সন্দেহ হলো দস্যু রাজনকে নিয়ে | রূপান্তরের গল্প ৪২ | Rupantorer Golpo 42 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
বনদস্যু রাজনকে আগে কখনও দেখিনি। তার নামও শুনিনি। আগের বার মাস্টার বাহিনীর আস্তানাতেও তাকে দেখিনি।
রূপান্তরের গল্প ৪২ : সেবার তাদের আস্তানায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে হাত বাড়িয়ে তাদের ট্রলারে তোলা, মাসাজ করে দেয়া, চটপটে কথাবার্তা নিয়ে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করা, সবকিছু মিলিয়ে তাকে নিয়ে সন্দেহ হলো আমান। ভাষা তার খুলনা অঞ্চলের নয়। গল্পে গল্পে জানলাম বাড়ি তার নোয়াখালীর হাতিয়ায়। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের বাইরে বনদস্যু খুব কমই দেখেছি। সুন্দরবনের দস্যু জগতে এটি একটি ব্যতিক্রম। বড় কোনো অপরাধে মামলা খেয়ে পালিয়ে থাকার জায়গা হিসাবে রাজন সুন্দরবনকে বেছে নিয়েছে। সুন্দরবনের দস্যুতায় সে নাম লিখিয়েছে কিছুদিন আগে। আত্মসমর্পণের বিষয়ে তার উৎসাহ ছিলো অনেক বেশি। এই অতি উৎসাহ আমার মনে সন্দেহ জাগায়।
পাশাখালী বন টহল ফাঁড়ীর পিছনে আমাদের ট্রলারগুলো রাখা। বড় নদী থেকে কিছুই দেখা যায় না। ভাটার সময় সেগুলো কাঁদার ওপর আটকে থাকবে। তখন যদি প্রশাসনের কেউ আসে? আমরা তো পালাতে পারবো না। দস্যু সোহাগ বললো, ভাটার সময় খালের মুখ শুকিয়ে যায়। তখন বড় নদী থেকে কেউ নৌযান নিয়ে ঢুকতে পারবে না। স্পিডবোটও আটকে যাবে পশুর নদীতে। পিছনের বড় খালগুলো থেকেও সেখানে কেউ নৌযান নিয়ে ঢুকতে পারবে না। কারণ ভাটার সময় খালের মুখগুলো শুকিয়ে যায়। একারণেই ভাটার সময় দস্যুরা নিজেদের নিরাপদ মনে করতো।
আগের বারের মতো কোনো ঝামেলায় পড়তে চাই না, গোলাগুলিতে আবার পড়তে চাই না। দস্যুরা পশুর নদীর তীরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বড় নদীর উত্তর থেকে দক্ষিণের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পরিস্কার দেখা যায়। উজান কিংবা ভাটি থেকে কোনো জাহাজ, গানবোট, ট্রলার, স্পিডবোট কিং ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা আসলেও অনেক দূর থেকে দেখা যায়। তার মানে এখানে একজন পাহাড়ায় থাকলে কোনো বিপদ আসার অনেক আগেই আমরা সরে যেতে পারবো।
পাশাখালী ফরেস্ট অফিসে দুটি পুকুর আছে। একটি গোসলের জন্য, আরেকটি পুকুরের পানি শুধু খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। একজন বনকর্মীকে দেখলাম ছোট পুকুর থেকে খাবার পানি নিচ্ছেন। পাশাখালীর এই পুকুরগুলোকে ঘিরে আমাদের অনেক স্মৃতি। ফরেস্ট অফিসটি নিয়েও অনেক গল্প আছে। সময় করে লিখবো। অফিসে যেতে সংকোচ লাগছিলো আমার। তবে সেই অফিসে বনদস্যুদের যাওয়া আসা ছিলো স্বাভাবিক একটি বিষয়। বড় নদীর পাশে দুজনকে পাহাড়ায় রেখে ট্রলারের দিকে রওনা হলাম। সকালের নাস্তা প্রস্তুত। ভাতের সঙ্গে হরিণের মাংস। আমি হরিণ খেতে চাই না। তাই আগের দিনের মাছের তরকারি দিয়ে নাস্তা সারলাম। এরপর চা-এর কাপ হাতে মূল আলোচনায় বসলাম। দস্যুনেতা কাদের মাস্টার ওরফে মোস্তফা শেখ, সোহাগ আকন, ফজলু, সুলতান কাকাসহ ছয়জন দস্যুকে বসলাম।
কবে আত্মসমর্পণ করবেন? “আপনি যেদিন বলবেন সেদিন…” সরাসরি প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দিলেন সোহাগ। তখন শর্ত ছিলো একটাই- নিরাপদ আত্মসমর্পণ। আলোচনা এগিয়ে চললো… পাশের ট্রলারে দাঁড়িয়ে রাজন। আমাদের আলোচনা শুনছে অন্যদিকে তাকিয়ে। কিন্তু আমার চোখ-কান খোলা, সবার দিকেই নজর রাখছিলাম। রাজনের বিশ্বস্ততার বিষয়ে নিচু স্বরে সোহাগকে জিজ্ঞেস করলাম। তারা বললো, সমম্যা নাই। আমি বললাম, সমস্যা আছে।