রূপান্তরের গল্প ৫১ | Rupantorer Golpo 51

গোছগাছ শুরু করলো দস্যুবাহিনী সারেন্ডারে আসবে মাস্টাররা | রূপান্তরের গল্প ৫১

গোছগাছ শুরু করলো দস্যুবাহিনী সারেন্ডারে আসবে মাস্টাররা | রূপান্তরের গল্প ৫১ | Rupantorer Golpo 51 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৫১ : আমার কী হবে ভাই? দস্যুরা জঙ্গলে। আমি বরিশালে। আপনি ঢাকায়। ওদিকে জলদস্যু মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিন তারিখ চুড়ান্ত। ২৮ মে সকাল দশটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসবেন মংলায়। যদি দস্যুরা না আসে? যদি কথা না রাখে? টেলিফোনে বলছিলেন বরিশাল RAB-এর তখনকার উপ অধিনায়ক আদনান কবীর। বললাম, অনিশ্চিত পথে নেমেছি যখন তখন ঝুঁকি থাকবেই। তাই বলে বসে বসে দুশ্চিন্তা করার মানুষ আমি না। বললাম, দস্যুদের সঙ্গে করে নিয়ে তোমাদের হাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার। পরের বিষয়গুলো নিয়ে তোমরা কাজ করো। মেজর আদনান ক্যাডেট কলেজ সূত্রে আমার ছোট ভাই। সেজন্য তাঁকে তুমি বলে ডাকতাম। বললাম, ভরসা রাখো। কে কী বলছে শোনার দরকার নাই।

আদনানকে ভরসা রাখতে বললাম ঠিকই। কিন্তু আমি কার ওপর ভরসা রাখবো? সামনে যা কিছুই হোক, সফল হলে তা ভাগাভাগি হবে। কিন্তু ব্যর্থতার দায় হবে শুধুই আমার। আমি সব দায় নিতে প্রস্তুত। ফোন দিলাম দস্যুনেতাকে। সেদিন সম্ভবত ২০১৬ সালের ২২/২৩ মে।

আমাদের আর কয়টা দিন সময় দেয়া যায় না? জঙ্গল থেকে যখন কথাটি সোহাগ বলছিলো তখন বকা দেয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা ছিলো না। ভীষণ রাগ করলাম। আর যতোটা না রেগেছি তার চেয়ে বেশি দেখালাম। তাদের চাপে রাথতে হবে পুরোটা সময় এটুকু মাথায় ছিলো শুধু। বললাম, আর কোনো এদিক সেদিকের সুযোগ নাই। এদিকে সবকিছু রেডি, এখন শুধু আপনাদের উঠে আসার অপেক্ষা। বললাম, কাল আমি ঢাকা থেকে রওনা দিচ্ছি। সোহাগ বললো, পরশু আসেন। ২৬ মে ২০১৬ সকাল সকাল ঢাকা ছাড়বো আমরা।

আমার সহকর্মী ভিডিওগ্রাফার পলিনকে ফোন দিলাম। যন্ত্রপাতি গুছিয়ে রাখতে বললাম। তারপর আমার নিউজরুমের প্রধান ফাহিম আহমেদকে জানালাম পুরো বিষয়। তিনি চোখ বন্ধ করে আমার ওপর ভরসা রাখেন। বললেন, রওনা দিন। সম্প্রচারের পরিকল্পনা তাঁকে বুঝিয়ে দিলাম। বললাম, সারেন্ডারে আগে আগে অন্যরা জানবে, তার আগে নয়। গোপন থাকলো পুরো বিষয়।

২৬ মে ভোরবেলা ঢাকা ছাড়লাম। ওদিকে বেলায়েত সরদারকে জানিয়ে রাখলাম। ওই রাতেই বনে ঢুকবো আমরা। বিকালে আমাকে জানিয়ে দেয়া হবে কোথায় দেখা হবে মাস্টার বাহিনীর সঙ্গে।

আমরা যাওয়ার আগে সেখানে পৌঁছে যাবে মাস্টার বাহিনীর দস্যুদের পরিবারের সদস্যরা। অতি গোপনে মাস্টার ও সোহাগের স্ত্রী-সন্তানদের আগেই পাঠিয়েছিলাম। দস্যুরা যাতে কিছুতেই মত পরিবর্তন না করে সেজন্যই বাড়তি ঝুঁকিটি নিয়েছিলাম। এছাড়া পরিবারের সদস্যরা থাকলে মনটাও নরম থাকবে। শেষ মুহুর্তে কোনো গোলাগুলি বা অঘটন ঘটবে না….!!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top