দেখলাম বেলায়েত সরদারের কেরামতি! | রূপান্তরের গল্প ৫৫ | Rupantorer Golpo 55 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৫৫ : রাত সোয়া ১টা। ঢাংমারী ফরেস্ট অফিস থেকে টর্চ জ্বালিয়ে সিগন্যাল দেয়া হলো। যাচ্ছিলাম পশুর নদীর মাঝ দিয়ে দক্ষিণে। আপাতত আমাদের গন্তব্য পাশাখালী। জলদস্যু দল মাস্টার বাহিনীর সঙ্গে এই জায়গায় দেখা করেছিলাম গতবার।
সুকানিতে বেলায়েত সরদার। যথারীতি পাশেই দাঁড়ানো আমি। অন্তত আগামী তিন ঘন্টা আমি সরদারের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকবো। কারণ এই সময়ের মধ্যে অনেকগুলো বন পহল ফাঁড়ী পড়বে, একটি কোস্টগার্ডের ভাসমান পোস্ট পড়বে। এছাড়া বন বিভাগের ভাসমান টহলও থাকতে পারে। বনকর্মী ও কোস্টগার্ডের চোখ এড়িয়ে ভদ্রা পর্যন্ত পার হওয়াটা বেশ কঠিন। কিন্তু সবার চোখ এড়িয়েই আমাদের এই পথ পারি দিতে হবে। ভদ্রার পর সুন্দরবনের দুর্গম অঞ্চলে চলাফেরা করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
ট্রলারে দুইজন দাগী জলদস্যু আছে। সেই দুশ্চিন্তাটা মাথা থেকে সরানোর সুযোগ নাই। তাই এই সফরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে পড়া যাবে না কোনো ভাবে। এছাড়া সারেন্ডারের চুড়ান্ত পর্যায় চলছে তখন। আমাদের নির্বিঘ্নে দস্যুদের কাছে পৌঁছানোটা ছিলো পুরো মিশনের সবচেয়ে স্পর্শ্বকাতর সময়। এসব ভাবতে ভাবতেই দেখা নদীর ডান পাশ থেকে টর্চ এর ইশারা।
শুরুতেই বিপত্তি। কী করি এখন! থামবো? কয়েক মুহুর্ত ভাবলাম। বললাম স্পিড বাড়ান, দাঁড়ানো যাবে না। পশুর নদীর ডান পাশে ঢাংমারী ফরেস্ট অফিসের সামনে ভাসমান ট্রলার থেকে আমাদের থামতে বলা হচ্ছে। বেলায়েত সরদারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হলাম যে তারা আমাদের থামতে বলছে। কী করবো ভাই? জিজ্ঞেস করলেন আমাদের ক্যাপ্টেন বেলায়েত সরদার। বললাম, দাঁড়ানো যাবে না। স্পিড বাড়ানো যাবে? সরদার বললেন, একটু বাড়ানো যাবে। বললাম, এখন ট্রলারের গতিটা কমান। টর্চ জ্বালিয়ে পাল্টা ইশারা দিলাম আমি। উনারা যাতে মনে করেন যে আমরা তাদের ইশারা পেয়েছি।
হুট করে বললাম এবার গতি বাড়ান। দ্রুততার সঙ্গে পালাতে হবে আমাদের। ওরা ট্রলার ছাড়ার আগেই ট্রলার নিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে হবে। সোজা কথা হলো পালাতে হবে।
ট্রলার নিয়ে পশ্চিম পাশ ধরলাম। এরপর করমজল, জোংড়া ফরেস্ট অফিস পার হলাম। সেবার বেলায়েত সরদারের খেলা দেখলাম। জঙ্গলে কী করে পালাতে হয়, দেখলাম নিজের চোখে। মাথায় অনেক রকমের দুশ্চিন্তা ছিলো। কিন্তু সেই রাতে বন বিভাগের সঙ্গে লুকোচুরি করতে গিয়ে সেই দুশ্চিন্তা উড়ে যায়। সামনে অনেক পথ। সূর্য ওঠার আগেই পৌঁছাতে হবে দস্যুদের আস্তানায়।