রূপান্তরের গল্প ৫৩ | Rupantorer Golpo 53

অতি গোপনে নামলাম পশুর নদীতে | রূপান্তরের গল্প ৫৩

অতি গোপনে নামলাম পশুর নদীতে | রূপান্তরের গল্প ৫৩ | Rupantorer Golpo 53 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৫৩ : একটা গোপন ফোন নাম্বার ছিলো আমার। সেই সিমটি ফোনে ঢুকালাম। অন্য ফোনগুলো সব বন্ধ করে ফেললাম। বেলায়েত সরদারকে ফোন দিয়ে ট্রলারের খোঁজ খবর নিলাম। বললাম, মংলা থেকে কোনো কেনাকাটার প্রয়োজন নাই। বাজার করতে গেলে আমাদের সুন্দরবনে নামার খবর ছড়িয়ে যেতে পারে। আমরা কাউকে বুঝতে দিবো না যে সুন্দরবনে যাচ্ছি।

রাতের ভাটায় নামবো সুন্দরবনে। আগের বারের মতো করে কঠোর গোপনীয়তা নিশ্চিত করেছিলাম। পথে বিরতি দিলাম গোপালগঞ্জে। সেখান থেকে সুন্দরবন সফরের জন্য বাজার-সদা সেরে নিলাম। গোপালগঞ্জের সাংবাদিক রাজীব আহমেদ রাজুর বাসা ছিলো আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা। সেখানে বসে দস্যুদল আর RAB এর সাথে যোগাযোগ রাখছিলাম। একটু বিশ্রামও নিতে হবে তখন। কারণ পারের কয় রাত আমাকে জেগে থাকতে হবে।

গোপালগঞ্জ থেকে রওনা দেয়ার আগে অফিসের গাড়ি থেকে আমার প্রতিষ্ঠান যমুনা টেলিভিশনের স্টিকার খুলে ফেলা হলো। রওনা দিয়ে বাগেরহাট থেকে সহকর্মী ইয়ামিন ভাই যোগ দিলেন। রামপাল থেকে গাড়িতে উঠলো সোলাইমান।

সোলাইমানের দস্যুনাম ছিলো সোলাই। সুঠামদেহী যুবক। মাস্টার বাহিনীর সদস্য। আরও একজন দস্যু আসবে সাতক্ষীরা থেকে। দস্যূ দলের মুহুরি বা ম্যানেজার সুমন। সারেন্ডারের আগে এই দুইজন যে কেন লোকালয়ে এসেছিলো এখনও পরিস্কার না। ধারণা করছিলাম, আমাদের গতিবিধি দেখার জন্যই তাদের পাঠানো হয়েছিলো। যদিও দস্যুদের জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসাটা তাদের জন্য চরম ঝুঁকির। সোলাই বললো, আপনার কাছে আসা পর্যন্ত ঝুঁকি ছিলো। এখন আর টেনশন নাই। গল্প করতে করতে মংলা পৌঁছালাম। উঠলাম একটি পর্যটন মোটেল-এ। তখন রাত দশটা পেরিয়েছে।

দস্যুদের আরেক জন সুমনকে নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ছিলাম। সাতক্ষীরার সহকর্মী রাজীবের দায়িত্ব ছিলো তাকে নিয়ে আসার। একটা গাড়িতে করে ঘন্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছে যায় তারা। দুইজন বনদস্যু আমার সঙ্গে। যাদের নামে হুলিয়া জারি হয়ে আছে। ধরা পড়লেই ক্রসফায়ার। ওরা সারেন্ডার করবে। কাজেই ওই দুইজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব ছিলো।

ট্রলারসহ বেলায়েত সরদার আছেন বড় নদীতে। ডাক দিলেই চলে আসবেন। রাত তখন ১২টা পার হয়েছে। এরই মধ্যে ভাটা লেগে গেছে। বড় নদী পশুরের স্রোত ঘুরে গেছে। মংলা বন্দর থেকে জাহাজ ছাড়ছে একে একে। বেলায়েত সরদার ফোন করে বললেন, মাঝ নদীতে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। যেকোনো সময় জাহাজ বা কার্গোর ধাক্কা লাগতে পারে। বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসময় কোনো রকম ঝুঁকি নেয়া যাবে না।

দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। যে হোটেলে ছিলাম সেটি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের। নাম- হোটেল পশুর। ম্যানেজার সাহেব বেশ সজ্জন, আমাকে পছন্দ করতেন। ফোন দিয়ে তাঁকে বললাম যে ঢাকা ফিরতে হবে আমাদের। রাতেই বের হবো। একটু বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আমরা বের হলাম। পাশেই পশুর নদী। এবার মংলা ফেরি ঘাটের পাশে ভিড়েছে আমাদের ট্রলার। এক কাপ চা খাওয়ার ইচ্ছা ছিলো। মংলা ঘাটে ভালো দুধ চা পাওয়া যেতো। গরুর দুধের চা। কিন্তু ওখানকার সবাই পরিচিত। নিজেদের অবস্থান কাউকে জানানো যাবে না। আমরা গোপন মিশনে আছি। যাবো জলদস্যু বাহিনীর কাছে। সঙ্গে দু’জন দাগী জলদস্যু। একটু এদিক সেদিক হলে সবকিছু ভেস্তে যাবে।

পশুর নদী ধরে আবারও চুরি করে সবার চোখ এড়িয়ে পৌঁছাতে হবে জলদস্যুদের আস্তানায়। সেই সফরটি ছিলো ঘটনাবহুল, অতি গুরুত্বপূর্ণ আর সাসপেন্স-এ ভরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top