রূপান্তরের গল্প ৪৪ | Rupantorer Golpo 44

রহস্যজনক চরিত্র ছিলো দস্যু রাজন | রূপান্তরের গল্প ৪৪

রহস্যজনক চরিত্র ছিলো দস্যু রাজন | রূপান্তরের গল্প ৪৪ | Rupantorer Golpo 44 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৪৪ : দস্যুনেতা কাদের মাস্টারের হাতে যে বন্দুকটি ছিলো সেটি নতুন। পর পর আটটি গুলি বের হয়। সেই বন্দুক কিনতে খরচ হয়েছিলো ১৪ লাখ টাকা। বনদস্যুরা বলতো শ্যুটার। কেউ বলতো এইট শ্যুটার। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যে শর্টগানটি দেখা যায় মাস্টারের বন্দুক একই মডেলের। গুলি রাখতো কোমড়ের ব্যাগ-এ। পোসেস নামে পরিচিত সেই ব্যাগগুলো বেশ বড়। শতাধিক বন্দুকের গুলি রাখা সেখানে। পোসেসগুলো বেশ ভারী। আমার পক্ষে সেই ওজন বেশিক্ষণ নেয়া কঠিন। সোহাগ আকনসহ আরও সেই বাহিনীর মালিক-সদস্যরা একই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতো। (মালিক সদস্যের অর্থ হলো যারা অস্ত্রের মালিক ছিলো)

এ ধরণের দামী বন্দুক মাস্টার বাহিনীতে ছিলো সাতটি। একটা ছিলো থ্রি নট থ্রি। আর ছিলো কয়েকটা পয়েন্ট টু টু বন্দুক।

বনদস্যু রাজন ছিলো সাধারণ সদস্য, দলে নতুনও। অথচ তার হাতে থাকতো সবচেয়ে আধুনিক পয়েন্ট টু টু বন্দুকটি। এক ম্যাগজিনে সম্ভবত ১৮টি গুলি ধরতো একসাথে। আরেকটিতে ১১টি। চাইলে একটানা সবগুলো গুলি চালানো যেতো সেই বন্দুক দিয়ে। নতুন সদস্য হিসাবে রাজনের হাতে এতো কার্যকর অস্ত্রটি কেন দিলো দস্যুরা? প্রশ্নটি মাথায় ছিলো কিন্তু কাউকে জিজ্ঞেস করিনি।

রাজনের বাড়ি হাতিয়াতে। দস্যু দলটির কারও সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্ক ছিলো না। কারও সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিলো না। তবুও কেন মাস্টার বাহিনীর তিনটি ট্রলারের একটির নেতৃত্বে রাজন? সোহাগের ইন্টারভিউ যখন চলছিলো তখনও ক্যামেরার পিছনে দাঁড়ানো সে। ওই সফরে আমাকে নজরের বাইরে রাখেনি। প্রচুর গল্পও হলো।

হাতিয়ার একটি গ্রামে বাড়ি। নদী সাগরের সঙ্গে সম্পর্ক তার ছোটবেলা থেকে। পড়াশোনা সামান্য। তরুন বয়সে চাকরি নেয় চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জগামী মালবাহী কার্গোতে। রাজনের দাবি, এলাকায় একটি মারামারির ঘটনায় মামলা খেয়ে ফেরারি হয়েছে সে। লোকালয়ে থাকার উপায় নাই বলে সুন্দরবনে এসেছে গা ঢাকা দিতে। আত্মসমর্পণ করবেন তো? উত্তরে রাজন বললো, সারেন্ডারের কথা শুনেই মাস্টার বাহিনীতে যোগ দিয়েছে সে। আমার বিশ্বাস হয়নি।

চোখে মুখে রাজনের বুদ্ধির ছাপ। চতুর না হলে কয়েক দিনের মধ্যে বড় দস্যুদলটিতে ভিড়ে নিজের অবস্থান তৈরি করা সম্ভব না। এছাড়া অস্ত্র চালানোতে পারদর্শীতা, সাগরের পথাঘাট চেনা তার। জলদস্যু জগতে এমন সদস্যের কদর বেশি ছিলো। পাশাপাশি ডাক্তারি বিদ্যা সম্পর্কে ধারণা ছিলো রাজনের। গহীন বনে কেউ অসুস্থ্য হলে তার চিকিৎসা, ইনজেকশন দেয়া, গোলাগুলিতে কেউ আহত হলে অস্ত্রোপচারের কাজটিও রাজনই করতো।

আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতকার শেষে আমার আরও কিছু ছবি নেয়া প্রয়োজন। দস্যুরা অস্ত্র হাতে দাঁড়ানো, হেঁটে বেড়ানোর ছবি তুলতে হবে। আকাশে মেঘ জমেছে ততোক্ষণে। তাই দ্রুত সবাইকে তৈরি হতে বললাম। আমার ক্যামেরা ম্যান ছবি তোলার কাজ শুরু করলেন। খেয়াল করলাম, ছবি দেয়ার দলে রাজন নাই। যদিও কারও চেহারা দেখানো হয়নি, তবুও কোনো রকম ঝুঁকিতে যায়নি রাজন।

সেই সফর শেষে ফিরেছিলাম রাতে। আসার আগে মাস্টারের কানে কানে আমি বলেছিলাম, রাজনকে আমার সন্দেহ হচ্ছে। সাবধানে থাকবেন। জবাব দেননি মাস্টার। শুধু ইশারায় বুঝালেন কিছু একটা। বুঝলাম, দস্যুনেতার হাতে দলের নিয়ন্ত্রণ নাই। চুড়ান্ত আত্মসমর্পনের দিন রাজন আত্মসমর্পণ করেননি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top