রূপান্তরের গল্প ৪৯ | Rupantorer Golpo 49

চুড়ান্ত হলো সিদ্ধান্ত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী | রূপান্তরের গল্প ৪৯ | Rupantorer Golpo 49

চুড়ান্ত হলো সিদ্ধান্ত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী | রূপান্তরের গল্প ৪৯ | Rupantorer Golpo 49 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৪৯ : সকাল থেকে ক্ষণে ক্ষণে ঘটনা মোড় নিচ্ছে। ফোনে ফোনে চলছে যোগাযোগ। অসম্ভব একটি বিষয় কী ভাবে যেন সম্ভব হতে যাচ্ছে। ছয় বছর ধরে চলা আমার কাজ মনে হচ্ছিলো হঠাৎ করেই আলোর মুখ দেখবে। অথচ সকালের প্রথম ফোনটি ছিলো সংশয়ে ভরা। RAB এর গোয়েন্দা প্রধানের প্রশ্ন, মেজর আদনান কবীরের হতাশা আমার মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছিলো। বিকাল হতে হতে সেই হতাশা আশায় মোড় নিলো।

লে কর্নেল আজাদের সঙ্গে কথা হলো। বললাম, দিন-ক্ষণ ঠিক করেন। বেশ অবাক তিনি। বললেন, তাঁদের কাছে তথ্য ছিলো যে শেষ পর্যন্ত মাস্টার বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে না। আমার ফোনে তিনি আশ্বস্ত হলেন কী না বুঝতে পারলাম না। শুধু ফোনেই কয়েকবার কথা। কখনও দেখাও হয়নি। দুই মিনিট পর ফোন আসলো বরিশাল থেকে। মেজর আদনানের প্রশ্ন, সত্যিই সারেন্ডার করবে দস্যুরা? আমি তো কনফিডেন্ট! তোমরা দিন ঠিক করো।

সেই বিকালেই ঠিক হলো ২০১৬ সালের মে মাসের শেষের দিকে আত্মসমর্পণ হবে। সেভাবেই জানিয়ে দিলাম দস্যুদের। একই সঙ্গে বিষয়টি গোপন রাখতে বললাম। আমি নিজেই বিষয়টি পরের কয়েকদিন গোপন রাখি। পরদিন থেকে তিন পক্ষের ফোনালাপ চললো। সুন্দরবনের দস্যুদল মাস্টার বাহিনী, মেজর আদনান কবীর আর আমি। তিন পক্ষের লক্ষ্য একটাই।

সেদিন বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যাই। দস্যুদের আত্মসমর্পণ নিয়ে তাঁর একটা ইন্টারভিউ করবো। কিন্তু মন্ত্রী তখনও কিছুই জানেন না। আসলে পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য RAB সময় নিচ্ছিলো। আমার কথার ওপর এতো বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো পরিবেশ তখনও ছিলো না। RAB মহাপরিচালক তখন বেনজীর আহমেদ। জলদস্যু বনদস্যু দমন সংক্রান্ত বিশেষ টাস্কফোর্স এর প্রধানও তিনি। কাজেই অনেক বড় দায়িত্ব তাঁর ঘাড়ে। বাহিনীর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তও তাঁকেই নিতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বললেন তিনি কিছু জানেন না। বললাম একটু RAB মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন। ফোন দিলেন। জানতে চাইলেন বিষয়টা কী? ওপাশ থেকে জানানো হলো যে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দস্যুদল সারেন্ডার করতে চায়। মন্ত্রী বললেন সেই অনুষ্ঠানে তিনি নিজে উপস্থিত থাকতে চান। আমার কাজ আরও সহজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইন্টারভিউ নিয়ে অফিসে ফিরি। পরের দিন দ্বিতীয় দফার সংবাদটি প্রচার করি যমুনা টেলিভিশনে।

দস্যু জগতে আলোচনা বেড়ে যায়। বনদস্যুদের পৃষ্ঠপোষকরা নড়েচড়ে বসেন। বুঝলাম এবার আর কোনো ভাবেই সময় নেয়া যাবে না। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। পরদিন আলোচনা শেষে RAB থেকে সিদ্ধান্ত হয় যে ২৮ মে সকালে মংলায় অনুষ্ঠিত হবে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। তবে বিষয়টি গোপন রাখা হলো। এরপর শুরু হলো আমার মূল কাজ। হাতে বেশি সময় নাই, মাত্র এক সপ্তাহ।

(ছবিটি ক’দিন পরের। মাস্টার বাহিনী সেদিন সারেন্ডারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top