আবার টেনশন! সামনে স্পিডবোটসহ কেবিন ক্রুজার | রূপান্তরের গল্প ৮০ | Rupantorer Golpo 80 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim
রূপান্তরের গল্প ৮০ : চার ঘন্টার মধ্যে ফিরবে তারা। সেই চিন্তা নিয়েই অপেক্ষায় ছিলাম। উৎকণ্ঠা ছিলো আরও বেশি। কারণ নিশানখালীর ওদিকটা কোনো ভাবেই নিরাপদ না। সশস্ত্র দস্যু একজনই আছে নৌকায়। সেই ফজলু শেখ বন্দুকযুদ্ধে খুব সুবিধার না। দুশ্চিন্তা তাই আরও বেশি ছিলো। পাঁচ ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। আসে না ফজলু শেখ আর ইয়ামীন আলীর নৌকা।
দস্যুনেতাকে বললাম কী করা যায়? কোনো ভাবে খবর নেয়ার সুযোগ আছে? বললো, কোন খালে যেয়ে খুঁজবো? অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নাই। অসহায় অপেক্ষা! মনটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছি। চা খাচ্ছি একের পর এক। এসময় খালের ভিতর থেকে আওয়াজ এলো। বেশ দূর থেকে আসা সেই আওয়াজ আমার কানে আসেনি। অথচ তারা ঠিকই বুঝে গেছে যে নৌকা আসছে মাস্টার বললো, ওই যে চলে আসছে ওরা! পাঁচ মিনিটের মধ্যে নৌকা ভিড়লো ঘাটে।
দুটি নিল রঙ এর প্যাকেট নিয়ে ফিরেছেন ইয়ামীন আলী। লোহা লক্কড়ে ঠাসা, বেশ ওজন। নৌকা থেকে নামিয়ে প্যাকটগুলো কাঁধে করে বয়ে আনলো দু’জন জেলে। রাখা হলো ফরেস্ট ক্যাম্প এর পুকুর পাড়ে, সুলতান কাকার পাশে।
একা একা কাজ করছেন কাকা। অস্ত্রের যন্ত্রাংশগুলো পরিস্কার করা সহজ না। মবিল বা লুব্রিকেন্ট মাখানো অস্ত্রের অংশ, স্প্রিংগুলো। ব্যারেল, বন্দুকের নল সবকিছু খোলা। প্রথমে মবিল মুছে পরিস্কার করা, তারপর যন্ত্রাংশগুলো সঠিক জায়গায় সংযোজন করতে করতে হয়রান সুলতান কাকা। বললাম অন্যরা হাত দিচ্ছে না কেন? দিচ্ছে না কারণ, কোন অস্ত্রের অংশশ কোনটি সেটি সুলতান কাকাই জানে। এমনিতেই কাজের শেষ নাই, তার ওপর নতুন দুটি অস্ত্র-গুলির প্যাকেট এসেছে।
কী আছে নতুন প্যাকেটে? একটিতে আরও কয়েটি অস্ত্র। অন্যটিতে গুলি। এবার নিজেও হাত লাগালাম। প্যাকেট খুলতেই বেরিয়ে আসলো বেশ কয়েকটি অস্ত্র। সোহাগ বললো, সবগুলোই চালু মেশিন ভাই। গুলিগুলোও নতুন কেনা। পাঁচশ’ গুলি আছে সেখানে। এমন একটি অবৈধ অস্ত্র-গুলির মজুত থাকলে সুন্দরবনে মাঝারি আকারের জলদস্যু বাহিনী গড়ে তোলা যায়।
সুন্দরবনের ডাকাতদের নিয়ে হাজারও কাহিনী ঘুরে বেড়ায় সুন্দরবনে। যখন যে বাহিনী আসে তারাই দল বড় করে, বন আর সাগরে দস্যুতার জাল বিস্তৃত করে। চাঁদার পরিমান বাড়ায়, সুন্দরবনে নিজেদের এলাকাও বাড়ায় অন্য দস্যুদলকে দমন করে, তাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে। আওতা বাড়ালে অস্ত্র বাড়ে, শক্তি বাড়ে। তখন চাঁদার পরিমানও বেড়ে যায়। কিন্তু মাস্টার বাহিনী আর শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেনি। কারণ তারা সারেন্ডার করবে।
পাশাখালী বন টহল ফাঁড়ীর পুকুর পারে তখন অস্ত্রের সমাবেশ ঘটেছে। বনদস্যু মাস্টার বাহিনীর সাঁজোয়া বহরের সবগুলো অস্ত্র সেখানে। লুকিয়ে রাখা অস্ত্র আর গুলি বের করা নিয়ে কী টেনশনটা গেছে তা বলার মতো না। এখন সেগুলো পরিস্কার করা হবে, জোড়া লাগানো হবে, সারেন্ডারের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
দস্যু দলের অস্ত্র-গুলি গোছগাছের কাজ দ্রুত সারতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। আর কোনো ঝুঁকি নিবো না। বলতে বলতে দৌড়ে আসলো হারুন। বড় নদীতে একটা ট্রলার আসছে। সারা রঙ এর কিছু একটা। আবার শুরু হলো দৌড়ঝাঁপ!
দৌড় দিলাম পশুর নদীর দিকে। দেখি ভদ্রা পার হয়ে আসছে সাদা রঙ এর একটা কেবিন ক্রুজার। পিছনে স্পিডবোট বাঁধা, সেটিও সাদা। বুকের ভিতরটা হুহু করে উঠলো। যে গতিতে আসছে সেটি তাতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট। স্পিডবোট চালিয়ে আসলেেসময় লাগবে বড়জোর ১৫ মিনিট!