে পানি। সেই স্রোতের সঙ্গে ভাসতে ভাসতে এগুতে থাকলাম আমরা। ইঞ্জিন চালু করবো মাঝ নদীতে গিয়ে। স্রোতের তোড়ে নিঃশব্দে চলছি আমরা। সুকানিতে দাঁড়ানো আমাদের সরদার। গলুইয়ে লগি হাতে দাঁড়ানো সরদারের সহযোগী মামুন।

কোথায় যাচ্ছি আমরা? নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন বেলায়েত সরদার। বললাম, আপাতত যাচ্ছি চাইলেবগী। মংলা থেকে পশুর নদী ধরে টানা চার ঘন্টা লাগবে। ভাটার স্রোতে টেনে গেলে ভোরবেলা পৌঁছাবো।

পশুর নদীতে নোঙ্গর করা জাহাজ, লাইটারেজগুলো একে একে ছাড়ছে। বন্দর কাছেই। সেখান থেকেও ছেড়ে গেছে জাহাজ। খুলনা  থেকে ছেড়ে আসা জাহাজ-কার্গোগুলো তখন মংলা অতিক্রম করছে। এক কথায় পশুর নদী তখন ব্যস্ত। সেই ব্যস্ততাই আমাদের পথকে সহজ করে দিলো। নৌযানের ভীড়ে ভিড়ে গেলো বেলায়েত সরদারের ট্রলার।

সহযাত্রীদের ছই-এর নিচে পাঠিয়ে দিলাম। আপাতত তাদের কোনো কাজ নাই। চালু হলো ট্রলারের ইঞ্জিন। বেলায়েত সরদারের ট্রলারটি তখন বেশ চলতো। ইঞ্জিন ছিলো একগুতো বা সিঙ্গেল স্ট্রোক। বিকট শব্দ। কিন্তু বিশাল পশুর নদীর স্রোত, জৈষ্ঠ মাসের এলোমেলো বাতাস, নদীর রোলিং, বড় বড় ঢেউ-এ সেই শব্দ মিলিয়ে যাচ্ছে। উথাল পাথাল নদীর মাঝ দিয়ে ছুটছে ট্রলার।

সুকানিতে বেলায়েত সরদার। পাশে আমি। পিছনের ছোট্ট রান্নাঘরে জ্বলছে গ্যাসের চুলা। মামুন চা বসিয়েছে। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। মাথায় মহা দুশ্চিন্তা! মাস্টার বাহিনীর সঙ্গে দেখা করে বেঁচে ফিরতে পারবো তো?

(ছবিটি সেই সফরে তোলা। পশুর নদীর মাঝ দিয়ে ছুটছি আমরা। চাঁদনী রাত। এপ্রিল ২০১৬ | সুন্দরবন)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top