রূপান্তরের গল্প ৭৭ | Rupantorer Golpo 77

অস্ত্রের প্যাকেট নিয়ে হাজির দস্যুনেতা | রূপান্তরের গল্প ৭৭

অস্ত্রের প্যাকেট নিয়ে হাজির দস্যুনেতা | রূপান্তরের গল্প ৭৭ | Rupantorer Golpo 77 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৭৭ : বেলমারীর দোয়া’র উত্তরে চাইলেবগী। পশ্চিমে শিবসা নদী। দক্ষিণে নিশানখালী। পূর্ব দিকে পাশাখালী। বেলমারীর দোয়া হয়ে এই অঞ্চলে বনদস্যুদের অবাধ চলাফেরা ছিলো সারা বছর। বিশেষ করে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দস্যুদলটি নিয়ন্ত্রণ করতো মধ্য সুন্দরবনের এ অঞ্চল। মরা গোন-এ বিশ্রাম নেয়ার জায়গা হিসাবে তাদের সবচেয়ে সুবিধার জায়গা ছিলো দুটি ফরেস্ট অফিস। পশুর পাড়ে পাশাখালী আর শিবসা পাড়ের আদাচাই ফরেস্ট অফিস। এই দুই অফিসের মাঝের জায়গাটি ছিলো জেলেদের জন্য সবচেয়ে বিপদের জায়গা। ভুলেও কোনো সাধারণ জেলে এর ভিতরে আসতো না।

বেলমারীর দোয়া এই অঞ্চলের মাঝখানে অবস্থিত। দোয়া অর্থ হলো কয়েকটি খালের মোহনা বা মিলনস্থল। এখান থেকে চারপাশের সব জায়াগায় যাওয়া যায়। মাস্টার বাহিনীর আরেকটি অস্ত্রের প্যাকেট এই দোয়ার নিচে পুঁতে রাখা। সেখানে নিশানা দেয়া একটি কেওড়া গাছ ছিলো। কিন্তু সেটা ভেঙ্গে গেছে। সুলতান কাকা জানতো সেই নিশানার কথা। কিন্তু পুরো পাড় ধরে ভেঙ্গে গেছে। পানিও অনেক।

অস্ত্রটি সুলতান কাকার হাতে দিয়ে মাস্টার নেমে পড়লো। খালের নিচে ডুব দিয়ে শুরু হলো খোঁজাখুঁজি। পানিতে ডুবে সেই কাজটি করা অসম্ভব মনে হতে পারে। কিন্তু মাস্টারের কাছে জঙ্গলে অসম্ভব বলে কিছু নাই। সুন্দরবনে দস্যুদের মধ্যে যখন যুদ্ধ হতো, তখন মাস্টার পানিতো ডুব দিয়ে অ্যাম্বুশ করতো। পানিতে ডুবে-ভেসে বন্দুক নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলায় ওস্তাদ ছিলো সে। পাশাখালীতে বসে দস্যু সোহাগ বলছিলো যে ওই অস্ত্রের প্যাকেট খুঁজে বের করা সম্ভব না। কিন্তু মাস্টারের ওপর ভরসা ছিলো।

ওদিকে আধা ঘন্টা ডুবোডুবি করে জায়গা মতো পৌঁছে গেছে মাস্টার। অবিশ্বাস্য ভাবে বের করে আনলো। চার ইঞ্চির একটা প্লাস্টিকের পাইপ। দুই পাশে পলিথিন আর টেপ দিয়ে বাঁধা। ভিতরে কয়েকটি বন্দুক রাখা।

পুকুর পাড়ে বসে গল্প করছি। পুকুর পাড়ে বসা দস্যুনেতা মাস্টারের স্ত্রী, আরেক দস্যু সোহাগ আকনের স্ত্রী। ততোক্ষণে ট্রলার থেকে নিরস্ত্র দস্যুরা এসে বসেছে সেখানে। পরিবেশ হাল্কা হচ্ছে। ততোক্ষণে যারা সারেন্ডার করবে না তারা কিছুটা আশ্বস্ত। বিপদে ফেলবো না সেটা বুঝে গেছে। কিন্তু তাদের প্রতি আস্থা ছিলো না। নিরস্ত্র হলেও একটা অঘটন ঘটাতে সময় লাগে না ওই পরিবেশে।

ভয়াবহ দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে গল্প করছিলাম। কারণ দুই দিকে দুই দল গেছে লুকিয়ে রাখা অস্ত্র আনতে। ফিরে আসা না পর্যন্ত সেই দুশ্চিন্তা কাটবে না। কতো বিপদ হতে পারে ভাবতে ভাবতে জঙ্গলের ভিতর থেকে মাস্টারের কথা শুনতে পেলাম। হাতে অস্ত্রের প্যাকেট নিয়ে হাজির হলো তারা। দস্যুনেতা মাস্টার এসে গেছে!

দুপুর গড়িয়ে গেছে। চাপিয়ে রাখা অস্তুগুলো এভাবেই জমা দিবেন? সুলতান কাকা বললো, মেশিনগুলো সব খোলা। জোড়া লাগায়ে না দিলে কেমন লাগে! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্রগুলো জমা দিবে কাল। পরিস্কার করে না দিলে দেখতে কেমন লাগবে না? বলেই সুলতান কাকা নেমে পড়লো কাজে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top