রূপান্তরের গল্প ৪৩ | Rupantorer Golpo 43

সন্দেহ কাটলো সেই সফরে, সারেন্ডারে রাজি জলদস্যুরা | রূপান্তরের গল্প ৪৩

সন্দেহ কাটলো সেই সফরে, সারেন্ডারে রাজি জলদস্যুরা | রূপান্তরের গল্প ৪৩ | Rupantorer Golpo 43 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৪৩ : পাশাপাশি তিনটি ট্রলার। জলদস্যু মাস্টার বাহিনীর নৌবহর। প্রতিটি ট্রলারে সশস্ত্র দস্য ছাড়াও একজন করে বাবুর্চি থাকতো। তাদের কাজ দুই বেলা রান্না করা। গলুই-এ মাটির চুলা। লাকড়ি দিয়ে রান্না হতো। বড় বড় হাঁড়িতে ভাত বসানো হতো। সাধারণত একটি তরকারি দিয়েই খাবার দাবার সেরে ফেলতো তারা। রান্নার পানি হিসাবে ব্যবহার করা হতো পুকুরের মিঠা পানি। ড্রামে করে সেই পানি মজুত করা থাকতো। বর্ষার সময় পানির জন্য কষ্ট করা লাগতো না।

বৃষ্টির পানি ধরে রাখার সব ব্যবস্থা ছিলো সেখানে। তখন এপ্রিল মাস। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়। কাজে খাবার ও রান্নার পানি নিয়ে খুব বেশি সংকট ছিলো না। তবুও পাশাখালীর পুকুর থেকে ড্রামে ড্রামে পানি ভরে রাখা হচ্ছিলো। দস্যুরা খাওয়া দাওয়া করতো দিনে দুই বার। সকালে আর বিকালে। সন্ধ্যার পর ভারী খাবারের কোনো ব্যবস্থা ছিলো না।

দুপুর গড়িয়ে গেছে গল্প করতে করতে। সকাল থেকে লাল চা খাচ্ছি। কিন্তু আমি দুধ চা খাই। সারা রাত জেগে থাকা আমাদের ট্রলারের সহযোগী মামুন বিশ্রাম নিচ্ছিলো। তাকে বিরক্ত করিনি। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে সে আমার চা-এর খোঁজ নেয়। তারপর দ্রুত দুধ চা বানিয়ে আনে আমার জন্য। সেই অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে এক মগ দুধ চা আমাকে চাঙ্গা করে তুললো।সুন্দরবনে আমার সফরগুলোতে মামুনের মতো অনেককে পেয়েছি। নিজের জীবন, রুটি-রুজির কথা চিন্তা না করেও তারা আমাকে সময় দিয়েছে। বেলায়েত সরদার তাদের মধ্যে অন্যতম। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়, ভালো লাগা থেকে তারা আমাকে সহযোগিতা করেছে, ঘিরে রেখেছে সব সময়।

চা খেতে খেতে দস্যুদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম। আগেই বলেছি, আত্মসমর্পণে কোনো শর্ত থাকবে না। শুধু মাত্র নিরাপদ আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করা হবে। এরপর আইনী লড়াই তাদের নিজেদের মতো করে করতে হবে। সরকার তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকবে। এটুকুই। দস্যুদের বাড়তি কোনো আশা দেখাইনি কখনও। তখনকার বরিশাল RAB এর উপ অধিনায়ক মেজর আদনান কবীরের সঙ্গে তাদের কথাবার্তা চলছে। আদনানকে তারা বিশ্বাস করছে, ভরসা করছে। অর্থাৎ RAB-এর ওপর আস্থা এসেছে। এদিকে আমার কাজ ধীরে ধীরে সহজ হচ্ছে। আমিও ভরসা পাচ্ছি এবার। মনে হচ্ছিলো সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দস্যু দলটি সত্যিই আত্মসমর্পণ করবে।

বললাম আবার একটা সংবাদ করতে চাই। দস্যুরা যে যোগাযোগে আছে, সারেন্ডারের সিদ্ধান্তে অটল আছে সেটি প্রমাণ করার জন্যই সংবাদটি করা জরুরি। তখন ২০/২২ জন দস্যু সশস্ত্র অবস্থায়। বাঁকী অস্ত্রগুলো বনের ভিতরে লুকিয়ে রাখা আছে। বললাম যেকটি অস্ত্র বাইরে আছে, যে কয়জন সশস্ত্র অবস্থায় আছেন তাদের নিয়েই নিউজটি করবো। দুপুরের রান্না হতে থাক। আমরা কাজ সেরে আসি। গৌতম সিনহা আমার ভিডিও জার্নালিস্ট। বললাম ক্যামেরা বের করেন।

সেদিন আকাশ বেশ পরিস্কার। বাতাস ছিলো। তবে পূর্ব আকাশে ছিলো মেঘ। পশুর নদীতে আমাদের উল্টো পাশের খালটির নাম ঘসিয়াঙ্গাড়ী। এপাশ থেকে দারুণ লাগছিলো। পাশাখালী ফরেস্ট অফিসের পিছনে পুকুর। তার সঙ্গেই সুন্দরবন। গড়ানের বন। মাঝে মাঝে সুন্দরী আর বাইন গাছ। ছোট ছোট গেওয়ার ঝোপ আছে। নিচে দুর্বা ঘাস। এবারও দস্যুদের পক্ষে কথা বলবে একজন। সোহাগ আকন আবারও ক্যামেরায় আসবেন। প্রথম বার গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে সাক্ষাতকার দিলেও এবার চেহারা দেখিয়ে সাক্ষাতকার দিতে রাজি। রাজি হলাম না। বললাম পিছন থেকে ইন্টারভিউ করবো। আপনাদের চেহারা এখনই দেখাবো না। ক্যামেরার সামনে খোলামেলা কথা হলো। অনেক কথা। সেই কথাগুলো সব প্রচারযোগ্য ছিলো না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top