নিরস্ত্র করা হলো বাঁকী দস্যুদের | রূপান্তরের গল্প ৬৯ | Rupantorer Golpo 69 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৬৯ : ঝামেলা করতে পারে এমন দস্যুদের হাত থেকে অস্ত্র-গুলি নিয়ে নেন। ঝুঁকি নেয়া যাবে না একদম…!! সোহাগ আর মাস্টাররের কানে কানে কথাগুলো বললাম। যারা সারেন্ডার করবেই না, তাদের হাত থেকেও অস্ত্রগুলো নিয়ে নেন। চোখের ইশারায় দায়িত্ব দেয়া হলো সোলাইমানকে। দস্যুমহলে সোলাই নামে পরিচিত সে। ওই বাহিনীর সবচেয়ে কণিষ্ঠ সদস্য হলেও বুদ্ধিমান, সুঠামদেহী। অস্ত্র চালানোতেও পারদর্শী সে। বিশ্বস্ত সহচর হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি সোলাইকে দেয়া হলো।
মাস্টার বাহিনীর দস্যুদের সবাইকে সামনে এনে বললাম, যারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করবেন শুধু তারাই যাবেন RAB হেফাজতে। অন্যরা যাবেন আমার সাথে। তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব থাকবে আমার ঘাড়ে। তার মানে আপনাদের আমরা দায়িত্ব নিয়ে পৌঁছে দিবো লোকালয়ে। যদি কেউ মনে করেন এখান থেকেই আলাদা হবেন, হতে পারেন। তবে অস্ত্র-গুলি রেখে যেতে হবে। এবার আপনাদের মতামত জানান। কে কে সারেন্ডার করবেন? মাস্টার বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ, সোহাগ আকন, সোলাইমান, সুমন, সুলতান কাকা, ফজলু শেখ আর হারুন। এই সাতজন ছাড়া বাঁকী সবাই আত্মসমর্পণ করবেন না বলে জানান। সাথে সাথে সোলাইমান এগিয়ে যায়। বললাম, অস্ত্রগুলোর মালিক কি আপনারা? বললো, না। বললাম, তাহলে যার যার হাতের অস্ত্র ও গুলিগুলো সোলাইমানের কাছে জমা দিয়ে দেন।
মুহুর্তের মধ্যে অন্য কিছু ঘটতে পারতো। তবে সার আগেই সোলাইমান তার কাজ সেরে ফেললো। পাশ থেকে হারুন আর ফজলু শেখ দ্রুত অন্যদের হাত থেকে অস্ত্রগুলো নিয়ে নেয়। সবকিছু এতো হঠাৎ ঘটে গেলো যে ওই দস্যুরা রীতিমতো বোকা বনে গেলো। কেউ কেউ আতঙ্কিত হলো। শাহীন নামের একজন এসে কান্না জড়ানো গলায় বলছিলো, ভাই আমার একটা মেয়ে আছে, আমাকে ধরায়ে দিয়েন না! অন্যদের কোমড়ে রাখা গুলির ব্যাগগুলো নিয়ে রাখা হলো। শাহীন বললো, সেও সারেন্ডার করবে। বললাম, বিষয়টা পরে দেখবো। তোমরা সবাই মিলে মিশে থাকো। সারেন্ডার করলে করবে, না করলেও তোমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের শরীরে একটি আঁচড়ও পড়বে না।
তার মানে মাত্র সাতজন দস্যু শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করবে? আবারও মাথা নষ্ট আমার। কিছুতেই সবকিছু গোছাতে পারছি না। একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ সামনে এসে পড়ছে। একা মানুষ এতো কিছু সামাল দেই কী করে? কিন্তু কিছু করারও নাই। আমাকেই শেষ পর্যন্ত সামাল দিতে হবে। সাতজন যদি সারেন্ডার করে তাতেই চলবে।
দস্যুনেতাদের বললাম, সাতজন বাদ দিয়ে বাঁকী ১৫টি বন্দুক একসাথে করেন। ছড়ানো ছিটানো অস্ত্রগুলো এক করে ফরেস্ট অফিসের বারান্দায় আনা হলো। গুলি আনলোড করছো সোলাই? … না! তাহলে নিজেদের গুলিতে নিজেরা মরবে? মজার ছলে দ্রুত কাজগুলো করিয়ে নিলাম।
গত পনেরো মিনিট আমার ভিতরে ঝড় বয়ে গেছে। শিড়দাঁড়া বেয়ে ঘাম বেয়ে পড়া কাকে বলে, বুঝলাম। ওদিকে আকাশে মেঘ জমেছে। জৈষ্ঠ মাসের আকাশ এমনই। কখন কী হয় বুঝা যায় না!