রূপান্তরের গল্প ৮২ | Rupantorer Golpo 82

বন বিভাগের পুকুরের নিচে অস্ত্রের প্যাকেট! | রূপান্তরের গল্প ৮২

বন বিভাগের পুকুরের নিচে অস্ত্রের প্যাকেট! | রূপান্তরের গল্প ৮২ | Rupantorer Golpo 82 | দস্যুমুক্ত সুন্দরবন | সুন্দরবনের গল্প | Sundarbaner Goppo | Story of Sundarbans | মোহসীন উল হাকিম | Mohsin Ul Hakim


রূপান্তরের গল্প ৮২ : পলিন কোথায়? ক্যামেরা বের করেনি কেন এখনও? এদিকে অস্ত্রশস্ত্র আর গোলাবারুদ গোছগাছ চলছে। ভিডিও করতে হবে! একজনকে বললাম ওদের ডাকো। কাজ শুরু করতে হবে।

সুলতান কাকা তার কাজে মশগুল। সবগুলো প্যাকেট খোলা হয়েছে। অনেকগুলো অস্ত্রের যন্ত্রাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুকুর পাড়ের ঘাসের উপর। মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলছি আর গল্প করছি। এদিকে বিকাল গড়িয়ে যাচ্ছে। দুপুরের খাবার খাইনি। দস্যুদের বাবুর্চি ব্যস্ত রান্না নিয়ে। খাওয়ার আগে কিছু কাজ এগিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে আমার সংবাদ তৈরির কাজগুলো করে ফেলতে হবে। বড় বৃষ্টি আসবে আবার। তাই সবকিছু গুছিয়ে ফেলতে হবে তার আগেই।

পাশাখালী ফরেস্ট অফিসের পুকুরের পাশে বসা দস্যুনেতা মাস্টার। সোহাগ আকনও বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বসা স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে। হঠাৎ করে দুজন নেমে পড়লো পুকুরে। ভাবলাম গোসল করতে নেমেছে তারা। কিন্তু তাদের একের পর এক ডুব দেয়া দেখে মনে হলো কিছু একটা খোঁজাখুঁজি চলছে। সবকিছু রেখে এগিয়ে গেলাম। মাস্টারকে জিজ্ঞেস করলাম, কী করেন? কী খুঁজছেন আপনারা?

মিনিট দশ চললো ডুবোডুবি। মাস্টার এক হাতে তুলে আনলো একটি প্লাস্টিকের পাইপ। ওই একই ভাবে আটকানো দুই পাশ থেকে। মোটা পাইপ মানে ভিতরে আরও অস্ত্র আছে। জিজ্ঞেস করলাম, এটাই কি শেষ অস্ত্র? নাকি আরও কিছু লুকানো আছে? মাস্টার হেঁসে বললো, এটাই শেষ।

বন বিভাগের অফিসের সাথে লাগানো পুকুর। তার নিচেই অস্ত্র লুকিয়ে রাখা? সোহাগ বললো, আগের দিনে বন বিভাগের অফিসের ভিতরে এসব লুকিয়ে রাখতাম। বিশেষ করে বর্ষা কালে অস্ত্রগুলো সুরক্ষিত রাখতে অফিসের ভিতরে রাখতাম.. বলছিলো সোহাগ। বললাম, ভালো করে ভেবে দেখেন আর কোনো জায়গায় কিছু আছে কী না! আবারও বলছি, একটা গুলির খোসা জঙ্গলে রেখে সারেন্ডার হবে না। মাস্টার বললো- না ভাই, আর কিছু নাই।

পুকুর পাড়ে বসে পড়লাম এবার। অন্যদের সাথে নিজেও হাত লাগালাম। দ্রুত অস্ত্রগুলো পরিস্কার করতে হবে। ন্যকড়া হাতে একের পর এক অস্ত্রের অংশগুলো পরিস্কার করছিলাম সবাই মিলে। গুলিগুলো সব এক করতে বললাম। সাতজনের হাতে সাতটি অস্ত্র থাকবে। বাঁকী সব জড়ো করে আমার ট্রলারে তুলবেন।

ঘুম থেকে উঠে আমার সহকর্মী বায়েজীদ ইসলাম পলিন আসলো একটু পর। ভিডিও ক্যামেরা আর মনোপড এক হাতে। অন্য হাতে যমুনা টিভির মাইক্রোফোন। শর্টস পড়ে টেনশন বিহীন পলিন হাঁটছেন গড়ান বনের ভিতর দিয়ে।

শুরু হলো ভিডিও’র কাজ। আকাশের দিকে তাকায় একবার। আরেকবার ক্যামেরার লেন্স-এ। ময়েশ্চার পড়ে ঘোলা হয়ে যাচ্ছে বার বার। ব্যতিব্যস্ত পলিনকে মৃদু বকাঝকা করলাম। কেন আগে ক্যামেরাটা বের করে রাখেননি? পলিন বললো, আপনি বলেননি। মনে পড়লো, নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ক্যামেরা বের করতে নিষেধ করেছি তাকে।

দস্যু জগতে ক্যামেরা ছিলো বড় সমস্যার বিষয়। অবিশ্বাস আর সন্দেহে ভরা ওই জগতে ছবি তোলার কোনো কারবার ছিলো না। দস্যুদের তখনও স্মার্ট ফোন ব্যবহারের রীতি ছিলো না। কারও থাকলে সেটি বন্ধ করে জমা রাখা হতো। ওই জগতে ছবি তোলার বিষয়ে তারা আমাকে ভরসা করতো। মানতো যে আমি গোপনে ছবি তুলি না। কারও ছবি নিয়ে তার অপব্যবহার করি না, কাউকে বিপদে ফেলি না। তবুও সতর্ক থাকতাম।

ক্যামেরাটা কিছুক্ষণ রোদে রেখে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিলেন পলিন। ফটোগ্রাফাররা বিষয়টি বুঝবেন। পলিন একজন দক্ষ ভিডিওগ্রাফার। কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্যামেরা ঠিকঠাক করে নেমে পড়লেন কাজে।

শুরু হলো সুলতান কাকাকে দিয়ে। ক্যামেরায় খোলামেলা সাক্ষাতকার। কী ভাবে দস্যুতায় আসা, দলবদল নিয়ে অনেক কথা হলো। জানতে চাইলাম দুই যুগের দস্যুতায় কী পেলেন? বললেন, নামের সাথে ডাকাত শব্দটি জুড়ে গেছে, আর ৬/৭টি মামলা খাওয়া ছাড়া আর কিছু হয়নি। টাকা পয়সাগুলো কই গেলো তাহলে? বললেন, আপনার মতো ভদ্রলোকদের পকেটে চলে যায় দস্যুতার সব টাকা। বেশির ভাগ টাকা অস্ত্র-গুলি কিনতে খরচ হয়, বাজার খরচে চলে যায়। বাঁকী টাকা খরচ হয় বাজার-সদা কিনতে। সুলতান কাকা বললেন, চাঁদাবাজি করে অনেক টাকা রোজগার হয়। আবার আমাদেরও চাঁদা দিতে হয় জায়গায় জায়গায়। বললাম, ওই গরীব জেলেদের কাছে থেকে যে জুলুম করে টাকা নেন, খারাপ লাগে না?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top